প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিন দফা আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভের ফলে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দক্ষ-পরিশ্রমী জনসম্পদ সৃষ্টি, আকর্ষণীয় প্রণোদনার মাধ্যমে উদার বিনিয়োগ নীতি এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশাল বাজারের মধ্যবর্তী ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের প্রতি আস্থার কারণে ৬০ শতাংশের বেশি প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ আসছে পুনর্বিনিয়োগের মাধ্যমে।
গতকাল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২১’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, বিনিয়োগের জন্য আমরা সম্ভাবনাময় ১১টি খাত চিহ্নিত করেছি। এসব খাত হচ্ছে অবকাঠামো, পুঁজিবাজার ও ফাইন্যান্সিয়াল সেবা, তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রনিকস উৎপাদন, চামড়া, স্বয়ংক্রিয় ও হালকা প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ, পাট-বস্ত্র ও ব্লু ইকোনমি। আমি বিশ্বাস করি এ সম্মেলনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে এসব খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। বিশ্বে বাংলাদেশী পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি হবে এবং বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হবে।
সরকার অর্থনৈতিক কূটনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অর্থনৈতিক কূটনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে কাজ করছি। ভুটানের সঙ্গে পিটিএ স্বাক্ষর করেছি। বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৮টি দেশে একতরফা শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পাচ্ছে। ৩৬টি দেশের সঙ্গে দ্বৈত করারোপণ পরিহার চুক্তি বলবৎ আছে।
বিভিন্ন বাণিজ্য জোটের সঙ্গে বর্তমান সরকার নিবিড়ভাবে কাজ করছে এবং দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে অবকাঠামোসহ সব নীতিগত সহায়তা প্রদানে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।
বাংলাদেশ বিশ্বে এখন উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এসডিজি প্রগ্রেস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। দেশে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। আমাদের ১২ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা আহরণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের আইটি পণ্য রফতানির লক্ষ্য নিয়েছি।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাণিজ্য নীতির ওপর আলোকপাত করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতা শূন্য হাতেই সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেমেছিলেন। তিনি সব কলকারখানা জাতীয়করণ করে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করে বিনিয়োগ-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণ করে সার কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল কৃষক অল্প দামে সার পাবেন, বেশি ফসল উৎপাদন করবেন, খাদ্যনিরাপত্তা অর্জিত হবে, উদ্বৃত্ত খাদ্য ও সার বিদেশেও রফতানি করা যাবে। তার উন্নয়ন দর্শনের মূলেই ছিল দেশীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও মানবসম্পদের উন্নয়ন।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের আগের দেয়া ২১ দফা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের সরকারের ২০০০-২০০১ অর্থবছরে বর্ধিত বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮১৬ মিলিয়ন ডলার। যেখানে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে ছিল মাত্র ২৮৬ মিলিয়ন ডলার। আমরা ২০০০-২০০১ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করি, যেখানে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে ছিল মাত্র ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করি। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ ও রফতানি উন্নয়নের লক্ষ্যে আইটি ভিলেজ ও হাইটেক পার্ক গড়ার উদ্যোগ নিই। অথচ বিএনপি বিনামূল্যে ফাইবার অপটিক কেবলে সংযুক্ত হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
এ সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন চিত্রের বিবরণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা জাতীয় শিল্পনীতিসহ খাতওয়ারি শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। ‘শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। প্রতিটি প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। রফতানিমুখী শিল্পের প্রবৃদ্ধির জন্য বন্ড ব্যবস্থাপনাকে অটোমেশন করছি। আমরা ৩৯টি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করেছি। পর্যায়ক্রমে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় ২৭ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছি। মিরসরাই, সোনাগাজী ও সীতাকুণ্ড উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর গড়ে তুলছি। আড়াইহাজারে জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অমরা ‘বাংলাদেশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব আইন, ২০১৫’ প্রণয়ন করেছি এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছি। বর্তমানে ৭৯টি পিপিপি প্রকল্পে প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৬’ প্রণয়ন করেছি এবং বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছি। ২০১৯ সাল থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ৩৫টি সংস্থার ১৫৪টি বিনিয়োগ সেবা অনলাইনে প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উেক্ষপণ করেছি। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সমাপ্তির পথে। ঢাকায় মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল, সৈয়দপুরে আঞ্চলিক বিমানবন্দর, কক্সবাজারে আরো একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল এবং মাতারবাড়ী ও পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারীর প্রতিঘাত নিরসনে ১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছি।
উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আমাদের অর্থনীতির আকার এখন ৪১১ বিলিয়ন ডলার, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন করছি।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়