রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অবসরে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হলেও তাকে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে ৬৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের ঘটনায় উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন একজন অভিভাবক। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনায় আবারও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
এর আগে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে ৬৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অর্থ লেনদেনের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল। এবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ এবং ৬৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের ঘটনায় নিম্ন আদালতে মামলার ঘটনায় বিশৃঙ্খলা চরম পর্যায়ে পৌঁছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে সরকারি কলেজের শিক্ষকদের অধ্যক্ষ নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত দুই দফায় দুই জন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বের হতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি, বরং আর্থিক দুর্নীতিসহ নানা অনিয়ম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কলেজটিতে বিশৃঙ্খলা আরও বেড়েছে। এখন ভিকারুননিসার শিক্ষকরা দাবি করছেন—কলেজটির বাইরে থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
বর্তমান কমিটির সভাপতি এবং অধ্যক্ষ দুই জনই সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে থাকার পরও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে কলেজটিতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা কামরুন নাহার অবসরে যান গত ৪ এপ্রিল। এর আগেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় কেকা রায় চৌধুরীকে। এই ঘটনায় ১৫ জন শিক্ষক লিখিত অভিযোগ করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। একই অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরাও। এসব অভিযোগে বলা হয়, দুইজন শিক্ষক প্রতিনিধিসহ কলেজ গভর্নিং বডির ৫ জন সদস্যকে বাদ দিয়ে গোপন বৈঠকের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়। গত ৫ এপ্রিল কেকা রায় চৌধুরীকে নিয়োগ করা হলেও বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) পর্যন্ত তাকে অধ্যক্ষর চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়নি।
জানতে চাইলে নতুন নিয়োগ পাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে নিয়োগ দিয়ে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ নিয়োগের পর অধ্যক্ষের চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চেয়ারে বসতে দেবে কি দেবে না—তা সময় বলে দেবে। দেখেন কী হয় সামনে। ’
বিদায়ী অধ্যক্ষ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা কামরুন নাহার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সভাপতিসহ সবাই যাকে ভালো মনে করছেন তাকে নিয়োগ দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু করার নেই।’
গভর্নিং বডির অভিভাবক সদস্য ওয়াহেদুজ্জামান মন্টু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সভাপতি আমাদের কিছু জিজ্ঞাসাই করেন না। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করার সুযোগ নেই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছি। অধ্যক্ষ এবং একজন শিক্ষক এই অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত। অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে ৬৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করা হয়েছে। তাকে (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) জোর করে চেয়ারে বসানোর চেষ্টা চলছে, আমারা কী মারামারি করবো। আর কী করার আছে?’
গভর্নিং বডির সদস্য (অভিভাবক প্রতিনিধি) ড. তাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত ১৮ তারিখে বৈঠক করা হয়েছে আমাদের ৫ জন সদস্যকে বাদ দিয়ে। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকরাও অভিযোগ করেছেন। এছাড়া কনটেমপ্ট পিটিশনও রয়েছে।’
গভর্নিং বডির সদস্য (শিক্ষক প্রতিনিধি) চাঁদ সুলতানা বলেন, ‘জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ায় এলোমেলো কোনও পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি না। আমরা চেয়ারম্যান (সভাপতি) স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাকে অনুরোধ করছি নিয়ম অনুযায়ী যেন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত স্যারের কাছ থেকে কিছু জানতে পারিনি। আমরা অপেক্ষা করছি।
গভর্নিং বডির সদস্য (শিক্ষক প্রতিনিধি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বৈঠকের বিষয়ে আমি জানতাম না। গত বৃহস্পতিবার বেশ কিছু শিক্ষককে আমি ডেকেছিলাম। তাদের কাছে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। তাদের জানিয়েছি আমি বৈঠকের চিঠি পাইনি। ওই মিটিংয়ের এজেন্ডাও জানানো হয়নি। মিটিং হয়েছে কিনা আমি জানি না। যদি হয়ে থাকে আমাদের অ্যাভয়েড করে করা হয়েছে।
অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে পরে জানতে পেরেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে আমি একটি চিঠি পেয়েছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের আরেকজন টিআর (শিক্ষক প্রতিনিধি) বৈঠকে ছিলেন বলে তিনি দাবি করেছেন। তিনি চিঠি দেখিয়েছেন, বলেছেন—সেখানে এরকম সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু আমি রেজুলেশন দেখিনি।
৬৯ জন শিক্ষক কর্মচারী-নিয়োগ
২০২১ সালে প্রথম অ্যাডহক কমিটি নিয়োগ দেওয়া হয় ৫ ডিসেম্বর। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমানকে সভাপতি, অধ্যক্ষ কামরুন নাহারকে সদস্য সচিব, নন-এমপিও শিক্ষক ড. ফারহানা খানম এবং অভিভাবক প্রতিনিধি আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খানকে সদস্য করে চার সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। ছয় মাস মেয়াদের এই কমিটি অনুমোদন করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। ওই মেয়াদে গভর্নিং বডির নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে আবারও একই কমিটি অনুমোদন চাওয়া হয় প্রতিষ্ঠান থেকে। দ্বিতীয় মেয়াদেও অ্যাডহক কমিটি নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়। অ্যাডহক কমিটির মেয়াদের মধ্যে ২০২২ সালে নিয়োগ দেওয়া হয় শাখা প্রধান এবং ৫০ জন শিক্ষক-কর্মচারী। যখন কমিটির কোনও বৈধতাই ছিল না সেই অতিরিক্ত সময়ে নিয়োগ দেওয়া হয় আরও ১৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী। মোট ৬৯ জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেয় অ্যাডহক কমিটি।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়