বিরাষ্ট্রীয়করণ শুরু সামরিক শাসনে গতি পায় নব্বইয়ের দশকে

১৯৪৭। ব্রিটিশ শাসনোত্তর পাকিস্তান। পূর্ব ও পশ্চিমাংশের মানুষের মধ্যে আশা-নিরাশার দোলাচল। ক্রমেই প্রকট হতে থাকে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য। তারই অনিবার্য পরিণতি পাকিস্তানের ভাঙন। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়। তারপর পেরিয়েছে ৫০ বছর। স্বাধীনতা-উত্তর দুই দেশের বাস্তবতা বা পূর্বাপর বৃত্তান্ত। পর্ব-৩ 

স্বাধীনতার পর দেশের শিল্প খাতকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে জাতীয়করণ করে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। অনভিজ্ঞতা, মূলধনের অভাব ও প্রাশাসনিক সংকটের মুখে তার সে উদ্যোগই দেশের শিল্প খাতের পায়ের তলায় জমি এনে দিয়েছিল। যদিও নানাবিধ সমস্যা এবং পঁচাত্তরের ট্র্যাজেডি ও এর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে এ উদ্যোগের সুফল বেশি দিন ভোগ করতে পারেনি বাংলাদেশ। পরের দশকের শুরুর দিকে সামরিক শাসনের অধীনে দেশে ব্যাপক মাত্রায় বিরাষ্ট্রীয়করণ শুরু হয়।

অনেকটা এ চিত্রেরই পুনরাবৃত্তি দেখা যায় পাকিস্তানে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজয় দেশটিতে দশকব্যাপী রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্ম দেয়। অনেকটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে ব্যাপক মাত্রায় জাতীয়করণের পথে হেঁটেছিলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। তার শাসনামলে বৃহৎ শিল্প, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে চালকল-আটাকলের মতো কারখানাগুলোকেও জাতীয়করণ করে নেয়া হয়। বেসরকারি খাত সক্ষমতা হারানোয় ধুঁকতে থাকে পাকিস্তানের অর্থনীতি। সত্তরের দশকের শেষ পর্যায়ে এসে ক্ষমতা হারান ভুট্টো। ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন জেনারেল জিয়া-উল-হক। ক্ষমতায় বসেই ভুট্টোর জাতীয়করণ কর্মসূচি বাতিল করেন তিনি। একই সঙ্গে জাতীয়করণকৃত কারখানাগুলোকে বিরাষ্ট্রীয়করণেরও ঘোষণা দেন জিয়া-উল-হক।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয় দেশই কাছাকাছি সময়ের মধ্যে সামরিক শাসনের অধীনে বিরাষ্ট্রীয়করণের পথে হাঁটা শুরু করেছিল। এক্ষেত্রে পশ্চিমা দাতাগোষ্ঠীর চাপ একটি বড় ভূমিকা রেখেছিল বলে সমসাময়িক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যে উঠে এসেছে। আশির দশকের শুরুর দিকে বেশ নাজুক অবস্থানে ছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি। প্রবৃদ্ধির হার নেমে এসেছিল শূন্যের কাছাকাছি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প খাত। কৃষি উৎপাদনও নিম্নমুখী। এমনই এক পরিস্থিতিতে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৮২ সালের মার্চে ক্ষমতা দখল করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলকে দেখা হয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বাজারকেন্দ্রিক উদারীকরণের উত্থান পর্ব হিসেবে। ক্ষমতায় আরোহণের পর পরই দেশের শিল্প খাতের ভরকেন্দ্রকে রাষ্ট্রায়ত্ত খাত থেকে ব্যক্তি খাতে সরিয়ে নেয়ার দিকে মনোযোগ দেন তিনি। ওই সময়কার নীতিনির্ধারকদের ভাষ্যমতে, এরশাদ দেশের অর্থনৈতিক নীতিমালাকে উদারপন্থী করে তোলেন। অর্থনীতির ওপর থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধ তুলে নেয়া এবং নিয়ন্ত্রণহীনতা অর্থনীতির মূল নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়। সংরক্ষিত খাত অল্প কয়েকটি ছাড়া গোটা অর্থনীতিকে বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

