বাড়ল ঋণের সুদহার লাগাম পড়ল বেসরকারি ঋণে

দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশের বেশি বেসরকারি খাতনির্ভর। আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ দ্রুত বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ২০২৫ সালের মধ্যেই ৩০ লাখ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির স্বপ্নও দেখিয়েছেন তিনি। যদিও এক্ষেত্রে বিপরীত অবস্থানের জানান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধির পরিবর্তে সেটির লাগামই টেনে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ঘোষণা দেয়া হয়েছে ঋণের সুদহার বাড়ানোর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমিয়ে সুদহার বাড়লে মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন থামানো সম্ভব হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে এমন মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গতকাল চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। যদিও ঘোষিত মুদ্রানীতিতে আগামী অর্থবছরের পুরো সময়ের জন্যই বিভিন্ন লক্ষ্যের প্রাক্কলন করা হয়। নতুন মুদ্রানীতিতে ১ জুলাই থেকেই দেশের ব্যাংকঋণের ৯ শতাংশের সর্বোচ্চ সুদসীমা উঠিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ঋণের সুদহারকে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজারভিত্তিক করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদহার দাঁড়ায় ১০ দশমিক ১ শতাংশ। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) ঋণের সুদহার ১২ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে অর্থ ধার নিতে পারবে ব্যাংক। এজন্য রেপো ও রিভার্স রেপোর সুদহারও বাড়ানো হয়েছে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলারের একক বিনিময় হার নির্ধারণের ঘোষণাও এসেছে। রিজার্ভের হিসাবায়নে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশ আমলে নেয়ার কথাও জানানো হয়েছে।

মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এর আগে ঋণপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নিত। এবার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে সুদহার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এজন্য ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশের সীমা আর থাকছে না। ঋণের সুদহারকে বাজারভিত্তিক করার অংশ হিসেবে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহারের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। আগামী ১ জুলাই থেকে রিজার্ভের হিসাবায়নে আইএমএফের ম্যানুয়াল অনুসরণ করা হবে। পাশাপাশি রিজার্ভ হিসাবায়নে আমাদের নিজস্ব পদ্ধতিও থাকবে। ব্যাংকঋণের সুদ ব্যয়বহুল করে তোলার জন্য নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে।’

গভর্নর বলেন, ‘আমরা চাই ঋণের সুদ বাড়ুক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ধার নেয়ার প্রবণতা কমে আসুক। সরকারের ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়াও ব্যয়বহুল হোক। বাজারে টাকা কম যাবে। চাহিদা কমে আসবে। মুদ্রানীতিতে এটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আবার সরবরাহ যাতে ঠিক থাকে সেটির ব্যাপারেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপগুলো চলমান থাকবে।’ 

গত জানুয়ারিতে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু বিনিয়োগ খরায় সে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এজন্য গতকাল সে লক্ষ্যমাত্রা পরিবর্তন করে ১১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ঋণে লাগাম পরালেও সরকারের জন্য পর্যাপ্ত ঋণের জোগান নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য আরো বাড়ানো হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৩ শতাংশ।

দেশের ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট চলছে। এ কারণে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণের জোগান দিয়েছে। আগামী অর্থবছরেও একইভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেবে কিনা—এ প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘টাকা ছাপানো একটি চলমান প্রক্রিয়া। পৃথিবীর উন্নত অর্থনীতির প্রতিটি দেশই টাকা ছাপায়। এটি খারাপ কিছু নয়। তবে দেখতে হবে ছাপানো টাকা কোথায় যাচ্ছে। টাকা ছাপানো মানে হলো সরকারের বিল-বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনে নেয়া। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই বিল-বন্ড কিনে নেয়ার মাধ্যমে সরকারকে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা জোগান দিয়েছে। বাজারে তারল্য সংকট বেশি হওয়ার কারণেই এটি করতে হয়েছে। প্রয়োজন হলে আগামী অর্থবছরেও একইভাবে সরকারকে ঋণের জোগান দেয়া হবে।’ 

আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরে বাজারে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এ কারণে বাজার থেকে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে বাজারে তারল্য সংকট ‍সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যদি ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বিল-বন্ডের মাধ্যমে টাকা নিত, তাহলে তারল্য সংকট আরো বাড়ত। এতে বেসরকারি খাত ঋণবঞ্চিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারত।’

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থনীতিতে অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করতে মুদ্রানীতির ঘোষণা দেয়া হয়। যদিও চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। সর্বশেষ মে মাসেও দেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি ফেল করেছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘মুদ্রানীতি ফেল বা পাসের বিষয় না। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা একটি নীতি প্রণয়ন করে দেখি সেটি কাজ করছে কিনা। বিশ্বের সব দেশই একই ধরনের মুদ্রানীতি নিচ্ছে। সবাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখছি, ইউরোপের অনেক দেশের মূল্যস্ফীতি আমাদের চেয়ে বেশি। আমরা বলতে পারি, মুদ্রানীতির কার্যকারিতায় হয়তো কিছুটা সমস্যা আছে। এ কারণে আমরা এবারের মুদ্রানীতিতে অনেক বেশি পরিবর্তন এনেছি।’

নতুন মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেপো বা নীতি সুদহার ৬ থেকে বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আর রিভার্স রেপোর সুদ ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়, ব্যাংকগুলো চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তারল্য ধার করতে পারবে। এজন্য সর্বোচ্চ সুদহার গুনতে হবে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর ফলে দেশের কলমানি বাজারের সুদহার নিয়ন্ত্রিত থাকবে। মুদ্রানীতিতে ব্যাপক মুদ্রা বা ব্রড মানির প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে মাইনাস ২০ দশমিক ৩ শতাংশ।
এই বিভাগের আরও খবর
এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

প্রথমআলো
ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

কালের কণ্ঠ
বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

নয়া দিগন্ত
প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

বাংলা ট্রিবিউন
ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

বাংলা ট্রিবিউন
ভারতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম, কেজি উঠেছে ৭০–৮০ রুপিতে

ভারতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম, কেজি উঠেছে ৭০–৮০ রুপিতে

প্রথমআলো
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া