বেশকিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মামুন-উর-রশিদকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে এক্সচেঞ্জটির পর্ষদ। একই সঙ্গে তাকে এক্সচেঞ্জটির এমডি পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য অনুমোদন নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে চিঠি পাঠিয়েছে সিএসইর পর্ষদ। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক পর্ষদ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সিএসই সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় এক্সচেঞ্জটির বর্তমান এমডি মামুন-উর-রশিদকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকেই তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তার পরিবর্তে এক্সচেঞ্জটির মহাব্যবস্থাপক মো. গোলাম ফারুককে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এমডি হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার, সিআইবি ক্লিয়ারেন্স নিয়ে সমস্যা এবং সর্বশেষ এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় তার আসামি হওয়ার মতো বিষয়গুলোর পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এমডি পদের প্রভাব খাটিয়ে মামুন-উর-রশিদ এক্সচেঞ্জের তিনটি গাড়ি ব্যবহার করতেন। এর মধ্যে তার ছেলে এক্সচেঞ্জের গাড়ি ব্যবহার করতে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বণিক বার্তাকে বলেন, এমডিকে এক মাসের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এর বেশিকিছু তিনি বলতে রাজি হননি। অন্যদিকে এ বিষয়ে জানতে মামুন-উর-রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সিএসইর এমডির বিষয়ে এক্সচেঞ্জটির পর্ষদের কাছ থেকে বেশকিছু অভিযোগসংবলিত একটি চিঠি এসেছে। তবে গত সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হওয়া রোড শোতে অংশগ্রহণের কারণে কমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ব্যস্ত ছিলেন। তাই এ বিষয়ে সে সময় সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে রোড শোর ব্যস্ততা শেষ হয়েছে এবং কমিশনের কর্মকর্তারাও দেশে ফিরেছেন। এ বিষয়ে এখন কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, সিএসইর কাছ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি কমিশনের কাছে এসেছে। এক্সচেঞ্জটির বোর্ড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেগুলেশনস অনুসারে এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
মামুন-উর-রশিদ সিএসইর এমডি পদে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন। এক্সচেঞ্জটির সাবেক এমডি এম সাইফুর রহমান মজুমদারের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। ব্যাংক খাতে দীর্ঘ ৩৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মামুন-উর-রশিদ সবশেষ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে তার ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু। এরপর বিভিন্ন সময়ে তিনি এনসিসি ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ও প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডে কাজ করেন। তিনি ২০১৩ সালে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) হিসেবে পদোন্নতি পান। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে যোগ দেয়ার আগে তিনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকে ডিএমডির দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৯ সালের ৩১ মে সিএসইর এমডি হিসেবে এম সাইফুর রহমান মজুমদারের মেয়াদ শেষে তাকে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য সুপারিশ করেনি সিএসইর পর্ষদ। সে সময় এমডি নিয়োগের জন্য দুই দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও কোনো যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে এক্সচেঞ্জটির এমডি নিয়োগের দায়িত্ব কমিশন নিজের কাছে নেয়। কিন্তু তাতেও একজন যোগ্য এমডি নিয়োগ করা সম্ভব হয়নি। ফলে আবারো এমডি নিয়োগের দায়িত্ব সিএসইর কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর তৃতীয় দফায় এমডি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সিএসই। এ দফায় মামুন-উর-রশিদকে এমডি হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করে অনুমোদনের জন্য কমিশনের কাছে পাঠায় সিএসইর পর্ষদ। গত বছরের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ৭১৫তম কমিশন সভায় সিএসইর এমডি হিসেবে মামুন-উর-রশিদের নিয়োগ প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় বিএসইসি।
এমডি পদে যোগ দেয়ার ঠিক এক বছরের মাথায় দুদকের মামলায় আসামি হয়ে বিতর্কিত হয়ে পড়েন মামুন-উর-রশিদ। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন এ বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি সিএসইর এমডিসহ আটজনের বিরুদ্ধে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১-এ মামলাটি দায়ের করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এ মামলা করা হয়। মামলায় স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডি মো. তারিকুল আজম, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড হেড অব এআরসিডি মো. আমিনুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার শেখ মোহাম্মদ মুনসুরুল করিম এবং ব্যাংকটির প্রগতি সরণি শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক শোয়াইব মাহমুদ তুহিনকে আসামি করা হয়। এছাড়া ‘সচেতন সাহায্য সংস্থা’ নামে ঋণ গ্রহণকারী সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জেসমিন রশিদ, সভাপতি হাসনা হেনা এবং সাধারণ সম্পাদক নাছরিন আক্তারকেও এ মামলায় আসামি করা হয়।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়