ভারী ও কৌশলগত শিল্পে সরকারি খাতের ভূমিকাকে সংকুচিত করে আনার উদ্যোগ নেন তিনি। ক্ষমতায় আরোহণের কয়েক মাসের মাথায় ১৯৮২ সালের ১ জুন নয়া শিল্পনীতি বা নিউ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি ১৯৮২ ঘোষণা করেন এরশাদ। বেসরকারি করা হয় বেশকিছু রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ও টেক্সটাইল মিলকে। এ নীতিমালা ঘোষণার এক বছরের মধ্যেই ৬০টি বৃহদায়তনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ বিরাষ্ট্রীয়করণ সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮১-৮২ অর্থবছরেও দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ছিল ২৯০। ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরেই তা এসে দাঁড়ায় ১৭৪-এ। বেসরকারি খাতে শিল্পায়নের জন্য ঋণপ্রবাহও বাড়ানো হয় অনেক। এজন্য সরকারি দুটি ব্যাংক পূবালী ও উত্তরা ব্যাংককে বেসরকারীকরণের পাশাপাশি নতুন বেশকিছু বেসরকারি ব্যাংককেও কার্যক্রম চালানোর অনুমোদন দেয়া হয়। দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণপ্রবাহে ব্যক্তি খাতের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেন এরশাদ। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে বেসরকারি শিল্প ইউনিটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৯৯। যেখানে তা ১৯৮১-৮২ অর্থবছরেও ছিল ৩ হাজার ৬৬টি।

শিল্পায়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে ১৯৮৬ সালে শিল্পনীতিতে সংশোধন আনা হয়। সংশোধিত এ শিল্পনীতি বা রিভাইজড ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি ১৯৮৬-তে বিরাষ্ট্রীয়করণের প্রক্রিয়াটি আরো গতিশীল করে তোলার ওপর জোর দেয়া হয়। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুসরণের মাধ্যমে গৃহীত এ সংশোধিত নীতি কার্যকরের মাধ্যমে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সুযোগ দেয়া হয়। দুই বছরের মাথায় এর প্রভাব প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে। ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে দেশে ছোট-বড় সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতের শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৬২৬। ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছর শেষে দেশের বেসরকারি খাতের শিল্প ইউনিটের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৫৪২। বেসরকারীকরণের গতিতে সন্তুষ্ট ব্রেটন উডস প্রতিষ্ঠানগুলো (বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ) সে সময় বাংলাদেশকে ‘বিরাষ্ট্রীয়করণের চ্যাম্পিয়ন’ খেতাবও দিয়েছিল। বিষয়টির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠেছিল ইউএসএআইডিসহ পশ্চিমা দাতারা। তত্কালীন সরকারের নীতিনির্ধারকরাও সে সময় বিষয়টিকে ফলাও করে প্রচার করতে থাকেন। যদিও তত্কালীন অর্থনৈতিক তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, দেশের শিল্প খাতে এর সুফল ছিল সামান্যই।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৯-৮০ সালেও জাতীয় আয়ে শিল্প খাতের অবদান ছিল ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে তা নেমে এসেছিল ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশে। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এক সেমিনারে বলেছিলেন, আশির দশকে শিল্পোৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধির ধারাটি কম হতাশার ছিল না। ১৯৭৩-৮০ সাল পর্যন্ত খাতটির গড় উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। ১৯৮১-৮২ সালে তা নেমে আসে ২ দশমিক ৪ শতাংশে। এর মধ্যে ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালের যুদ্ধ-পরবর্তীকালের পুনর্গঠনজনিত উচ্চপ্রবৃদ্ধির হারকেও (যথাক্রমে সাড়ে ১৭ ও ৬১ শতাংশ) বাদ দিয়েও যদি হিসাব করা হয়, ১৯৭৫-৮০ সাল পর্যন্তও খাতটিতে গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হলো, ১৯৮০-৮১ থেকে ১৯৮৮-৮৯ পর্যন্ত নয় বছরে দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে পাঁচ বছর প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। তিন বছর তা আটকে ছিল নেতিবাচক বা স্থবির পর্যায়ে (১৯৮২-৮৩, ১৯৮৭-৮৮ ও ১৯৮৮-৮৯)।

