মধ্যবিত্তরাই এখন টিসিবির পণ্যের প্রধান ক্রেতা

বৈশ্বিক মহামারী করোনার অভিঘাত বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে দেশের অর্থনীতিতে। কর্মসংস্থান হারিয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। আয় কমেছে অনেকের। বেড়েছে নতুন দারিদ্র্যের সংখ্যাও। বিপরীতে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। এমন পরিস্থিতিতে সুলভে নিত্যপণ্যের জন্য নিম্নবিত্ত মানুষের স্বস্তির ঠিকানা হয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তবে করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে টিসিবির পণ্যের ক্রেতার আসনেও পরিবর্তন আসছে। সুলভ পণ্যের এখন প্রধান ক্রেতা হয়ে উঠেছেন মধ্যবিত্তরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যবিত্তের আধিপত্যের কারণে চোখের পলকেই খালি হয়ে যাচ্ছে টিসিবির ট্রাক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও শূন্য হাতে ফিরতে হচ্ছে বেশির ভাগ ক্রেতাকে। এ অবস্থায় দাবি উঠছে টিসিবির পণ্য সরবরাহ বাড়ানোর।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, কভিডের কারণে গত বছর থেকে এ পর্যন্ত বেকার হয়েছেন ২৬ লাখের বেশি মানুষ। কর্মজীবীদেরও আয় কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। অন্যদিকে ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের বাজারও বেশ চড়া। এ অবস্থায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত সোমবার থেকে ভোক্তাদের কম দামে পণ্য সরবরাহ করতে সারা দেশে ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। মাঝে ঈদের কয়েক দিন সাধারণ ছুটি বাদে এ দফায় সেল চলবে ২৯ জুলাই পর্যন্ত।

টিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, করোনায় সাধারণ ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিপণন কার্যক্রম চলছে। দেশজুড়ে টিসিবির ৪৫০ ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে ৮০টি ও চট্টগ্রাম সিটিতে ২০টি ট্রাক রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মহানগর ও জেলা শহরেও ট্রাক সেলের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এসব ট্রাকে কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা দরে চিনি ও ডাল এবং লিটারপ্রতি ১০০ টাকা দরে সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে।

বর্তমানে টিসিবির প্রতিটি ট্রাকের জন্য ৫০০-৮০০ কেজি চিনি, ৩০০-৬০০ কেজি মসুর ডাল ও ৮০০-১২০০ লিটার সয়াবিন তেল বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি দৈনিক দুই থেকে চার কেজি চিনি, দুই কেজি ডাল ও দুই থেকে পাঁচ লিটার ভোজ্যতেল কিনতে পারেন।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই সব সামগ্রী শেষ হয়ে যায়। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে গেন্ডারিয়া থানার সামনে ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু করেন ডিলার শাহজাহান। বেলা ২টার মধ্যেই ট্রাকে মজুদ তেল ও ডাল শেষ হয়ে যায়। চিনি শেষ হয়ে যায় ৩টার মধ্যে। পণ্য শেষ হওয়ার পরও ছিল নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। এ ডিলার বলেন, আগে টিসিবির লাইনে নিম্নবিত্ত মানুষেরই প্রাধান্য ছিল বেশি। কিন্তু গত রোজার মাস থেকে মধ্যবিত্তের ভিড় বাড়তে থাকে। এখন দৃশ্য এমন হয়েছে যে নিম্নবিত্তের চেয়ে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যাই বেশি।

ভাসানটেকের ডিলার মো. মজিবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, টিসিবির পণ্য মধ্যবিত্তরাই বেশি কিনছেন। পাঁচ লিটার তেলের দাম ৫০০ টাকা। শুধু ৫০০ টাকার তেল কেনার সামর্থ্য তো নিম্নবিত্তদের নেই। এখন দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্রেতাই একসঙ্গে পাঁচ লিটার তেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য সর্বোচ্চ পরিমাণে কিনে নেন। তিনি বলেন, আগে শতকরা ২০ জন ক্রেতা মধ্যবিত্ত থাকলে এখন শতকরা ৮০ জনই মধ্যবিত্ত।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে কথা হয় আনামুল হকের সঙ্গে। পেশায় ব্যবসায়ী আনামুল বলেন, করোনার কারণে ব্যবসায় ক্রমাগত লোকসান হচ্ছে। আগে দুটো দোকান ছিল। এখন একটি চালাচ্ছি। লকডাউনে রোজগার বন্ধ, ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। তাই টিসিবির ট্রাক থেকে কম টাকায় নিত্যপণ্য কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি।

ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে টিসিবির পণ্য কেনার দীর্ঘ লাইন দেখা গেল। কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তাদের একজন আসলামুল হক (প্রকৃত নাম নয়)। তিনি বলেন, ইসলামপুরে কাপড়ের ব্যবসা করি। বড় ধরনের লোকসানে এখন ঘরভাড়া দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেকটা বাধ্য হয়েই টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছি। ঠেলাঠেলি ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত থাকায় লাইনে দাঁড়াইনি। বেলা ১১টায় এসেছি, আড়াইটা পর্যন্ত দাঁড়িয়েও কিছুই কিনতে পারিনি।

রিনা সরকার নামে আরেক ক্রেতা বলেন, টিসিবির ট্রাক আসার সঙ্গে সঙ্গেই ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর যখন আমার পালা এলো, তখন শুনি ২ ঘণ্টা আগেই তেল ও ডাল শেষ হয়ে গেছে। যে দুটো বেশি দরকার, সেগুলোই কিনতে পারলাম না।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি বিক্রয় পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতার চাহিদার তুলনায় টিসিবির ট্রাকে পণ্যের পরিমাণ কম। ফলে ভোক্তাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় ডিলারদের। মীর হাজীরবাগের ডিলার চঞ্চল বলেন, যে অবস্থা চলছে, টিসিবি ১০ গুণ পণ্য দিলেও তা মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। করোনা-পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে টিসিবি ডিলারদের পণ্যের পরিমাণ বাড়ালে ভোক্তারা উপকৃত হবে বলে মনে করেন এ ডিলার।
এই বিভাগের আরও খবর
প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার ৫ প্রকল্প অনুমোদন একনেকের

প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার ৫ প্রকল্প অনুমোদন একনেকের

বাংলা ট্রিবিউন
রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

যুগান্তর
এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

প্রথমআলো
ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

কালের কণ্ঠ
বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

নয়া দিগন্ত
প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

বাংলা ট্রিবিউন
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া