রডের বাজার ফের চড়া, টন ছাড়ালো ৯৪ হাজার

নির্মাণশিল্পের অন্যতম অপরিহার্য উপকরণ রডের দাম ফের বাড়ছে। মাঝে কিছুদিন টনপ্রতি দু-তিন হাজার টাকা কম ছিল। এক সপ্তাহ ধরে আবার ঊর্ধ্বমুখী দাম। এক টন ভালো মানের রডের দাম ছাড়িয়েছে ৯৪ হাজার টাকা। তবে বেশি বেড়েছে সাধারণ মানের রডের দাম। এই মানের ৭৮-৭৯ হাজার টাকার রড বিক্রি হচ্ছে ৮৩-৮৪ হাজারে। একই সঙ্গে বেড়েছে লোহার অ্যাঙ্গেল, গ্রিল, রেলিংয়ের দামও।

রাজধানীর পুরান ঢাকার খুচরা বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা যায়।

চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বাড়ির কাজ ধরেন আহমেদসহ তিন ভাই। শনিবার (২১ জানুয়রি) পুরান ঢাকার ইংলিশ রোডে রড কিনতে যান তারা। পরে জানতে পারেন সম্প্রতি রড-অ্যাঙ্গেল, এমএস-এর দাম টনপ্রতি বেড়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। এখন তার নির্ধারিত বাজেটের চেয়ে বেশি টাকায় তৈরি করতে হবে বাড়ি।

একই কথা জানান উত্তর শাহজাহানপুর এলাকার বাসিন্দা ইকবাল। তিনি বলেন, মনে করেছিলাম নতুন বছর সব কিছুর দাম স্বাভাবিক হবে। কিন্তু এখন আরও দাম বাড়ছে। লোন ছাড়াই বাড়ির স্বপ্ন আমাদের আর হবে না।

নির্মাণের অতিপ্রয়োজনীয় উপকরণ রডের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বিক্রেতারা বলছেন, এর আগে করোনার কারণে পণ্য আমদানিতে অসুবিধা ছিল, সেসময় দাম বেড়েছিল। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর দাম বাড়লো। এখন এলসির অজুহাতে আবারও দাম বাড়ানো হলো। উৎপাদন পর্যায়ে দাম বাড়ায় খুচরায়ও দাম বেড়েছে।

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের তথ্য বলছে, দুই বছরের ব্যবধানে রডের (প্রতি টন) দাম বেড়েছে ৩০ হাজার টাকা। ২০২০ সালে এক টন রোড ছিল ৬৪ হাজার টাকা, ২০২১ সালে ৬ হাজার টাকা বেড়ে ৭০ হাজার টাকা হয়েছিল। সদ্যবিদায়ী ২০২২ সালে কয়েক ধাপে ২৪ হাজার টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ৯৪ হাজার টাকায় ঠেকে। পরে কিছুটা কমে ভালো মানের রডের দাম ৯২ হাজার টাকায় আসে। দাম বেড়ে যায় সিমেন্ট, বালু, পাথর, ইট, থাই অ্যালুমিনিয়াম, গ্রিল ও রেলিং, জেনারেল ইলেকট্রিফিকেশন, স্যানিটেশন, টাইলস ও লেবার খরচ।

এতে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের দাম প্রতি স্কয়ার ফুটে ৫৪১ টাকা ৩৮ পয়সা বেড়েছে। দুই হাজার ফুট কনস্ট্রাকশনের ক্ষেত্রে এর মধ্যে শুধু রডের দাম বাড়ার কারণে ফ্ল্যাটের প্রতি স্কয়ার ফুটে নির্মাণ খরচ বেড়েছে ১২০ টাকা। একইভাবে সিমেন্টের কারণে ৪৪ টাকা, বালুর কারণে ২৩ টাকা, ইটের কারণে ৪০ টাকা, পাথরের কারণে ৬৭ টাকা ৫০ পয়সা, থাই অ্যালুমিনিয়ামের কারণে ৩৫ টাকা ও শ্রমিক খরচের কারণে বেড়েছে ৭০ টাকা পর্যন্ত।

পুরান ঢাকার বংশালের সোনার বাংলা আয়রন, ঢাকা আয়রন, ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ, মনির স্টিল, মেরাজ স্টিল ও সিরাজ অ্যান্ড সন্সসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, এক টন বিএসআরএম রড বিক্রি হচ্ছে ৯৪ থেকে সাড়ে ৯৪ হাজার টাকায়, দুই-তিন সপ্তাহ আগে সেটা ৯২ থেকে ৯৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়ে কেএসআরএমের রড বিক্রি হচ্ছে ৯৩ হাজার থেকে ৯৩ হাজার ৫শ টাকা, একেএস ৯২ থেকে ৯৩ হাজার, আরআরএম ৮৬ হাজার থেকে ৮৬ হাজার ৫শ টাকা, বন্দর স্টিল ৮৭ হাজার থেকে ৮৭ হাজার ৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সাধারণ রডের। বিভিন্ন সাধারণ মানের রড দু-তিন সপ্তাহ আগে যেটা টনপ্রতি ৭৮ থেকে ৭৯ হাজার টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেটা তিন থেকে চার হাজার টাকা বেড়ে ৮৩ থেকে ৮৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে দাম বেড়েছে টিউববার, রাউন্ড পাইপ, চেকার প্লেট ও ফলোবক্সের দাম।

