ভ্যাট প্রত্যাহারের সুবিধা ব্যবসায়ীদের পকেটে

তিন স্তরে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলেও খুচরা পর্যায়ে এখনও বেশিদামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের ভোজ্যতেল। অসাধু অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে সরকার নির্ধারিত নতুন দাম কার্যকর হতে পারছে না। এতে করে আমদানি, উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের সুবিধা মূলত ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের পকেটেই ঢুকছে। নীতিগত সব সুবিধা পেল ব্যবসায়ীরা। সাধারণ ভোক্তাদের আগের মতো বেশিদাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে তেল। তবে ভ্যাট প্রত্যাহারসহ বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করায় নতুন করে দাম বাড়ার সুযোগ নিতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। এটাকেই আপাতত সান্ত¡না হিসেবে দেখছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

ঢাকার নিত্যপণ্যের বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সরকার নির্ধারিত নতুন দামে ভোক্তারা ভোজ্যতেল কিনতে পারছে না। এতে করে অনেক দোকানদার ও ভোক্তাদের মধ্যে বচসা, বাগ-বিত-া এমনকি হাতাহাতির মতো ঘটনাও নিয়মিত ঘটছে। কিন্তু ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে আগের মতো বেশি দামেই। কখনও বাজার মনিটরিং টিম কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করলে তাৎক্ষণিক সরকার নির্ধারিত দাম বাজারে কার্যকর হচ্ছে। অভিযান পরিচালনা শেষে তারা (ভ্রাম্যমাণ আদালত) চলে গেলে আবার আগের মতো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। বুধবার সকালে ঢাকার বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের বাজারে প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৫-১৭০ টাকা এবং প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন ১৬০-১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আবার অনেক বাজারে খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। অথচ সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হলে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন ১৩৬ টাকায় বিক্রি হতো খুচরা পর্যায়ে। এক্ষেত্রে একজন ভোক্তাকে বেশি গুনতে হচ্ছে ২৪-২৯ টাকা।

একইভাবে বোতলজাত প্রতিলিটার তেলে ৫-১০ টাকা বেশি নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতিলিটার পামওয়েলে বেশি নেয়া হচ্ছে ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত। বর্তমান খুচরা বাজারে ১৫০ টাকার নিচে কোন পামওয়েল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার নির্ধারিত দর কার্যকর হলে প্রতিলিটার পামওয়েল ১৩০ টাকায় কিনতে পারতেন একজন ভোক্তা। অর্থাৎ রোজা সামনে রেখে তিনস্তরে ৩০ শতাংশ ভ্যাট কমলেও বাজারে কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ভোজ্যতেলের ভ্যাট প্রত্যাহারের ফলে সরকারের রাজস্ব আয় কমবে ৬০০-৮০০ কোটি টাকা। অথচ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই সুবিধার পুরোটা ব্যবসায়ীদের পকেটেই যাচ্ছে। ৩০ শতাংশ ভ্যাট কমানো হলেও প্রতিলিটারে দাম কমানো হয়েছে মাত্র ৩-৮ টাকা। কিন্তু সেটিও বাজারে কার্যকর হয়নি। উল্টো সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের ভোজ্যতেল।

