বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের মেয়াদ আরো ৫ বছর বাড়াল ভারত

বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যে আরোপিত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়েছে ভারত। গত ৩০ ডিসেম্বর এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তির নতুন নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশের উৎপাদকদের পাটপণ্য রফতানিতে ভিন্ন ভিন্ন হারে শুল্ক প্রযোজ্য হবে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে (যদি না এ সময়ের আগে তা প্রত্যাহার, বাতিল বা সংশোধন করা হয়) কার্যকর হবে এ শুল্ক, যা ভারতীয় মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে পাঁচ বছর মেয়াদে প্রতি টনে ১৯ দশমিক ৩০ থেকে ৩৫১ দশমিক ৭২ ডলার পর্যন্ত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কারোপ করে ভারত। গত ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়।

ভারতের দিল্লিতে ২২-২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের সভা। সেখানে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেখানে অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটির মেয়াদ যেন না বাড়ে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমাধান না হলে ডব্লিউটিও বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দ্বারস্থ হওয়ার সতর্কবার্তাও দিয়েছিলেন।

ভারত সফর শেষে গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের সভায় অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘আলোচনায় একটা বড় বিষয় ছিল জুট গুডসের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং। সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অ্যান্টি-ডাম্পিং একটা টেকনিক্যাল বিষয়। এতে ওদের স্বার্থ জড়িত আছে। আমরা যেটা স্ট্যান্ড নিয়েছিলাম সেটা হলো ডব্লিউটিওর নিয়ম অনুসরণের। পাঁচ বছর মেয়াদ ডিসেম্বরেই শেষ হবে। চেষ্টা করেছিলাম যেন বাড়ানো না হয়। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠায় ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অনুমোদন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। দুই জায়গাতেই আমরা অনুরোধ করেছি। তারা বলেছে, পুরো ব্যাপারটা দেখবে। তাদের দেশের ব্যবসায়ীদের কিছু সমস্যার কথা বলেছেন তারা। সেসব কনসিডারেশনে নেবেন। আমরা বলেছি ডব্লিউটিওর রুলস অনুযায়ী অ্যান্টি-ডাম্পিং তোমরা করতে পারো না। আমরা এটাও বলেছি, আমাদের ২৫ হাজারের মতো শ্রমিক কর্মহীন হয়ে যাচ্ছেন।’

টিপু মুনশি আরো বলেন, ‘পশ্চিম বাংলার ব্যবসায়ীদের কিছু পর্যবেক্ষণ আছে অ্যান্টি-ডাম্পিং বিষয়ে। তার পরও তারা ইতিবাচকভাবে চিন্তা করবে। অ্যান্টি-ডাম্পিং নিয়ে তারা বলেছে, এটা তাদের জুট মিল মালিকদের কিছু সমস্যা। আমরা অনুরোধ করে বলেছি, ডব্লিউটিওর রুলস অনুযায়ী তোমরা এটা আটকাতে পারো না। আমরা চেয়েছি যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান হোক। সে অবস্থায় ছেড়ে দিয়ে এসেছি। আমরা এ কথাও বলেছি, যদি আপনারা এ রকম করে আটকে দেন, তাহলে আমরা হয়তো বাধ্য হব ডব্লিউটিওতে যেতে। তবে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী খুব ইতিবাচক। তিনি আমাকে অনুরোধ করেছিলেন বিষয়টি নিয়ে তাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথা বলতে। আমরা সেখানেও অনুরোধ জানিয়েছি।’

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যাওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ নিয়েছে কিনা সংবাদ সম্মেলনে বণিক বার্তার পক্ষ থেকে এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে কেবল এ কথাই শেষ কথা নয়। যাওয়ার জন্য ডব্লিউটিও শেষ কর্তৃপক্ষ, যেখানে যাওয়া যেতে পারে। ১০০ ভাগ নিশ্চিত নয় যে আমরা পারব, কিন্তু আমরা মনে করি ঠিক আছে। তার আগে আমরা চাই যে আমরা দুই পক্ষ অন্যান্য বিষয় যেভাবে বিবেচনায় নিই, এ বিষয়ও নেব। আমরা ডব্লিউটিওতে যেতে পারি, কিন্তু আমরা যেতে চাই না। আমরা চাই কথা বলে বিষয়টি শেষ করতে।’

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দ্বারস্থ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন বাংলাদেশের পাটপণ্য-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও। তারা জানিয়েছেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর সফরে বিষয়টির সুরাহা হওয়ার বিষয়ে তারা আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু মেয়াদ বাড়ানোয় এখন বিকল্প ভাবতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এটাও বলছেন, শুল্কারোপের মেয়াদ বৃদ্ধিতে দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

