ডলারের সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকগুলো এখন বিদেশী মানি এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে বেশি দরে ডলার কিনছে। ব্যাংকভেদে প্রতি ডলারের পেছনে রেমিট্যান্স আনতে ১০৫ টাকা থেকে ১০৮ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করছে। আমদানি ব্যয় কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। দিন দিন আরো কড়াকড়ি করছে পণ্য আমদানিতে। এখন ৩ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৩০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে। আগে ছিল ৫ মিলিয়ন ডলার। তবে, নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে রফতানি আয় নিয়ে। অর্থবছরের প্রথম মাসেই অর্থাৎ গত জুলাইতে রফতানি আয় আগের মাস জুনের তুলনায় সাড়ে ২৩ শতাংশ কমে গেছে। যদিও আগের বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত জুনে রফতানি আয় হয়েছিল ৪৯১ কোটি ডলার, পরের মাস অর্থাৎ জুলাইতে তা কমে হয়েছে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, একদিকে ডলারের সঙ্কট, অপরদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রফতানি আদেশ কমে যাচ্ছে। একই সাথে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঙ্কটের কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। একদিকে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, অপরদিকে কমছে রফতানি আদেশ। সবমিলেই রফতানি আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অপরদিকে, আমদানি ব্যয় কমানোর নানামুখী পদক্ষেপ নেয়ার পরেও অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বিশেষ করে জ্বালানি তেল আমদানিতে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। সবমিলেই বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৫ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত : বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। একদিকে আমদানি ব্যয় কমাতে ২৭টি পণ্যের আমদানিতে ব্যাংকঋণ তুলে দেয়া হয়েছে। এসব পণ্য আমদানিতে আমদানিকারকের শতভাগ অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। অপরদিকে, আমদানিতে কিছু বিধিনিষেধ আনা হয়েছে। বড় অঙ্কের এলসি কমাতে বলা হয়, ৫ মিলিয়ন ডলারের ওপরে পণ্য আমদানিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। ওখান থেকেও আরো শক্ত অবস্থান নিয়েছে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এখন বলা হচ্ছে, ৩ মিলিয়ন ডলারের ওপরে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। একই সাথে ব্যাংক ও মানিচেঞ্জারগুলোতে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: সিরাজুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের জানান, ডলার সঙ্কটের কারণে আমরা আমদানিতে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছি। এখন ৩ মিলিয়নের (৩০ লাখ ডলার) বেশি আমদানি এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে বলা হয়েছে। আগে যেটা ছিল ৫ মিলিয়ন। এর ফলে গত জুনের তুলনায় জুলাই মাসে আমাদের আমদানি এলসি অনেক কমেছে। তিনি বলেন, বাজারে কেউ যেন ডলার নিয়ে কারসাজি করতে না পারে সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজার তদারকি অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, কারসাজির দায়ে ইতোমধ্যে ৫টি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। আরো ৪২টিকে শোকজ করা হয়েছে। তিনি জানান, যতদিন পর্যন্ত কারসাজি বন্ধ না হবে ততদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাজার তদারকি অব্যাহত রাখা হবে।
বেশি দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা হচ্ছে : ব্যাংকগুলোর ডলার যখন উদ্বৃত্ত ছিল তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার দরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনে নিয়েছিল। কিন্তু গত বছরের আগস্ট থেকে ব্যাংকগুলোর ডলার সঙ্কট শুরু হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে গত অর্থবছরে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করে বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এ সঙ্কট আরো বেড়ে যায়। ব্যাংকগুলো ডলারের অভাবে হাহাকার করতে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে প্রায় প্রতিদিনই ডলার বিক্রি করছে। কিন্তু শুধু জ্বালানি তেল, সার ও ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। গতকালও সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়