আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করার দাবিতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি। সেই দাবি আদায়ে সরকারবিরোধী প্রায় সব রাজনৈতিক দলকে সাথে নিয়ে বৃহৎ পরিসরে নতুন রাজনৈতিক মোর্চা গঠনেই বেশি মনোযোগী দলটি। বিশেষত বাম ব্লকের দলগুলোর সমন্বয়ে নতুন এই রাজনৈতিক মোর্চা গঠনের কাজ চলছে। এ জন্য বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বাইরেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পৃথকভাবে বৈঠক করছে বিএনপি। এসব বৈঠকে ওই সব দলগুলো বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরছে। প্রত্যেক দলের সাথে বৈঠক শেষে বিএনপির হাইকমান্ড এসব প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে জোটগঠনের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করবেন, যা মার্চের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে। তবে সরকারবিরোধী বেশির ভাগ দলই জোটের পরিবর্তে যুগপৎ আন্দোলনের পক্ষে সম্মত। এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীকে জোটগত নয়, যুগপৎ আন্দোলনে দলটিকে পাশে রাখতে চায় বিএনপি। যদিও যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াত থাকলে বেশির ভাগ বিরোধী রাজনৈতিক দলের কোনো আপত্তি থাকবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব:) অলি আহমদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার সাথে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। এর মধ্যে গত রোববার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এলডিপি সভাপতির বাসায় যান। তার সাথে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদও ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন ইস্যুতে দীর্ঘ আলোচনার পর দুই দলের মধ্যে অতীতের কিছু ভুল বোঝাবুঝি ও দূরত্বের অবসান ঘটে।
বিএনপির সাথে বৈঠকের বিষয়ে এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপির মহাসচিবসহ কয়েকজন নেতা কর্নেল (অব:) অলি আহমদের বাসায় এসেছিলেন। সেখানে আমিও ছিলাম। তাদের সাথে দেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি বাস্তবায়ন দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এর চেয়ে এখনই জাতীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করা উচিত। আওয়ামী লীগ সরকার বিগত এক যুগের বেশি সময় ধরে দেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ করেছে। তাই নিরপেক্ষ সরকারের দাবি বাস্তবায়ন হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। তাই সবার আগে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে হবে। এ জন্য দরকার জাতীয় সরকার। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের ফরম্যাট কী হবে সেটা আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া দিগন্তকে বলেন, চলমান এই দুর্বিষহ অবস্থা শুধু বিএনপির নেতাকর্মী নয়, পুরো দেশবাসীকে কষ্ট দিচ্ছে। জনগণের ভোটাধিকার থেকে শুরু করে সব নাগরিক অধিকার ক্ষুণœ করা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চাই। ইতোমধ্যে অনেক রাজনৈতিক দলের সাথে এটাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। আনুষ্ঠানিভাবে আমরা শিগগিরই সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করব।
এর আগে গত শুক্রবার বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সাথে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নার রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। বৈঠকে আগামী আন্দোলন, নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, সারা দেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের দলীয়করণ প্রসঙ্গ বিষয়ে এই দুই নেতা আলোচনা করেন।
এর প্রায় ১০ দিন আগে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাথে বিএনপি নেতাদের বৈঠক হয়। দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপির নেতাদের সাথে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে তারা তাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে কথা বলেছেন। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি কিংবা বাম জোটের অন্যান্য দলগুলোর সাথেও বিএনপির বৈঠক হয়নি। এসব দলের সাথে বৈঠক শেষে তারা তাদের জোটের সাথে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ ছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাথে বিএনপির নেতাদের যোগাযোগ হলেও বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়নি। একইভাবে গণফোরামের সাথেও বিএনপির যোগাযোগ হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান এসব দলের সাথে বৈঠক করবেন। তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। দেশে এলেই বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। এসব দলের বাইরে গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ডান-বামসহ ২০ দলীয় অন্যান্য শরিক দলগুলোর সাথেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করছে বিএনপি।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ দল বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ না হয়ে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে বলছেন। বিশেষত বাম ঘরানার দলগুলো এই প্রস্তাবনা তুলে ধরছে। এসব দলের শীর্ষ নেতারা জানান, তাদের বৈঠকগুলো হƒদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকে বিএনপি নেতারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানান। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায় করাই হচ্ছে এ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। তারা জানান, বিএনপির সাথে আন্দোলনকালীন জোটগঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। এটা কোনো নির্বাচনকালীন জোট নয়। এরপরও তারা তাদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে তারা কোনো দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য জোট গঠন করতে ইচ্ছুক নয়। ভবিষ্যতে যারাই ক্ষমতায় আসবে তাদেরকে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে। এ জন্য বিএনপিকে সুস্পষ্টভাবে কিছু বিষয়ে ঘোষণা দিতে হবে। এর মধ্যে সংবিধানের কিছু ধারা পরিবর্তন করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ও দুদক-নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো বেশি শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণ করা যাবে না। এ রকম আরো বেশ কিছু বিষয়ে শর্তারোপ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা বৃহত্তর রাজনৈতিক মোর্চা গঠনের বিষয়ে কিছু রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করেছি। আরো আলোচনা হবে। এসব আলোচনায় আমরা ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। সব মিলিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে নতুন জোটের রূপরেখা চূড়ান্ত হবে।
আগামী সপ্তাহ থেকে বিএনপির কর্মসূচি : নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ফের কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও মূল্য হ্রাসের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আগামী সপ্তাহ থেকে দেশব্যাপী মহানগর, জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, হাট সভা ও হ্যান্ডবিল বিতরণে কর্মসূচি দেবে দলটি। গতকাল বুধবার বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সভায় বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
স্থায়ী কমিটির সভায়, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর প্রভাতফেরি ও শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিনা উসকানিতে হামলা ও বিএনপির নেতাকর্মীদের আহত করার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়। সভা মনে করে এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ একুশের চেতনাকে সুপরিকল্পিতভাবে ভূলুণ্ঠিত করছে এবং তাদের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের নিন্দা ও এসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়