বিষয়টি নিয়ে অর্থনীতিবিদদের পর্যবেক্ষণ হলো, আশির দশকজুড়েই শিল্প খাতের দ্রুত ও বাছবিচারহীন বিরাষ্ট্রীয়করণ করতে গিয়ে জনগণের সম্পদ নামমাত্র মূল্যে শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেয়া হয়। এতে শিল্প খাতের অগ্রগতির বদলে শিল্পপতিদের পকেটই বেশি ভারী হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন ২৯টি পাটকল বেসরকারীকরণের সময়ে এগুলোর সম্পদমূল্য নির্ধারণ হয়েছিল ১৪০ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু এগুলো ছেড়ে দেয়া হয়েছিল মাত্র সাড়ে ৫ কোটি টাকায়। নামমাত্র মূল্যে পেলেও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, মালিকরা তা যথাযথভাবে পরিচালনা না করে ব্যক্তিগত কাজে লাগিয়েছেন। কেউ কেউ বিরাষ্ট্রীয়কৃত প্রতিষ্ঠানের মালিকানা গ্রহণ করেছেন শুধু ঋণ সুবিধা পাওয়ার জন্য। এদের অনেকেই পরবর্তী সময়ে ইচ্ছাকৃতভাবেই এসব প্রতিষ্ঠানকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন আরো ঋণ সুবিধা নিতে। প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বন্ধক রেখেও ঋণ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে কারো কারো বিরুদ্ধে। আবার এ বাছবিচারহীন ঋণ সুবিধা দেয়ায় আর্থিক খাতে ওই সময় ঋণখেলাপের সংস্কৃতি জন্ম নেয়, যা এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএম আকাশ বণিক বার্তাকে বলেন, যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, তখন খন্দকার মোশতাক প্রথম বাজার অর্থনীতি চালুর কথা বলেন। তবে তিনি এর সাহস করেননি। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিরাষ্ট্রীয়করণ করেন। ওই সময় আদমজী মিলের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিরাষ্ট্রীয়করণ করতে বিশ্বব্যাংকসহ দাতারা জিয়াউর রহমানকে চাপ দিয়েছিল। কিন্তু তার উত্তর ছিল, বিরাষ্ট্রীয়করণের মতাদর্শ আমরা গ্রহণ করছি না। বিরাষ্ট্রীয়করণ করা হবে কি হবে না, সেটি নির্ভর করছে কোম্পানিটির সক্ষমতার ওপর। যদি বিরাষ্ট্রীয়করণ ছাড়াই কোনো কোম্পানি লাভজনক থাকে, তাহলে আমরা করব না। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর এরশাদ এসে বিরাষ্ট্রীয়করণের নীতি কার্যকর করলেন। অর্থাৎ নীতি পরিবর্তনের আলোচনাটির সূচনা মোশতাককে দিয়ে। সেটি নিয়ে মাঝখানে জিয়াউর রহমান করব-করব না এমন অবস্থানে ছিলেন। কিন্তু এরশাদ এসে সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে হলেও বিরাষ্ট্রীয়করণ করার নীতিতে ছিলেন।

নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে এরশাদের পতন হয়। প্রকৃতপক্ষে এর পরই বাংলাদেশে উদারনৈতিক মুক্তবাজার অর্থনীতি গতিশীল হয়ে উঠতে থাকে। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখেন তত্কালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বাজারকেন্দ্রিকতায় বিশ্বাসী। তার অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমগুলোও ছিল বাজারমুখী। তার অধীনে শিল্প ও বাণিজ্যনীতির ব্যাপক উদারীকরণ করা হয়। বাণিজ্য খাতের উচ্চ শুল্কহার হ্রাস করেন তিনি। নির্দিষ্ট শুল্কহার থেকে বেরিয়ে এসে প্রবর্তন করা হয় মূল্যভিত্তিক শুল্কহার। করহারের সংখ্যাও কমিয়ে আনা হয়। পরিবর্তন আসে আমদানি নীতিতে। আমদানি উন্মুক্ত করা হয় বেশির ভাগ পণ্যের। আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকাও ছোট করা হয়। আবগারি করের পরিবর্তে প্রবর্তন হয় মূল্য সংযোজন কর। আয়করের উচ্চহার হ্রাস করা হয়। নানা প্রণোদনায় বড় হতে থাকে বেসরকারি খাত। রাষ্ট্রায়ত্ত লোকসানি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোয় সরকারি ভর্তুকি দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেন এম সাইফুর রহমান। এসব প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। ওই সময় বেশকিছু সরকারি শিল্প-কারখানা বিরাষ্ট্রীয়করণ করা হয়। এম সাইফুর রহমানের এসব সংস্কার কমবেশি ধরে রেখেছেন তার উত্তরসূরিরাও। যদিও ২০০২ সালে দাতাগোষ্ঠীর চাপে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হন এম সাইফুর রহমান।

