উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং, পার্কিং, রুট নেভিগেশনসহ বিভিন্ন খাতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) মাশুল (চার্জ) দেয় কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব এয়ারলাইনস। তবে বেবিচকের ধার্য করা এসব মাশুল নির্দিষ্ট সময়ে দিতে ব্যর্থ হলে এয়ারলাইনসগুলোকে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৭২ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়, যা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেয়ে ৮৩ শতাংশ বেশি। সারচার্জের হার অতিরিক্ত হওয়ায় এয়ারলাইনসগুলো একবার বকেয়ার চক্রে পড়ে গেলে তাদের আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকে না। এ অবস্থায় সারচার্জ কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে আনার দাবি জানিয়েছে দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা এয়ারলাইনসগুলোর সংগঠন এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এওএবি)।
সারচার্জ কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে আনার দাবি জানিয়ে গতকাল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় এওএবি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, সারচার্জসহ দেশীয় চার এয়ারলাইনসের কাছে বেবিচকের পাওনা রয়েছে ৫ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনা হচ্ছে ১ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। বাকি ৪ হাজার ১৫২ কোটি টাকাই হচ্ছে মূলের ওপর আরোপিত সারচার্জ বাবদ। এ অবস্থায় এয়ারলাইনসগুলোকে টিকিয়ে রাখতে বার্ষিক সারচার্জ ৭২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১২ শতাংশ নির্ধারণ করার অনুরোধ জানিয়েছে এওএবি। চিঠির একটি করে অনুলিপি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব, অর্থ সচিব ও বেবিচকের চেয়ারম্যানের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর ও আকাশে উড্ডয়নের সময় রাডার ও নেভিগেশন সেবা, বিমানবন্দর ব্যবহার, বিমানবন্দরে পার্কিং ও হ্যাঙ্গার, উড়োজাহাজের নিরাপত্তা বিধানসহ এয়ারলাইনসগুলোকে বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকে বেবিচক। এ ধরনের অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল সেবার জন্য নির্দিষ্ট হারে মাশুল দিয়ে থাকে এয়ারলাইনসগুলো।
এওএবি মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বেবিচক তার বিভিন্ন বকেয়া পাওনার ওপর মাসিক ৬ শতাংশ অর্থাৎ বার্ষিক ৭২ শতাংশ সারচার্জ চক্রবৃদ্ধি হারে আদায় করে। বর্তমানে চালু ও বন্ধ হয়ে যাওয়া চারটি এয়ারলাইনসের কাছে সারচার্জসহ বেবিচকের বকেয়া পাওনা প্রায় ৫ হাজার ৩২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনা হচ্ছে ১ হাজার ১৭০ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং মূলের ওপর সারচার্জ বাবদ পাওনা ৪ হাজার ১৫১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। মাত্রাতিরিক্ত সারচার্জ আরোপের কারণে অনেক এয়ারলাইনস তাদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না এবং বিরাট দেনার চাপে পড়ে অনেকেই দেউলিয়া হয়ে যায় বলেও উল্লেখ করা হয়।
এওএবি বলছে, বাংলাদেশ বিমানের কাছে বেবিচকের মোট পাওনার পরিমাণ ৪ হাজার ৩১৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনার পরিমাণ হচ্ছে ৯২০ কোটি ১৭ লাখ টাকা, বাকি ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকাই হচ্ছে সারচার্জ ও অন্যান্য। বন্ধ হয়ে যাওয়া জিএমজি এয়ারলাইনসের কাছে বেবিচকের পাওনা ৩৬৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনার পরিমাণ হচ্ছে ৫৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, বাকি ৩১১ কোটি ৩০ লাখ টাকাই হচ্ছে সারচার্জ ও অন্যান্য। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের পাওনা ৩৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনার পরিমাণ হচ্ছে ৫৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, বাকি ২৯৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকাই হচ্ছে সারচার্জ ও অন্যান্য এবং রিজেন্ট এয়ারের কাছে বেবিচকের পাওনা ২৮৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল পাওনার পরিমাণ হচ্ছে ১৩৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা, বাকি ১৪৭ কোটি ২০ লাখ টাকাই হচ্ছে সারচার্জ ও অন্যান্য।
এ প্রসঙ্গে এওএবি মহাসচিব ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, এ-সংক্রান্ত এসআরওটি বেবিচক সর্বশেষ ২০১৩ সালে জারি করে। তখন থেকে আমরা বেবিচকের কাছে সারচার্জ কমানোর বিষয়টি বলে আসছি। তার পরও কোনো কাজ হয়নি। তাই এবার প্রতিমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। আশা করছি তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এভিয়েশন খাতের উন্নয়নের কথা বিবেচনায় নিয়ে এক যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। বর্তমান হারে সারচার্জ অব্যাহত থাকলে এভিয়েশন খাতেও উন্নয়ন সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের যেকোনো অর্থনৈতিক বিপর্যয়, যুদ্ধ জ্বালানি মূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা মহামারীর কারণে এভিয়েশন ব্যবসা প্রথমেই বিরাট ঝুঁকিতে পড়ে। চলমান কভিড-১৯ মহামারীতে এ অবস্থা আরো ঘনীভূত হচ্ছে। এর কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের এভিয়েশন খাত অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। এয়ারলাইনসগুলো তাদের পাওনা সময়মতো পরিশোধ করতে পারছে না, এর ওপর অতিরিক্ত সারচার্জ পরিস্থিতি আরো সংকটপূর্ণ করে তুলছে। তারা বলছেন, সময়মতো পাওনা পরিশোধ না করতে পারলে সারচার্জ দিয়ে পাওনা পরিশোধের নিয়ম অনেক দেশেই রয়েছে। তবে সেই সারচার্জের তুলনায় বেবিচকের হার বহুগুণ বেশি।
এওএবি তাদের চিঠিতে বাংলাদেশসহ আশপাশের কয়েকটি দেশের সারচার্জ হার উল্লেখ করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সারচার্জ হচ্ছে বার্ষিক ৭২ শতাংশ, ভারতের ১২ থেকে ১৮ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের ৮ শতাংশ, ওমানের ১০ শতাংশ ও পাকিস্তানের ২ শতাংশ। এ হিসেবে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের সারচার্জ ৮৩ শতাংশ বেশি। ফলে এয়ারলইনসগুলো একবার বকেয়া সারচার্জের ঝুঁকিতে পড়ে গেলে সেখান থেকে ফিরে আসার আর উপায় থাকে না। পাশাপাশি দেনা পরিশোধ করতেও ব্যর্থ হয়। এর জ্বলন্ত উদাহরণ জিএমজি, ইউনাইটেড ও রিজেন্ট এয়ার বলেও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। বেসরকারি এ এয়ারলাইনসগুলো এ অবস্থা থেকে বের হয়ে পুনরায় আর চালু করতে পারেনি।
এওএবি বলছে, কোনো এয়ারলাইনস সময়মতো বিল পরিশোধ করতে না পারলে বকেয়া বিলের ওপর সারচার্জ দিতে হবে, এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। তবে সেই সারচার্জ হার যৌক্তিক ও পরিশোধযোগ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাছাড়া দেশের অর্থনীতিকে আরো গতিময় করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহার নির্ধারণ করেছে ৯ শতাংশ। তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ২০১৩ সালের বেবিচকের এ-সংক্রান্ত এসআরও সংশোধন করে একই তারিখ থেকে মাসিক ১ শতাংশ অর্থাৎ বার্ষিক ১২ শতাংশ হারে নির্ধারণ করে একটি যৌক্তিক ও সন্তোষজনক সারচার্জ আরোপ করার ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়