এদিকে, পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত ঢাকার মৌলভীবাজারে খোলা সয়াবিন ও পামওয়েলের দাম কিছুটা কমলেও পুরোপুরি ভ্যাট প্রত্যাহারের সুবিধা কার্যকর হয়নি। বুধবার বিকেলে সেখানে (মৌলভীবাজার) প্রতিমণ খোলা সয়াবিন ৫ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ সমপরিমাণ তেল লিটারে পরিবর্তন করা হলে প্রতিলিটারের পাইকারি মূল্যে দাম আসে ১৩৬ টাকা ২০ পয়সা। একইভাবে প্রতিমণ পামওয়েল ৫ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতে প্রতিলিটারের দাম পড়ে ১২৯ টাকার কাছাকাছি। হিসেবে করে দেখা গেছে, বর্তমান পাইকারি মূল্যে তেল কিনে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হলে খুচরা পর্যায়ে কিছুটা লোকসান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে সরকার নির্ধারিত দর কার্যকর করতে হলে আগে পাইকারি বাজারে মূল্য নির্ধারণ করা সবচেয়ে বেশি জরুরী। অন্যথায় ভ্যাট সুবিধা ভোক্তা পর্যায়ে কার্যকর হতে পারবে না। যদিও নতুন দাম নির্ধারণ করার গত ২০ মার্চ বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছিলেন, ভোক্তা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর করতে কিছুটা সময় লাগবে। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, হয়তো দুতিন দিনের মধ্যেই বাজারে এর সুফল আসবে। কিন্তু এখনও বাজারে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন মুদিপণ্যের মার্কেটে গতকাল বিকেলে প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৫-১৬৮ টাকায় এবং খোলা পামওয়েল ১৫০-১৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর সয়াবিন খোলা সয়াবিন তেল ওই বাজারে পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা বিরাজ করছে ঢাকার অন্যান্য মুদিপণ্য ও কাঁচা বাজারেও। গোড়ান তিলপাপাড়া বাজারের কামাল জেনারেল স্টোরের সেলস এক্সিকিউটিভ আবদুল হাকিম মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, সরকার নির্ধারিত দামের কথা তারা শুনেছেন। কিন্তু ওই দামে পাইকারি বাজারেও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, পামওয়েল প্রতিলিটার ১৫০-১৫৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এর চেয়ে কমে বিক্রি করা হলে লোকসান গুনতে হবে। কোনভাবেই ১৩০ টাকা লিটার বিক্রি করা সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, সরকার নির্ধারিত নতুন দাম বাজারে কার্যকর হচ্ছে কিনা সেটা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তিন স্তরে ৩০ শতাংশ ভ্যাট কমানো হয়েছে। অবশ্যই ভ্যাট কমানোর এই সুবিধা ভোক্তা পর্যায়ে বাস্তবায়ন হতে হবে। তিনি জানান, ব্যবসায়ীদের সব দাবি পূরণ করা হয়েছে। এরপরও ভোজ্যতেল নিয়ে সিন্ডিকেট করা হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

উল্লেখ্য, ভ্যাট কমানোর সুবিধা ভোক্তা পর্যায়ে কার্যকর করতে আগের নির্ধারিত দরের চেয়ে লিটারে বোতলজাত সয়াবিন তেলে ৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা কমানো হয়েছে মিল ও রিফাইনারি মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে নতুন এ দাম নির্ধারণ করা হয়। নতুন এই দাম আগামী ঈদ-উল-ফিতর পর্যন্ত বহাল থাকবে। নতুন দাম অনুযায়ী সয়াবিন তেল এক লিটারের পেট বোতলের নতুন দাম ১৬০ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৭৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর খোলা তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৬ টাকা লিটার। এছাড়া প্রতিলিটার পামওয়েলের দাম ৩ টাকা কমিয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে খুচরা পর্যায়ে। কিন্তু খুচরা বাজারে নতুন দাম কার্যকর হচ্ছে না। এ নিয়ে ভোক্তাদের অভিযোগের শেষ নেই।
এই বিভাগের আরও খবর
টানা ৩ দিন ধরে কমছে সোনার দাম

টানা ৩ দিন ধরে কমছে সোনার দাম

দৈনিক ইত্তেফাক
বোতলের সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭, খোলা ১৪৭ টাকা

বোতলের সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭, খোলা ১৪৭ টাকা

দৈনিক ইত্তেফাক
মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে

মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে

প্রথমআলো
বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে ব্রাজিল

বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে ব্রাজিল

বিডি প্রতিদিন
ভারতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

ভারতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

বিডি প্রতিদিন
বাংলাদেশে গত এক যুগে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে মধ্যপ্রাচ্যের অবদান সামান্য

বাংলাদেশে গত এক যুগে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে মধ্যপ্রাচ্যের অবদান সামান্য

বণিক বার্তা
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়