মহামারী ও সামরিক শাসনের দ্বৈত প্রভাবে ধুঁকছে মিয়ানমার। অব্যাহত গতিতে পতন ঘটছে দেশটির অর্থনীতির। পরিবেশও ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগের প্রতিকূলে। সামরিক জান্তার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে পশ্চিমা দেশগুলো। বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় নেয়া অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোও থমকে রয়েছে। স্থানীয় বাজার পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নয়। বেকারত্ব বাড়ছে। ক্রমাগত ধসের পর পুঁজিবাজারের সব সূচক নেমে এসেছে রেকর্ড সর্বনিম্নে। এ অবস্থায় মিয়ানমারের অর্থনীতিতে মারাত্মক সংকোচনের আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সব সংস্থা। একই সঙ্গে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আবার দারিদ্র্যসীমার নিচে ফিরে আসবে দেশটির অনেক মানুষ।
মিয়ানমারে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর প্রায় তিন মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। দেশটিতে গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভ দিন দিন বড় সংঘাতের দিকে রূপ নিচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রায় প্রতিদিনই প্রাণ ঝরছে মিয়ানমারের রাজপথে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে দেশটির জাতিগত বিদ্রোহী দলগুলো নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা জোরদার করছে। প্রয়োজনে সর্বাত্মক সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিদ্রোহীরাও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোলযোগপূর্ণ এ পরিস্থিতিরই প্রভাব পড়তে যাচ্ছে মিয়ানমারের অর্থনীতিতে। দেশটির অর্থনীতির এ সংকটকে আরো প্রকট করে তুলছে কভিড-১৯-এর সংক্রমণ।
চলতি বছরে মিয়ানমারের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন সংস্থার প্রাক্কলন প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) উভয়ের আশঙ্কা, ২০২১ সালে মিয়ানমারের অর্থনীতি সংকুচিত হবে প্রায় ১০ শতাংশ হারে। অন্যদিকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বলছে, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই দারিদ্র্যে পতিত হতে যাচ্ছে দেশটির প্রায় অর্ধেক নাগরিক।
অথচ চলতি বছরের শুরুতেও দেশটির অর্থনীতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে এতটা হতাশা ছিল না। সে সময় পূর্বাভাস ছিল, চলতি বছরে করোনার প্রভাব কাটিয়ে বর্মি অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হতে যাচ্ছে প্রায় ৬ শতাংশ। কিন্তু সবকিছু বদলে যায় গত ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর। ক্ষমতা দখলের পর দেশটির সামরিক বাহিনীর কর্তারা নিজেদের ব্যবসাবান্ধব হিসেবে উপস্থাপনের প্রয়াস চালিয়েছেন। এমনকি জরুরি অবস্থার মধ্যেও অর্থনৈতিক নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এজন্য আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও দেয়া হয়েছিল। তার পরও মিয়ানমারের অর্থনৈতিক বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারেনি জান্তা সরকার। দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক ধসের বেশকিছু লক্ষণ এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এক দশক আগেও মিয়ানমারকে বলা হতো এশিয়ার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ফ্রন্টিয়ার মার্কেট। কিন্তু সে ভাবমূর্তি এরই মধ্যে হারিয়ে ফেলেছে দেশটি। অভ্যুত্থানের পর থেকে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় দেশটির অনেক বিনিয়োগকারীই এখন বিনিয়োগ গুটিয়ে নিচ্ছেন। সামরিক জান্তার পক্ষ থেকে মার্চে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইতালি ও ফ্রান্সের চেম্বার অব কমার্সকে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছিল। বাণিজ্য সংগঠনগুলো এ আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে। অন্যদিকে কোকাকোলা, টেলিনর, হেনিকেনসহ ৫০টি বহুজাতিক কোম্পানি এরই মধ্যে মিয়ানমারের বিদ্যমান ব্যবসায়িক পরিবেশ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়