বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির অনুমতি দেওয়া হোক

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশনে প্রকাশিত সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং ২০২৩-এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে। র‌্যাংকিংয়ের তালিকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ৬০১-৮০০ এর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। তাদের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও একই তালিকায় রয়েছে।

আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান, গবেষণার মান, বাজারে চাকরির চাহিদাসহ নানা বিষয় নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম।

বাংলা ট্রিবিউন: টাইমস হায়ার এডুকেশনে প্রকাশিত সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং ২০২৩ এ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ) বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে। এই অর্জনকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

ড. আতিকুল ইসলাম: ছাত্র, শিক্ষক ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজসহ সবার প্রচেষ্টায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে, একদিনে হয়নি। আমরা ৬০১ থেকে ৮০০-এর মধ্যে স্থান করে নিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে এর মধ্যে। আপনি দেখবেন, সর্বশেষ র‌্যাংকিংয়ে ১০৪টি দেশ থেকে ১৭৯৯টি বিশ্ববিদ্যালয়কে র‌্যাংকিং দিয়েছে। এর মধ্যে ৬০০ থেকে ৮০০’র মধ্যে যাওয়াটা খুবই আনন্দের বিষয়। এর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবারই কৃতিত্ব রয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাতে পারছে না বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো– এমন সমালোচনাও আছে। কীভাবে কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছানো সম্ভব বলে আপনি মনে করেন।

ড. আতিকুল ইসলাম: যে সমালোচনা হচ্ছে এর যথাযথ কারণ রয়েছে। র‌্যাংকিংয়ে যদি বাংলাদেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় কোনও অবস্থান পেয়ে থাকে, তাহলে ভারতের ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে– কেন বাংলাদেশ এতটা পিছিয়ে? ওদের যদি ৪০০ থেকে ৫০০ এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশের একটাও নেই কেন।

আমরা তো মেধার দিক থেকে পিছিয়ে নেই। কেন র‌্যাংকিংয়ে ওদের মতো ভালো করতে পারছি না? এ বিষয়টি নিয়ে তো অসন্তোষ থাকবেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া টিউশন ফি দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় চালায়। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তো সরকার শত কোটি টাকা দিচ্ছে। এর পরিবর্তে দেশের মানুষ কি আশা করতে পারে না যে, তারা আন্তর্জাতিকভাবে ভালো ফলাফল এনে দেবে?

বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে ভালো করার উপায় কী হতে পারে?

ড. আতিকুল ইসলাম: উত্তরণের জায়গাটা শর্টকাট নয়। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত আমাদের বেশি, গত র‌্যাংকিংয়ে নর্থ সাউথের ৩১ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক ছিল একজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক আছেন। ১৬ জন মানে হচ্ছে অনেক ভালো। কিন্তু টপ র‌্যাংকিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখেন। সেখানে পাঁচ জনের জন্য একজন শিক্ষক বা প্রতি আড়াই জনের জন্য একজন শিক্ষক। সেই হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেও বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করা যায় না, শুধুমাত্র এই অনুপাতের জন্য। গবেষণার জন্য আরও প্রোডাকটিভ হওয়া উচিত। আমাদের দেশে একবার চাকরি পেলে তো চাকরি যায় না। গবেষণা করেন বা না করেন। পদোন্নতির সময় সব সময় ‘সিনিয়রিটি’ দেখি। বিদেশের কোথাও এটির এক পয়সারও দাম নেই। আমাদের সিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে। গবেষণা বাড়াতে হবে, আন্ডার গ্র্যাজুয়েটের তুলনায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বাড়াতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলতে পারে– প্রতি এতজন আন্ডার গ্র্যাজুয়েটের বিপরীতে একজন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট আছে। অপরদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির শিক্ষার্থীর সংখ্যা শূন্য। কারণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে  কেউ পিএইচডি শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হতে পারছেন না। কাজেই ওখানে আমরা শূন্য পাচ্ছি। তারপর শিক্ষকের সঙ্গে পিএইচডি শিক্ষার্থীর অনুপাত কত? সেখানেও শূন্য পাচ্ছি। কারণ, আমাদের তো পিএইচডি শিক্ষার্থী নেই।

আমাদের দেশে যদি সেশন-জট না হয়, ইন্টারন্যাশনাল ল্যাংগুয়েজে লেকচার দেওয়া হয়, পরীক্ষা নেওয়া হয়, যদি উচ্চ কিংবা ভালো মানের গবেষণা থাকে, নিরাপত্তার সঙ্গে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারে– তাহলে বাইরের দেশ থেকে ছাত্র আসবে। র‌্যাংকিংয়ে সেটাও দেখা হয়। আর র‌্যাকিং ভালো না হলে বিদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসবে না। বিদেশি ছাত্র আসলে র‌্যাংকিংয়ে ওপরে উঠতে সুবিধা হবে। বিদেশি শিক্ষক আসবে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে। গবেষণার মান যদি বৃদ্ধি পায়– এসব শুধু আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, বিশ্বব্যাপী এগুলো যদি করতে পারি, তাহলে র‌্যাংকিংয়ে ভালো করা যাবে। এসব একদিনে করা সম্ভব নয়, তবে দুই বছর থেকে পাঁচ বছরের পরিকল্পনা নিলে অবশ্যই সম্ভব।

বাংলা ট্রিবিউন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি করানোর অনুমতি দেওয়া নিয়ে ইউজিসিতে একটি আলোচনা হয়েছিল। সে বিষয়ে কি কোনও অগ্রগতি আছে?

