ব্যবসায়ীরা রিজার্ভ থেকে ডলার চান কেন

ভবিষ্যতে যাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে না যায়, সে জন্য পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে ডলার সংকটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিও এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে আসন্ন রমজানে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্য আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ চেয়ে একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এদিকে ব্যবসায়ীরাও রোজার মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি নিষ্পত্তিতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন। কারণ আসন্ন রমজানে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এলসি খুলতে নির্দেশনা দেওয়া হলেও ডলার সংকটে তা পারছে না বেশির ভাগ ব্যাংক। আর ডলার জোগাড়ে দিশেহারা হয়ে আমদানিকারকরা ভোগ্যপণ্যের এলসির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে ধরনা দিচ্ছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তিতে ডলার সরবরাহের অনুরোধ জানিয়ে আমদানিকারকরা বারবার সরকারি দফতরে ধরনা দিচ্ছেন।

তবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় না নামে, সে জন্য চাইলেই ডলার দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুধু সার, জ্বালানি ও সরকারি খাদ্য আমদানিতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে।

অবশ্য গত ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ভোগ্যপণ্যের এলসি খুলতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ঢাকা চেম্বারের নেতাদের বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানিতে এলসি মার্জিন ন্যূনতম করাসহ বেশ কিছু নীতিগত পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এলসি খোলা নিয়ে বিরাজমান পরিস্থিতি দু-এক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

এর আগে রবিবার (২২ জানুয়ারি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে ভোজ্যতেল, ছোলা, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, চিনি এবং খেজুর আমদানির জন্য ডলারের বিশেষ সংস্থান করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব পণ্য আমদানিতে এলসি খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তফশিলি ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলা সম্ভব হচ্ছে না। এটি অব্যাহত থাকলে রমজানে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি হতে পারে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর ও ১০ জানুয়ারি পণ্য আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ডলারের সরবরাহ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে। তবে সেখানে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। আগের চিঠিতে বলা হয়, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম জনসাধারণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে নিয়মিত এলসি খোলা জরুরি। আমদানি বাবদ ব্যয় পরিশোধে ব্যাংকগুলোতে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বেসরকারি ব্যাংকগুলো যেন নিয়মিত এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে- সে নির্দেশনা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।

অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যেন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় না নামে, সে জন্য চাইলেই ডলার দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুধু সার, জ্বালানি ও সরকারিভাবে খাদ্য আমদানিতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি হয়েছে ৮৫৩ কোটি ডলার।

বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। গত বছরের এই সময়ে ছিল ৪৫ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর কাওরান বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সভাকক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে অধিদফতর বাজারে নিয়মিত তদারকি করছে। তবে পণ্য আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।

উল্লেখ্য, এর আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করতে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু জরুরি ভোগ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ডলার সরবরাহ না বাড়িয়ে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এলসি মার্জিন ন্যূনতম পর্যায়ে নেওয়ার সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা কোনও কাজে আসছে না বলে মনে করছেন আমদানিকারক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এ অবস্থায় গত ৪ জানুয়ারি ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স থেকে নির্ধারিত পরিমাণ ডলার কোটা হিসেবে সংরক্ষণ রাখার অনুরোধ করে ফের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, অ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুযায়ী—ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, খেজুর, ছোলাসহ বিভিন্ন পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করা ও বাজার দর স্থিতিশীল রাখা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যের এলসি খোলা, এলসি নিষ্পত্তি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশ কমে গেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এই বিভাগের আরও খবর
টানা ৩ দিন ধরে কমছে সোনার দাম

টানা ৩ দিন ধরে কমছে সোনার দাম

দৈনিক ইত্তেফাক
বোতলের সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭, খোলা ১৪৭ টাকা

বোতলের সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭, খোলা ১৪৭ টাকা

দৈনিক ইত্তেফাক
মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে

মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে

প্রথমআলো
বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে ব্রাজিল

বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে ব্রাজিল

বিডি প্রতিদিন
ভারতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

ভারতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

বিডি প্রতিদিন
বাংলাদেশে গত এক যুগে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে মধ্যপ্রাচ্যের অবদান সামান্য

বাংলাদেশে গত এক যুগে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে মধ্যপ্রাচ্যের অবদান সামান্য

বণিক বার্তা
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়