বিপৎসীমার নিচে তিস্তার পানি, তবুও বিপদ কাটেনি

তিস্তা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় রংপুরে তিস্তাপারের নিম্নাঞ্চল থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার নিচ ও কাউনিয়া পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে রংপুরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটেছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি বাড়লেও রাত ১০টার পর থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে।

ফলে তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চলের মানুষজনের মধ্যে বন্যার আতঙ্ক কমেছে। এদিকে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তার তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভারতের উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে বাংলাদেশের তিস্তাবেষ্টিত উত্তরাঞ্চলেও বন্যার শঙ্কা করা হচ্ছে।

সিকিম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। একই সঙ্গে নদীতীরবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকালে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। অন্যদিকে সকাল ৯টার তথ্যানুযায়ী রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে পানি সমতলে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ২৮ মিটার ৭৫ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগে গতকাল বুধবার সকাল থেকে পানি বাড়তে শুরু করলে সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার পানি ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাত ৭টা ও ৮টায় পানি বেড়ে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও রাত ৯টায় পানি কমে বিপৎসীমার ০৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর রাত ১০টা থেকে তিস্তার পানিপ্রবাহ আরো কমতে শুরু করেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ডালিয়া পয়েন্টের পানি সমতল আগামী ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত হ্রাস পেয়ে পরবর্তী সময়ে আবারও বৃদ্ধি পেতে পারে।

স্থানীয়রা জানান, তিস্তার পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার নিচে নেমে আসায় বন্যা পরিস্থিতিরও কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

কমতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চলের পানি। এতে তারা শঙ্কামুক্ত হতে শুরু করেছেন। তবে বন্যার পানিতে চরের কোথাও কোথাও শত শত হেক্টর জমির ধান ও শীতকালীন সবজিক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কীকরণ বার্তায় আরো কয়েক দিন বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা এবং ভারত থেকে আসা পানিতে যেকোনো সময় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে তিস্তার তীরবর্তী রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের কেল্লার পাড়ে আনা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধারকারী মিনি জাহাজ। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে আতঙ্কিত তিস্তার দুই পারের মানুষদের অনেকেই গবাদি পশু, ধান-চালসহ ঘর-বাড়ির গুরুত্বপূর্ণ মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন। তারা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন আগাম লাগানো পাকা ধান নিয়ে। এখন পানি কমতে শুরু করায় তাদের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরছে। অনেকেই ধান কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সিরাজুল ইসলাম  নামের এক কৃষক জানান, চরের ১০ বিঘা জমিতে আগাম আমন ধান চাষ করেছেন। তার সব ধানে পাকা রং ধরেছে। এখন পানি কমতে শুরু করেছে। যদি পরিস্থিতি খারাপ না হয় তাহলে ধান কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন। তবে ফের পানি বেড়ে ধান তলিয়ে গেলে আর কিছুই পাওয়া যাবে না। তিনিও বাড়ি-ঘর থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সব উঁচু জায়গায় সরিয়ে নিয়েছেন।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, উজানের ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেহেতু ভয়াবহ বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া গেছে, তাই আমার ইউনিয়নের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় ভয় কাটেনি। আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও প্রস্তুত রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় নৌকা মজুদ রাখা হয়েছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তামান্না নাহিদ বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে, এই বন্যাটি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এ জন্য আমরা জনগণকে সতর্ক করছি। তাদের ধান-চাল, হাঁস-মুরগি, গবাদি পশুসহ প্রয়োজনীয় মালামাল বিভিন্ন স্কুল-কলেজ এবং আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও উঁচু জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি। উঁচু স্কুলগুলোতে আমরা এরই মধ্যে থাকার জন্য ব্যবস্থা করে রেখেছি।

তিনি আরো জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আমাদের তৎপরতা আরো বাড়বে। ইতোমধ্যে আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তিস্তা-২ মিনি জাহাজ কেল্লার পাড়ে এনে রেখেছি। তবে লোকজন ভাবছে, এগুলো আগের বন্যার মতো হবে, সে কারণে তাদের মধ্যে সতর্কতা কম। তবে রাত থেকে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শঙ্কা কিছুটা কেটেছে। তার পরও আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।

অন্যদিকে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিদুল হক বলেন, নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষদের সতর্ক করতে মাইকিং করা হচ্ছে। সর্বসাধারণকে গরু-ছাগলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সতর্ক থেকে নিকটস্থ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা প্রাইমারি অথবা হাই স্কুলে অবস্থান নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের কন্ট্রোলরুম চালু করা হয়েছে।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বুধবার (৪ অক্টোবর) সকাল থেকে বাংলাদেশপ্রান্তে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর আগে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে গজলডোবা পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ২৮৫ সেন্টিমিটার এবং দোমুহুনী পয়েন্টে বুধবার সকাল থেকে ৮২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অন্য নদীর পানিও। এতে রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে গত বুধবার রাত ১০টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। এর আগে বিকেল ৪টায় তিস্তার পানি এই পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেল ৫টায় তা বেড়ে ১০ সেন্টিমিটার ও সন্ধ্যা ৬টায় ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাত ৭টা ও ৮টায় পানি বেড়ে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও রাত ৯টায় পানি কমে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ রাত ৯টা থেকে পানিপ্রবাহ কমতে শুরু করে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, সতর্কীকরণ বার্তা অনুযায়ী বন্যা ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। এ কারণে আমরা আগাম নদীপারের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। যেন একজনেরও প্রাণহানি না হয়। মালামালের ক্ষয়ক্ষতি না হয়। এ ছাড়া পানি যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ এই দুর্গত মানুষদের জন্য শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় খাবারের বন্দোবস্ত করে রাখা হয়েছে।

এদিকে নদী বিশ্লেষকদের অভিযোগ, অভিন্ন নদী তিস্তার উজানে গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণ করে ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহারই শুধু নয়, বর্ষা মৌসুমে নিজেদের রক্ষায় পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণের পানি ছেড়ে দিচ্ছে নির্বিচারে। শুধু তাই নয়, এই ঢল বা বন্যার আগাম খবরটুকুও বাংলাদেশকে জানায় না তারা। যে কারণে আচমকা বন্যায় ভিটামাটিসহ সর্বস্ব হারাচ্ছে দেশের উত্তর জনপদের মানুষ।
এই বিভাগের আরও খবর
আগে নির্বাচনে গেলে সংস্কার ঝুলে যাবে: ড. তোফায়েল আহমেদ

আগে নির্বাচনে গেলে সংস্কার ঝুলে যাবে: ড. তোফায়েল আহমেদ

বাংলা ট্রিবিউন
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন নাসির উদ্দীন

প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন নাসির উদ্দীন

ভোরের কাগজ
ঝালকাঠি-১ আসনের সাবেক এমপি শাহজাহান ওমর গ্রেফতার

ঝালকাঠি-১ আসনের সাবেক এমপি শাহজাহান ওমর গ্রেফতার

জনকণ্ঠ
জয়কে অপহরণ মামলা : জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান

জয়কে অপহরণ মামলা : জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান

নয়া দিগন্ত
প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে ড. ইউনূস

প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে ড. ইউনূস

জনকণ্ঠ
গাজীপুরে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট

গাজীপুরে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট

বিডি প্রতিদিন
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া