পবিত্র রমজান মাসে সারা দিনের রোজা শেষে আমরা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ইফতারে শামিল হই। মুসলিমদের কাছে এ মাসটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। আমাদের উপমহাদেশীয় সংস্কৃতিতে এ সময় উচ্চ ক্যালরির খাবার গ্রহণের চর্চা হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে, তাছাড়া অন্যান্য সময়ের তুলনায় শারীরিক কসরতও কম হয়ে থাকে এ মাসে। তবে যারা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ব্যাপারে সচেতন তারা এসময় একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যাভ্যাস চর্চার মাধ্যমে দারুণভাবে উপকৃত হতে পারেন। বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটাও দেখা গেছে কিছু সহজ নির্দেশনা মেনে চলার মাধ্যমে এসময় ওজন কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপ ও শরীরে কোলস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
শরীরে রোজার প্রভাব
শরীরের শক্তির মূল উৎস গ্লুকোজ, যা মূলত আমরা কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা থেকে পেয়ে থাকি। গ্লুকোজ আমাদের মস্তিষ্ক, পেশি ও কোষে কর্মশক্তি জোগায় এবং অবশিষ্ট গ্লুকোজ যকৃৎ ও পেশিতে চর্বি আকারে জমা থাকে। সর্বশেষ খাবার গ্রহণের ৮ ঘণ্টা পর থেকে শরীরে ফাস্টিং (রোজা) মোড চালু হয়ে যায়। এ সময় শরীরের সঞ্চিত গ্লুকোজ যখন শেষ হয়ে আসে শরীর তখন শক্তির জন্য চর্বি গলানো শুরু করে, যার ফলস্বরূপ ওজন কমতে শুরু করে। এখানে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো রোজা অবস্থায় শরীর কিন্তু পানি সঞ্চিত রাখতে পারে না। ফলে এ সময় যে পরিমাণ পানি শরীর থেকে চলে গেছে কিডনি তা ধরে রাখার চেষ্টা করে। রোজা রাখা অবস্থায় শরীরকে অবসাদ ও পানিশূন্যতা মুক্ত রাখতে হলে ইফতার ও সাহরির মধ্যকার সময়ে সুষম পুষ্টি ও পর্যাপ্ত পানি গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
সাহরি ও ইফতারে যা খাওয়া যেতে পারে
ইফতার ও সাহরির খাবারে খাদ্যের সব গ্রুপ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে :
- দীর্ঘ সময়ের জন্য শক্তি পেতে জটিল শর্করা গ্রহণ (হোল গ্রেইনস-ওটস, বার্লি, লাল রুটি ও চাল, ফলমূল ও শাকসবজি, ডাল)
- প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পেতে এবং পানিশূন্যতা রোধে রসালো ফল ও আঁশযুক্ত সবজি (যেমন- তরমুজ, শসা, টমেটো, লেটুস) খাওয়া
- ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লেভিন ও আয়োডিনের জন্য কম চর্বিযুক্ত ডেইরি পণ্য (টক দই, লো-ফ্যাট বা কম চর্বি যুক্ত দুধ)
- পেশিশক্তি নিশ্চিত করতে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ)
- পুষ্টি চাহিদা পূরণে স্বল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর চর্বি (অলিভ অয়েল, বাদাম, বিভিন্ন বীজ)
সাহরি প্রয়োজনীয় পুষ্টিসমৃদ্ধ হালকা খাবার খাওয়া উচিত। দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরা রাখতে ও পানিশূন্যতা থেকে মুক্ত থাকতে হোল গ্রেইন ও তরল খাবারকে প্রাধান্য দিতে হবে।
ইফতার ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ১-২টা খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, খেজুর আঁশ, পটাসিয়াম ও ক্যালরির অনন্য উৎস। ইফতারে ধীরে খাবার গ্রহণ করা উচিত, তাড়াহুড়ো করে খেতে গেলে বুক জ্বালা-পোড়া ও বমিভাব হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
পর্যাপ্ত পানি পান কোষ্ঠকাঠিন্য ও পানিশূন্যতা রোধে ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত সময়ে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই লিটার পানীয় বা তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে। পানি খাওয়ার সময়ও তাড়াহুড়ো করা যাবে না, কেননা দ্রুত পানি খেতে গেলে বমিভাব হতে পারে। পানি কোনোরকম ক্যালরিযুক্ত করা ছাড়াই শরীরকে সতেজ রাখে। দুধ এবং রসালো ফলসমূহ চিনি ছাড়া খেতে পারাই উত্তম।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উত্তম লবণ, মশলা ও টক লবণাক্ত ও ঝাল খাবার (বিভিন্ন আচার, জলপাই/টক ফল, ভাজাপোড়া) এড়িয়ে চলা উচিত, কেননা এসব খাবার শরীরের পানি শোষণ করে নেয়, অ্যাসিডিটি ও পিপাসা বাড়িয়ে দেয়।
চিনি, প্রক্রিয়াজাত ও ডুবো তেলে ভাজা খাবার- এসব খাবারের পুষ্টিগুণ কম, ওজন বাড়ায়, বদহজম হয় এবং পিপাসার্ত করে তোলে।
ক্যাফেইন- চা এবং কফিতে ক্যাফেইন থাকায় তা শরীর থেকে দ্রুত পানি নির্গত করে দেয়।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়