দেশীয় গ্যাস সংকটে বিশ্ববাজার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এলএনজি আমদানি বাড়াতে এরই মধ্যে রফতানিকারক দেশের সঙ্গে দেনদরবার শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ। বর্তমানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কাতারে অবস্থান করছে। দেশটির সঙ্গে বিদ্যমান দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি সরবরাহে যে চুক্তি রয়েছে, তার আওতায় অতিরিক্ত আরো ১০ লাখ টন আমদানি করতে চায় জ্বালানি বিভাগ।
কাতারের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ১ ফেব্রুয়ারি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এলএনজি সরবরাহ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। যদিও এ প্রস্তাবের এখনো ইতিবাচক কোনো সাড়া মেলেনি। জ্বালানি বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কাতার সরকারের কাছে এলএনজি চাহিদার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়েছে। কাতারের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ও বাংলাদেশের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে তারা এলএনজি সরবরাহ বাড়াবে কিনা সে বিষয়ে কিছু জানায়নি।
বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানির চুক্তি রয়েছে। এ চুক্তির আওতায় সাইড লেটার চুক্তির মাধ্যমে দেশটি থেকে অতিরিক্ত ১০ লাখ টন এলএনজি সংগ্রহের চেষ্টা করছে জ্বালানি বিভাগ। তবে এ বিষয়ে দ্রুতই কোনো সিদ্ধান্ত মিলবে না বলে বেশ কয়েকটি সূত্র ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর পূর্বাভাস বলছে।
বৈশ্বিক জ্বালানি বিশ্লেষণকারী সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে জ্বালানির বাজার এখন উত্তপ্ত। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলো তেল-গ্যাসকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। ফলে বৈশ্বিক রাজনীতিতে প্রভাবকের ভূমিকায় থাকবে শীর্ষ তেল-গ্যাস রফতানিকারক দেশগুলো।
বিশ্বে গ্যাস রফতানিতে শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় কাতারের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রতি বছর দেশটি ৭৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন গ্যাস রফতানি করে। কভিড মহামারী উত্তরণে ইউক্রেন নিয়ে ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার বৈরিতা বাড়তে থাকলে জ্বালানির বাজারও চড়া হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় রাশিয়াকে দমাতে ইউরোপে গ্যাস রফতানি জোরদার করার জন্য কাতারের প্রতি আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে কাতার চলতি বছরে চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোর সঙ্গে গ্যাস রফতানি বাড়াবে কিনা সেটি এখনো নিশ্চিত না।
২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারি কাতারের জ্বালানি ও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সমঝোতা স্মারকের আলোকে পরবর্তী সময়ে বছরে ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন এলএনজি সরবরাহের জন্য ১৫ বছর মেয়াদি এলএনজি সেলস অ্যান্ড পারচেজ এগ্রিমেন্ট (এসপিএ) সই হয়। ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর হওয়া ওই চুক্তির আওতায় দেশটি থেকে দেড় মিলিয়ন টন এলএনজি আমদানি করছে বাংলাদেশ। অতিরিক্ত এলএনজি আমদানির সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশ এতদিন সেটি নিয়ে কোনো তত্পরতা চালায়নি। মূলত স্পট মার্কেট থেকে কম মূল্যে জ্বালানিটি আমদানি করার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু এখন বাজার চড়া থাকায় স্পট মার্কেট থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে এখন কাতারের সঙ্গে চুক্তির আওতায় অতিরিক্ত ১০ লাখ টন এলএনজি আমদানি করতে চায় বাংলাদেশ। তবে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশটি থেকে চুক্তির অতিরিক্ত এলএনজি এখন আর পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এলএনজি সরবরাহ বাড়াতে গত বছর কাতার ও ওমানকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিল পেট্রোবাংলা। কিন্তু তাতে ইতিবাচক কোনো ফল হয়নি। বরং সরবরাহ কমানোর কথা জানিয়ে সংস্থাটিকে চিঠি দেয় দেশ দুটি।
নতুন বছরের সরবরাহ চুক্তি অনুযায়ী, ওমান থেকে ১৬টি ও কাতার থেকে সর্বোচ্চ ৪০টি কার্গো আসবে দেশে। বাকি কার্গো স্পট মার্কেট থেকে উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হবে জ্বালানি বিভাগকে। তবে ইউক্রেন পরিস্থিতি জটিল হলে এ দুই দেশ থেকে সরবরাহ আরো কমার শঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে কাতার ও ওমান থেকে গ্যাস আমদানির জন্য যোগাযোগ শুরু করেছে। ইউরোপের ৫০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া। এ সরবরাহ কমে গেলে ইউরোপের গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাবে। এতে ওই অঞ্চলে বাড়তি দামে গ্যাস সরবরাহের সুযোগ তৈরি হবে দেশ দুটির। ফলে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি কমিয়ে ইউরোপমুখী হতে পারে তারা।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়