মাসখানেক আগে ফলোবক্স এক লাখ ৩২ হাজার টাকা টনে বিক্রি হলেও এখন চার হাজার টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ৩৬ হাজার টাকায়। রাউন্ড পাইপের টনপ্রতি দাম পাঁচ হাজার টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ৩৬ হাজার টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে টিউববার। চেকার প্লেট দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকায়। দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেড়ে এমএস প্লেট বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ২২ হাজার ৫শ টাকায়।

ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ জাগো নিউজকে বলেন, এর আগে করোনার কারণে রডের কাঁচামাল জাহাজে করে আনতে পারছিলেন না উৎপাদকরা। এতে দাম বাড়িয়েছিলেন তারা। পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতে আরেক দফা দাম বেড়েছিল। এখন আবার এলসি খোলার সমস্যার কারণে কাঁচামাল আনতে পারছেন না। এতে দাম বাড়ানো হয়েছে, আমরা খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতা। দাম বাড়ানো হলে দাম বাড়ে, দাম কমলে কম দামেই বিক্রি করি।

দাম বাড়ায় রডের বিক্রিও কমে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। হাফিজুর নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি এক সপ্তাহ ধরে দোকান খুলে রেখেছি, কোনো বেচা-বিক্রি নেই। এভাবে ব্যবসা চলতে পারে না। দফায় দফায় দাম বাড়ার কারণে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। জমানো টাকায় সংসার চলছে। আমার জমানো টাকা আছে, যেটা দিয়ে পরিবার চালাতে পারছি। কিন্তু কুলি ও লেবারের অবস্থা করুণ। আমাদের এখানে যারা কুলির কাজ করেন তাদের কোনো আয় নেই প্রায় দুই সপ্তাহ।

রিহ্যাবের তথ্য আরও বলছে, গ্রিল ও রেলিংয়ের দামও বেড়েছে ৫৫ টাকা পর্যন্ত। ২০২০ সালে গ্রিল ও রেলিং প্রতি স্কয়ার ফুটের দাম ছিল ১০৫ টাকা, ২০২১ সালে ছিল ১২০ আর ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬০ টাকা। গ্রিল ও রেলিংয়ের দাম বাড়ার কারণে দুই হাজার ফুট কনস্ট্রাকশনে খরচ বেড়েছে সাড়ে ৭ টাকা।

রিহ্যাব সহ-সভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, নতুন ড্যাপের কারণে আবাসনের স্বপ্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সবার জন্য মানসম্মত আবাসন কঠিন হয়ে পড়ছে। আবার নতুন ড্যাপের প্রজ্ঞাপনের পর দীর্ঘ সময় জমির মালিকের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা কোনো চুক্তিতে যেতে পারছেন না। এখন বেশিরভাগ ভবন হবে চার-পাঁচতলা। এতে চলতি বছর আবাসন সংকট আরও বাড়বে। আবার নির্মাণসামগ্রীর দাম আকাশচুম্বি। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিতে নির্মাণ উপকরণের দাম কমাতে হবে, ড্যাপ নিয়েও ভাবতে হবে। এটা না হলে উচ্চহারে বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম এবং আকাশচুম্বি হবে বাড়িভাড়া। আবাসন খাতে শঙ্কা তৈরি হবে।
এই বিভাগের আরও খবর
ঈদের আগে দুই দফা বাড়তে পারে সয়াবিন তেলের দাম

ঈদের আগে দুই দফা বাড়তে পারে সয়াবিন তেলের দাম

জনকণ্ঠ
৫০%-এর বেশি আমদানি হচ্ছে আফ্রিকা থেকে

৫০%-এর বেশি আমদানি হচ্ছে আফ্রিকা থেকে

বণিক বার্তা
পেঁয়াজ রফতানিতে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা ভারতের

পেঁয়াজ রফতানিতে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা ভারতের

বাংলা ট্রিবিউন
এক্সিমের সঙ্গে একীভূত হলো পদ্মা ব্যাংক

এক্সিমের সঙ্গে একীভূত হলো পদ্মা ব্যাংক

যুগান্তর
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে উৎসে কর অর্ধেক

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে উৎসে কর অর্ধেক

প্রথমআলো
সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান - ইউরোপ আমেরিকা এশিয়ার ৫৫ কোম্পানিকে আমন্ত্রণ পেট্রোবাংলার

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান - ইউরোপ আমেরিকা এশিয়ার ৫৫ কোম্পানিকে আমন্ত্রণ পেট্রোবাংলার

বণিক বার্তা
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়