ড. আতিকুল ইসলাম: অগ্রগতি বলতে কিছুই নেই। এটি থেমে আছে। হয়তো তারা চিন্তা করে গবেষণার করার মতো কয়জন শিক্ষকের যোগ্যতা আছে? কিংবা এটি যদি ‘মিস-ইউজ’ হয়!

আমাদের কথা হলো– আপনারা কিছু শর্ত ঠিক করে দিন। বলে দিন– পিএইচডি করতে হলে কতজন শিক্ষক থাকতে হবে। কতজন শিক্ষকের কতগুলো মানসম্পন্ন গবেষণা প্রবন্ধ থাকতে হবে। যেমন- বলতে পারেন, শতকরা ২৫ ভাগ পিএইচডিধারী শিক্ষক নেই, এমন বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি করানোর সুযোগ দেওয়া হবে না।

শর্ত যদি ঠিক করে দেওয়া হয় এবং সেগুলো যারা পূরণ করতে পারবে, তাদের পিএইচডি করানোর অনুমতি দেওয়া হোক। যারা কোয়ালিটি মেনটেন করতে পারছে না, তাদের উন্নতি করাতে হবে। সরকারের বড় দায়িত্ব এগুলো দেখভাল করা।

বাংলা ট্রিবিউন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণায় কেমন ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন? কোনও সমস্যা দেখেন কিনা?

ড. আতিকুল ইসলাম: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা চলে এসেছে, অথচ আমরা টাকা খরচ করতে পারছি না।  রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত গিয়ে অনুমোদন নিতে হয়। যারা গবেষণা করার জন্য টাকা দেয়, তারা তো আমাদের মতো না। পাঁচ বছর ধরে গবেষণা করার জন্য টাকা দেয় না। এক বা দুই বছরের মধ্যে তারা ফলাফল দেখতে চায়। কিন্তু দেখা গেলো, দুই বছরের  মধ্যে ফান্ড অনুমোদনই হলো না। তাতে করে টাকা ফেরত যায়। আমরা নর্থ সাউথ যেটা করি তা হচ্ছে, যে টাকাটা এসেছে তার বিপরীতে গবেষককে অগ্রিম অর্থ দেই। গবেষককে বলি, রিপোর্ট দিয়ে দিতে। তারপর বাকিটা ফান্ড অনুমোদনের পর নিতে হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: অনেক সময় বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কিন্তু সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখার সুযোগ রাখা হয় না। এক্ষেত্রে আপনি কি মনে করেন— এই খাতটির যেকোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাস্টি, উপাচার্যদেরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন?

ড. আতিকুল ইসলাম: দু’ রকম বিষয় আছে।  যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সুনির্দিষ্ট আইনে চলছে। তাদের স্বায়ত্তশাসন আছে। অপরদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি ট্রানজিশন পিরিয়ড বা পরিবর্তনের সময়কালও থাকতে হয়। যেমন- তিন সেমিস্টার থেকে দুই সেমিস্টারে যাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। এ জন্য যে ট্রানজেশন সময় দিতে হবে, পরিকল্পনা দিতে হবে, সরকার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে।  কার কী সমস্যা হচ্ছে তা জানা, বলতে পারেন— কীভাবে আরও ভালো মতো করা যায়। এ ধরনের সহায়তা তেমন পাচ্ছি না। আমার মনে হয়, যারা উপচার্য আছেন, ট্রাস্টিজ আছেন– যাদের ওপর দায়িত্ব আছে, তারা পুরো ফান্ড দিয়েছেন। সেই হিসেবে আমার মনে হয়, কনসালটেশন বা আলোচনা আরেকটু বাড়লে ভালে হতো।
এই বিভাগের আরও খবর
এসএসসি পরীক্ষার নাম পরিবর্তন হতে পারে

এসএসসি পরীক্ষার নাম পরিবর্তন হতে পারে

জনকণ্ঠ
সুখবর! অর্ধলক্ষ শিক্ষক নিয়োগ: কাল শূন্যপদের তথ্য সংশোধনের শেষ তারিখ

সুখবর! অর্ধলক্ষ শিক্ষক নিয়োগ: কাল শূন্যপদের তথ্য সংশোধনের শেষ তারিখ

জনকণ্ঠ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে কমতে একেবারে তলানিতে

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে কমতে একেবারে তলানিতে

বণিক বার্তা
রমজান মাসজুড়ে স্কুল বন্ধের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল

রমজান মাসজুড়ে স্কুল বন্ধের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল

যুগান্তর
রোজায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ থাকবে: হাইকোর্ট

রোজায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ থাকবে: হাইকোর্ট

যুগান্তর
ঢাবির ৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, ৬০ জনকে শাস্তি

ঢাবির ৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, ৬০ জনকে শাস্তি

যুগান্তর
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়