এ বিষয়ে এমএম আকাশের বক্তব্য হলো, এম সাইফুর রহমান বলতেন, গাড়ির মালিক যদিও আমরা, কিন্তু গাড়ি চালায় মূলত বিশ্বব্যাংক। আসলে বাংলাদেশ তখন ছিল বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর। তবে বৈদেশিক সাহায্যনির্ভরতা সবচেয়ে বেশি ছিল এরশাদের আমলে। ক্ষমতায় থাকতে বিশ্বব্যাংকসহ অন্য দাতাদের পরামর্শ অনুযায়ী সে সময় বিরাষ্ট্রীয়করণের পথে হেঁটেছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের মতো পাকিস্তানেও নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বিরাষ্ট্রীয়করণ কার্যক্রম গতি পায়। ১৯৭৮ সালে জিয়া-উল-হক ক্ষমতায় এসেই ভুট্টোর ব্যাপক জাতীয়করণ কর্মসূচি বাতিল করেন। তার সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ছোটখাটো শিল্প-কারখানাগুলো সহজেই বিরাষ্ট্রীয়করণ করা সম্ভব হলেও বিপত্তি দেখা দেয় বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান আগের মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগও নেয়া হয়। কিন্তু আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দুর্বলতার কারণে এর মধ্যে মাত্র দুটিকে ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হয়।

১৯৮৮ সালে জিয়া-উল-হকের মৃত্যুর পর গুলাম ইসহাক খান সরকারের সময়েও বিষয়টি খুব একটা এগোনো যায়নি। ১৯৯০ সালে নির্বাচিত নওয়াজ শরিফ সরকারের সময়ে দেশটিতে আবার তা গতিশীল হয়ে ওঠে। এতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন তার অর্থমন্ত্রী সারতাজ আজিজ। পাকিস্তানের অর্থনীতির উদারীকরণে মূল ছকটি তারই করা। ১৯৯০ সালে সারতাজ আজিজের নেতৃত্বে ব্যাপক মাত্রায় বিরাষ্ট্রীয়করণ, উদারীকরণ ও নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ শুরু হয় দেশটিতে।

পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই সময় পাকিস্তানের অর্থনীতির উদারীকরণের মূল লক্ষ্য ছিল শিল্প খাতে সরকারি ভর্তুকির ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া এবং জাতীয় অর্থনীতিতে সরকারি ভূমিকা সীমিত করে ফেলা। ১৯৯০-৯৩ সালের মধ্যে দেশটিতে সুদহার কমিয়ে আনা হয়। ঋণ ভর্তুকি কমে আসে। একই সঙ্গে সরকারের বিক্রীত জ্বালানি পণ্যের মূল্য ব্যয়ের কাছাকাছি নিয়ে আসা হয়। ১৯৯৩ সালে নওয়াজ শরিফ সরকারের পতন হলে এ কর্মসূচিও স্থবির হয়ে পড়ে।
এই বিভাগের আরও খবর
উপজেলা নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাইয়ের মনোনয়ন বাতিল

উপজেলা নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাইয়ের মনোনয়ন বাতিল

মানবজমিন
ডিবির সংবাদ সম্মেলন ‘মানুষের হাত-পা কেটে পৈশাচিক আনন্দ পেত মিল্টন’

ডিবির সংবাদ সম্মেলন ‘মানুষের হাত-পা কেটে পৈশাচিক আনন্দ পেত মিল্টন’

দৈনিক ইত্তেফাক
এখনও আগুন জ্বলছে সুন্দরবনে, তদন্ত কমিটি গঠিত

এখনও আগুন জ্বলছে সুন্দরবনে, তদন্ত কমিটি গঠিত

বণিক বার্তা
মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে ডিবি

মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে ডিবি

বাংলা ট্রিবিউন
ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ

ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ

নয়া দিগন্ত
তুলে নিয়ে কিশোরীকে লঞ্চের কেবিনে ধর্ষণ

তুলে নিয়ে কিশোরীকে লঞ্চের কেবিনে ধর্ষণ

যুগান্তর
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়