ঋণের পরিমাণ বিবেচনায় এখন বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী চীন। এরপর রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ), ভারত সরকারও বাংলাদেশ রেলওয়ের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। এ তালিকায় এবার বিশ্বব্যাংককেও যুক্ত করতে চাইছে সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের জন্য কয়েকটি প্রকল্পের একটি প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এগুলোর মধ্যে টাকার অংকে সবচেয়ে বড় প্রকল্প লাকসাম-চিনকি আস্তানা-চট্টগ্রামের বিদ্যমান মিটার গেজ লাইনটিকে ডুয়াল গেজে রূপান্তর। ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরের গুরুত্বপূর্ণ এ লাইনটি নির্মাণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৮৪ কোটি ২০ লাখ ডলার।
বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার ৩৭টি প্রকল্প চলমান রয়েছে, যার মধ্যে ৯১ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা দিচ্ছে উন্নয়ন সহযোগীরা। এরই মধ্যে একাধিক প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে। প্রস্তাবিত আট প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি, যার সিংহভাগই বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভর করছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরের ডুয়াল গেজে রূপান্তর প্রকল্পটিতে ১৪৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার আসবে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে। বাকি ৩৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। ১৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেলপথটি নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছে রেলওয়ে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরের আরেক প্রকল্প বিদ্যমান চট্টগ্রাম দোহাজারী-মিটার গেজ লাইনটি ডুয়াল গেজে রূপান্তর ও চট্টগ্রামে একটি কানেক্টিং কার্ভ নির্মাণ। ১৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের এ প্রকল্পটিও রয়েছে প্রস্তাবিত প্রাথমিক তালিকায়। প্রকল্পটিতে সহায়তা হিসেবে নেয়া হবে ৯১ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর ৫২ কোটি ২০ লাখ ডলার দেয়া হবে সরকারি তহবিল থেকে। পরিকল্পনাধীন রেল রুটটির দৈর্ঘ্য ৪৩ দশমিক ৮১ কিলোমিটার। এরই মধ্যে প্রকল্পটির জন্য প্রয়োজনীয় সম্ভাব্যতা সমীক্ষাসহ বিস্তারিত নকশা প্রস্তুত করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের কাছে অর্থায়নের জন্য যে ক’টি প্রকল্প প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বে টার্মিনালের রেলওয়ে লিংক নির্মাণ। বর্তমানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চায়না রেলওয়ে ডিজাইন করপোরেশন ও বাংলাদেশের মজুমদার এন্টারপ্রাইজকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশা তৈরির কাজ দেয়া হয়েছে। বে টার্মিনাল রেল লিংকটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ কিলোমিটার।
পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত নতুন একটি রেলপথ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রায় ৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেলপথটি নির্মাণ হলে ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা বলছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। বিশ্বব্যাংকের কাছে এ রেলপথটিতেও অর্থায়নের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৭ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
২ আগস্ট বিশ্বব্যাংকের রিজিওনাল ডিরেক্টর (সাউথ এশিয়া) অব ইনফ্রাস্ট্রাকচার গুয়াংজে চেনের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় প্রকল্পগুলোয় বিনিয়োগের প্রস্তাব করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার। সভায় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক প্রকল্পগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরে সেগুলোতে বিনিয়োগের জন্য বিশ্বব্যাংককে আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, আরো চারটি প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে অর্থায়নের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এগুলোর অন্যতম ধীরাশ্রম ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) নির্মাণ। কমলাপুর আইসিডির ওপর চাপ কমাতে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে কনটেইনার পরিবহন বাড়ানোর লক্ষ্যে গাজীপুরের ধীরাশ্রমে নতুন একটি আইসিডি নির্মাণের পরিকল্পনা করছে রেলওয়ে। প্রকল্পটির জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশাও করা হয়েছে। প্রাক্কলন অনুযায়ী, ধীরাশ্রম আইসিডি নির্মাণে ব্যয় হবে ৩৬ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে নেয়া হবে ২৮ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার ডলার। আর ৭ কোটি ২৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার অর্থায়ন করছে সরকার।
ব্রড গেজ রেলওয়ের রোলিং স্টক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টঙ্গী-ভৈরব বাজার সেকশনের দাঁড়িপাড়ায় একটি কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। প্রাক্কলন অনুযায়ী, কারখানাটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৯৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৮২ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার ডলার প্রকল্প সহায়তা। জিওবি তহবিল থেকে নেয়া হবে ১১ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার ডলার। এ রেলওয়ে কারখানাটিসহ ‘অটোমেশন অব ইনভেন্টরি কন্ট্রোল সিস্টেম’ ও ঢাকায় একটি রেলওয়ে ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পেও বিশ্বব্যাংকের কাছে অর্থায়নের প্রস্তাব করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা।
রেলওয়ের একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে করা প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বণিক বার্তাকে জানান, প্রস্তাবগুলো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিদেশী অর্থায়নের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়গুলো এগিয়ে নেয়া হয় ইআরডির (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) মাধ্যমে। বিশ্বব্যাংকের কাছে করা রেলওয়ের প্রস্তাবগুলোও করা হবে ইআরডির মাধ্যমেই। এখানে বাংলাদেশ রেলওয়ে কিংবা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের করার তেমন কিছু নেই। তবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এবং রেলের আধুনিকায়নে আমরা অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। আধুনিক ও উন্নত রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা প্রতিনিয়ত উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছি।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়