বাজারে ভোজ্য তেল নিয়ে লুকোচুরি চলছে। পর্যাপ্ত তেল মজুত থাকা সত্ত্বেও সরবরাহ সংকট তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ফের অস্থির হয়ে উঠেছে তেলের বাজার। লিটারপ্রতি ১০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সব ধরনের তেলের দাম। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মিল মালিকরা সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন। তবে আমদানিকারকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাহিদা অনুযায়ী তেলের জোগান দিয়ে যাচ্ছেন। সরবরাহও কমানো হয়নি। সরকারিভাবে বলা হয়েছিল আগামী ঈদ পর্যন্ত ভোজ্য তেলের কোনো সংকট হবে না। তবে বাজারে কেন সংকট তৈরির চেষ্টা হচ্ছে তা কেউ বলতে পারছে না
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগে ভোজ্য তেলের চাহিদা বাড়ে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিতেই কৌশলে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। এর আগেও এমন সংকট তৈরি করে ভোজ্য তেল থেকে হাজার কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করার অভিযোগ রয়েছে।
সরজমিন দেখা গেছে, ঢাকার খুচরা বাজারগুলোতে খোলা সয়াবিন পাওয়া যাচ্ছে না। বোতলজাত তেলের এক লিটারের বোতলের সরবরাহও কম। পাম অয়েলের সংকট তৈরি হয়েছে কয়েকদিন থেকে। ১৩০ টাকার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। অন্যদিকে ১৬০ টাকার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। খুচরা দোকানিরা বলছেন, কোম্পানিগুলো মাসখানেক ধরেই সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। যে কারণে তেলের সংকট তৈরি হয়েছে।
ঢাকার তালতলা বাজারের আল-আমিন স্টোরের মালিক জানান, ডিলারদের কাছ থেকে পাম অয়েল কিনতে হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। এ জন্য ১৮০ টাকায় পাম অয়েল বিক্রি করতে হচ্ছে। কোম্পানিগুলো তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। আবারো তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে জানান তিনি।
শ্যামলী মৌসুমী স্টোরের মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, বাজারে তেলের সংকট রয়েছে। বসুন্ধরা, তীর, রূপচাঁদার কোম্পানিগুলো প্রতি সপ্তাহে মাত্র দুই কার্টন করে তেল দিচ্ছে। প্রতি কার্টন ২০ লিটার করে তেল থাকে। দোকানে দৈনিক গড়ে ৩ কার্টন করে তেল লাগে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলও বেশি দাম দিয়ে কিনছি।
কাওরান বাজারের পুষ্টি তেলের ডিলার সিদ্দিক মানবজমিনকে বলেন, কোম্পানি থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল দেয়া হচ্ছে না। শুধুমাত্র কাওরান বাজারের জন্য প্রতিদিন ১ হাজার কার্টন তেলের প্রয়োজন হয়, কিন্তু আমাকে আজ দেয়া হয়েছে মাত্র ২০০ কার্টন। এ জন্য ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী তেল দিতে পারছি না। কোনো ব্যবসায়ীকে এক কার্টনের বেশি তেল দিচ্ছি না। তিনি বলেন, গত ১ সপ্তাহ ধরে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তালতলা বাজারের সয়াবিন তেলের ডিলার বলেন, আমাদের যে চাহিদা রয়েছে তার থেকে অন্তত ৩০ শতাংশ কম সরবরাহ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যে কারণে সংকট তৈরি হয়েছে।
আমদানিকারক সূত্রে জানা গেছে, দেশে সয়াবিন ও পাম অয়েলের চাহিদার চেয়ে বেশি মজুত রয়েছে। যে পরিমাণ অপরিশোধিত তেল আমদানি হয়েছে, সেগুলো দিয়ে কমপক্ষে আরও তিন মাস চলবে। অন্যদিকে বাড়তি দামে যেসব তেল আমদানি হবে, সেগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে পাম অয়েল দেশে আসতে ২ মাস সময় লাগবে। এগুলো পরিশোধিত হয়ে খুচরা বাজারে আসতে আরও ২ মাস সময় লাগবে। সব মিলিয়ে আরও ৪ মাস সময় লেগে যাবে। কিন্তু মিল মালিকরা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে এখনই দাম বাড়াতে চাইছে। অথচ এসব তেল কমপক্ষে তিন মাস আগে আমদানি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, দেশে যে পরিমাণ তেল মজুত রয়েছে, তা দিয়ে এখনো দেড় মাস পর্যন্ত চালানো যাবে। আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। কাল থেকে ভোক্তার টিম বিভিন্ন মিলে যাবে, তখন বুঝবো সমস্যাটি আসলে কোথায়? তিনি বলেন, এই সংকটটি হয়েছে শুধুমাত্র রিফাইন্ড অয়েলের ক্ষেত্রে। ক্রুড অয়েলের ক্ষেত্রে নয়। আমরা পাম তেলের বিকল্প হিসেবে সয়াবিন তেল ব্যবহারের কথা বলছি।
ভোজ্য তেলের সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল তাছলিম মানবজমিনকে বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাহিদা অনুযায়ী তেলের যোগান দেয়া হচ্ছে। সরবরাহও কমানো হয়নি। বাড়তি দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে নির্ধারিত মূল্যেই তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা হয়তো দাম বাড়াচ্ছে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়