জনতা জুট মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পাটজাত পণ্যের বড় গ্রাহক দেশ ভারত। আরোপিত শুল্কে ভারতের গ্রাহকরা ন্যায্যমূল্যের পণ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দুই দেশেরই স্বার্থ পরিপন্থী বলেও আমি মনে করি।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) ভাইস চেয়ারম্যান মৃধা মনিরুজ্জামান মনির বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সম্ভবত বিষয়টি সমাধান হবে। আমরা আশাবাদী ছিলাম, শুল্ক প্রত্যাহার হবে। ভারতীয় কাউন্টার পার্টে যারা আমদানিকারক তারাও মনে করেছিল প্রত্যাহার হবে। কিন্তু যা ছিল তাই। কাউন্টার পার্টে দুটি পক্ষ আছে। যারা আমদানি করে, তারা চাচ্ছে শুল্ক প্রত্যাহার হোক। কিন্তু মিল মালিকরা চাচ্ছে শুল্ক আরোপিত থাকুক। আমরা খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করছি। দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান না হলে ডব্লিউটিওর কাছে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তা করছি।’

জানা গেছে, ভারতে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পাটপণ্য রফতানি করে আসছিলেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেন দেশটির পাটপণ্য উৎপাদনকারীরা। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের পর এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব অ্যান্টি-ডাম্পিং অ্যান্ড অ্যালাইড ডিউটিজ (ডিজিএডি)। প্রায় এক বছর তদন্তের পর ২০১৫ সালের অক্টোবরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করে সংস্থাটি। এতে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের সুপারিশ করা হয়। এ সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজস্ব বিভাগ শুল্কারোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ডিজিএডির সুপারিশের আলোকে বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে রফতানি হওয়া জুট ইয়ার্ন/টোয়াইন, হেসিয়ান ফ্যাব্রিক ও জুট স্যাকস—ডাম্পিং হচ্ছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ শিল্পের চেয়ে কম দামে এসব পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। এতে অভ্যন্তরীণ শিল্পের মুনাফা ও বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এজন্য এসব দেশ থেকে পাটপণ্য রফতানিতে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের সুপারিশ করছে রাজস্ব বিভাগ। গেজেট প্রকাশের দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর এটি কার্যকর থাকবে। এ শুল্ক দিতে হবে ভারতীয় মুদ্রায়।

গত ৩০ ডিসেম্বরের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রতি টন পাটপণ্যে সর্বনিম্ন ১৯ দশমিক ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫১ দশমিক ৭২ ডলার অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে হাসান আলী জুট মিলস লিমিটেড, আলীজান জুট মিলস, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ, সিডল টেক্সটাইলস, সাগর জুট স্পিনিং মিলস, জনতা জুট মিলস, আশা জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রাইড জুট মিলস, বগুড়া জুট মিলস, এএম জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, হাসান জুট অ্যান্ড স্পিনিং, রানু অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, নওহাটা জুট মিলস, মাওনা জুট মিলস, রাবেয়া জুট মিল, ওরিয়েন্টাল জুট মিলস, নওয়াব আব্দুল মালেক জুট মিলস, রহমান জুট মিলস, রাজবাড়ী জুট মিলস, ঊষা জুট স্পিনার্স, মদীনা জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, মির্জা জুট মিলস, জেম জুট, আফজাল ফাইবার প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ, আনাম জুট প্রডাক্টস, বোনানজা জুট কম্পোজিট অ্যান্ড ডাইভার্স ফ্যাক্টরি, যমুনা জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, জয় জুট মিলস, জুট টেক্সটাইল মিলস, গোল্ডেন জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, হাসেন জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, মাজেদা জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, রিলায়েন্স জুট মিলস, সেলিম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, শমসের জুট মিলস, ওয়াহাব জুট মিলস, আকিজ জুট মিলস, লাভলি জুট মিলস ও গ্লোরি জুট।

জানা গেছে, পাটপণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের শীর্ষ গন্তব্য ছিল ভারত। দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে পাট রফতানি করে আসছিলেন এখানকার রফতানিকারকরা। আর ভোক্তা চাহিদা থাকায় দেশটিও বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে পাট আমদানি করত। তবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার দোহাই দিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে পাটপণ্যে এ ধরনের কোনো আইনি পদক্ষেপের ঘোষণা ২০১৭ সালেই প্রথম।
এই বিভাগের আরও খবর
রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

যুগান্তর
এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

প্রথমআলো
ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

কালের কণ্ঠ
বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

নয়া দিগন্ত
প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

বাংলা ট্রিবিউন
ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

বাংলা ট্রিবিউন
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া