রেকর্ড উৎপাদনের পরেও ধান-চাল সংগ্রহে রীতিমতো খাবি খাচ্ছে খাদ্য অধিদপ্তর। সরকারের এ প্রতিষ্ঠানকে চাল দিচ্ছেন না মিল মালিকরা। অনেকে নানান অজুহাতে শেষ পর্যন্ত চাল দিতে চুক্তির আওতায়ই আসেননি। পর্যাপ্ত ধান-চাল সংগ্রহে এবার দাম বাড়িয়েছে সরকার। সেটিও কোনো কাজে আসছে না। কৃষকদের অনীহার কারণ, ধান দেওয়ায় অ্যাপস ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত ঝক্কি-ঝামেলা। সব মিলিয়ে ব্যর্থ হতে চলেছে চলতি মৌসুমে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা।
তথ্য বলছে, এবার ১৭ নভেম্বর থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমন মৌসুমের (২০২২-২৩) ধান-চাল সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণ রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে পাঁচ লাখ টন চাল ও তিন লাখ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। কিন্তু গত ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৯৭ টন। দেশের হাট-বাজারে ধান কেনার উপযুক্ত সময় প্রায় শেষ দিকে। অথচ সরকারের গুদামে ধান দেননি কৃষক।
পাঁচ লাখ টনের বিপরীতে এ পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ৬৯ টন। আর মিল মালিকদের চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত সাত হাজার ৯১ জন সিদ্ধ চালকল মালিকের সঙ্গে তিন লাখ ৭৩ হাজার ৮৭২ টন চালের চুক্তি হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
অর্থাৎ, ধান-চাল মিলে যেখানে আট লাখ টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, সেখানে সরকারের গুদামে এসেছে মাত্র এক লাখ ১৮ হাজার ৩৬৬ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৫ শতাংশ।
মিল মালিকরা বলছেন, এবার প্রতি কেজি চাল কেনা হচ্ছে ৪২ টাকা আর ধান ২৮ টাকায়, যা বাজারদরের চেয়ে অনেক কম। সে কারণেই অনীহা তাদের। একই কারণে ধান দেননি চাষিরাও। এছাড়া সরকারি গুদামে ধান বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়াগত জটিলতা থাকায় কৃষকরা স্থানীয় বাজারেই ধান বিক্রি করছেন।
গত আমন মৌসুমে (২০২১-২২) এর চেয়েও কম দামে ধান-চাল সংগ্রহ হয়েছিল। সে সময় ২৭ টাকা কেজি দরে ধান এবং ৪০ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ করেছিল সরকার। এবার মিলারদের অনাগ্রহের কারণে সে দর বাড়িয়ে নির্ধারণ করেও কাজ হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাল দেওয়ার জন্য এবার চুক্তি করছেন না মিলাররা। খাদ্য অধিদপ্তর বলছে, সরকারকে চাল দিতে পারে এমন চুক্তিযোগ্য চালকল মালিকের সংখ্যা ১২ হাজার ৬৮০ জন। এ মৌসুমে আমন সংগ্রহের জন্য ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত চুক্তির মেয়াদে চুক্তিভুক্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৯১ জন। তবে ৫ হাজার ৫৮৯ মিল মালিক বারবার সময় দিয়েও চুক্তি করেননি।
এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ শাখার পরিচালক রায়হানুল কবীর জাগো নিউজকে বলেন, চুক্তিযোগ্য যেসব মিল আমাদের সঙ্গে চুক্তি করেনি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ১৮ ডিসেম্বর খাদ্য অধিদপ্তরের মাসিক সমন্বয় সভায় চলতি আমন মৌসুমে যে সব মিলার বরাদ্দ অনুযায়ী চুক্তি করেননি তাদের বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি জানান, মৌসুমে চুক্তিযোগ্য যেসব মিলার বরাদ্দ অনুযায়ী চুক্তি সম্পাদন করেননি, এমন মিলারদের কারণ দর্শানোর জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কী ধরনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে সে বিষয়ে স্পষ্ট বলেননি রায়হানুল কবীর। তবে খাদ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের তালিকা অনুযায়ী কারসাজির সঙ্গে জড়িত চালকলগুলোর জামানত বাজেয়াপ্তসহ কালো তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) জানিয়েছে, এবার আমন মৌসুমে ধানের আবাদ হয়েছে ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল এক কোটি ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার টন। সুনির্দিষ্ট উৎপাদনের তথ্য এখনো না এলেও সারাদেশে এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) প্রাথমিক তথ্য বলছে, এবছর আমনের উৎপাদন প্রায় এক কোটি ৬৩ লাখ টন চাল।
এত উৎপাদনের পরেও সরকারের ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থতাকে চালকল মালিকদের কারসাজি বলেও মনে করছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক। তারা বলছেন, দাম বাড়ানোর চাপে রাখতে সরকারের গুদামে চাল দিচ্ছেন না মিল মালিকরা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান জাগো নিউজকে বলেন, মিল মালিকরা বরাবরই সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেন, কিন্তু পরে চাল দেন না। তবে কখনো তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেজন্য তারা বেপরোয়া।
তিনি বলেন, তাদের কারণে বারবার বাজারে চাল সরবরাহে ভাটা পড়েছে। এতে চালের দাম আরও বাড়ছে। নিজেদের হাতে চালের মজুত রেখে দাম বাড়ানো তাদের প্রধান উদ্দেশ্য।
এদিকে কৃষক কেন সরকারকে ধান দেয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে নওগাঁ কোলা গ্রামের সাজ্জাদুল নামে একজন বলেন, সরকারের গুদামে চালের দাম মাত্র ২৮ টাকা। অর্থাৎ, মণ হাজার টাকার কিছু বেশি পড়ে। কিন্তু এবার জ্বালানি তেলের দামের কারণে জমিতে সেচের খরচ বেশি। অন্যদিকে সার, বীজ, কীটনাশকের দামও বেড়েছে। তাতে এ দামে পোষায় না।
আরেক কৃষক জামাল মিয়া বলেন, সরকারি গুদামে চাল দিতে অনেক ঝামেলা হয়। পরিবহন খরচ বেশি। এছাড়া অ্যাপসের মাধ্যমে ধান বেচতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। অ্যাপস আমরা বুঝি না। অন্যদিকে ধান বিক্রির পর কৃষকের ব্যাংক হিসাবে দেওয়া হয় টাকা। এত ঝামেলা করার কী দরকার!
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়