ব্যবসায়িক প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক হিসাবমান ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাধ্যবাধকতা পরিপালনের জন্য কোম্পানিগুলোকে রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হয়। যে কোম্পানির রিজার্ভ যত বেশি আর্থিক ভিতও তত শক্তিশালী। কভিড-১৯-এর অভিঘাত মোকাবেলা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত আপত্কালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে কোম্পানিগুলোর রিজার্ভের অর্থ আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এ দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ ও বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেড।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর রিজার্ভ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে বণিক বার্তা। এতে দেখা যায়, শীর্ষ ১০ কোম্পানির কাছে এ বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে মোট ৫৫ হাজার ১৯১ কোটি ৫৬ লাখ টাকার রিজার্ভ রয়েছে। এর মধ্যে ৯ হাজার ৭৯৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকার সঞ্চিত অর্থ নিয়ে সবার শীর্ষে ওষুধ খাতের কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। জেনারেল, ফেয়ার ভ্যালু, ট্রান্সলেশন ও রিটেইন্ড আর্নিংস (সংরক্ষিত আয়) হিসেবে এ অর্থ রয়েছে কোম্পানিটির কাছে।
এ বিষয়ে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের হিসাব ও অর্থ বিভাগের প্রধান মো. কবীর রেজা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের যে রিজার্ভ আছে তার অর্ধেকই নগদ অর্থ হিসেবে ব্যাংকে আমানত রাখা। বাকিটা এরই মধ্যে বিনিয়োগ করা হয়েছে। রিজার্ভের এ অর্থ আমরা ব্যবসার প্রয়োজনে যখন ইচ্ছা তখন কাজে লাগাতে পারছি। আমাদের কাছে উদ্বৃত্ত এ অর্থ না থাকলে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হতো এবং এতে আমাদের খরচও বেড়ে যেত। তাছাড়া রিজার্ভের এ অর্থ থেকে আমরা প্রতি বছর বিনিয়োগকারীদের জন্যও উল্লেখযোগ্য হারে লভ্যাংশ দিতে পারছি।’
দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিকস ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদক ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ রিজার্ভের দিক দিয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে কোম্পানিটির এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৩৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। রিটেইন্ড আর্নিংস ও রিভ্যালুয়েশন রিজার্ভ হিসেবে এ অর্থ সংরক্ষণ করেছে কোম্পানিটি।
বেক্সিমকো লিমিটেডের কাছে এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ৭ হাজার ৪৮৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা সঞ্চিত অর্থ ছিল। রিজার্ভ ও রিটেইন্ড আর্নিংস হিসেবে এ অর্থ সংরক্ষণ করেছে কোম্পানিটি। রাষ্ট্রায়ত্ত তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির রিজার্ভের পরিমাণ এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ৬ হাজার ১২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। রিজার্ভ ফান্ড ও রেভিনিউ রিজার্ভ হিসেবে কোম্পানিটি এ অর্থ সংরক্ষণ করেছে।
বেসরকারি খাতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের কাছে এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ৫ হাজার ১৯৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকার রিজার্ভ ছিল। স্ট্যাটুটরি, আদার রিজার্ভ ও রিটেইন্ড আর্নিংস হিসেবে এ অর্থ সংরক্ষণ করেছে ব্যাংকটি। এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্র্যাক ব্যাংকের এ ভাণ্ডারের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা। স্ট্যাটুটরি, রিভ্যালুয়েশন, ফেয়ার ভ্যালু, ট্রান্সলেশন রিজার্ভ ও রিটেইন্ড আর্নিংস হিসেবে এ অর্থ সংরক্ষণ করেছে ব্যাংকটি।
তামাক খাতের বহুজাতিক জায়ান্ট ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি) এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি ১৯ লাখ টাকার রিজার্ভ সংরক্ষণ করেছে। ক্যাপিটাল রিজার্ভ ও রিটেইন্ড আর্নিংস হিসেবে এ অর্থ সংরক্ষণ করেছে কোম্পানিটি। ইস্পাত খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) লিমিটেডের রিজার্ভের পরিমাণ এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ৩ হাজার ৩৩৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। জেনারেল, রিভ্যালুয়েশন, ফেয়ার ভ্যালু, ট্রান্সলেশন রিজার্ভ ও রিটেইন্ড আর্নিংস হিসেবে এ অর্থ সংরক্ষণ করেছে কোম্পানিটি।
পূবালী ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল সেপ্টেম্বর শেষে ৩ হাজার ২৩১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। স্ট্যাটুটরি, আদার রিজার্ভ ও রিটেইন্ড আর্নিং হিসেবে ব্যাংকটি এ অর্থ সংরক্ষণ করেছে। রিজার্ভ যেকোনো ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতার নির্দেশক হিসেবে কাজ করে বলে মনে করেন পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আলী। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশের ব্যাংকগুলো নগদ লভ্যাংশের পরিবর্তে স্টক ডিভিডেন্ড বেশি দেয়। এ কারণে ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ে। কিন্তু বাংলাদেশের শেয়ারহোল্ডাররা নগদ লভ্যাংশই বেশি চান। নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হলে ব্যাংকের মুনাফার অর্থ বের হয়ে যায়। ফলে রিজার্ভের পরিমাণ খুব বেশি বাড়ে না। তবে দেশের প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে পূবালীর মূলধন কাঠামো ও রিজার্ভ যথেষ্ট শক্তিশালী।’
মোহাম্মদ আলী আরো বলেন, ‘ব্যাংকের ক্ষেত্রে রিজার্ভের সঙ্গে মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাতের (সিএআর) নিবিড় সম্পর্ক আছে। ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী দেশের ব্যাংকগুলোকে ন্যূনতম ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে সিএআর সংরক্ষণ করতে হয়। এটি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকার পরও যদি কোনো ব্যাংকের ঋণ বিতরণ পরিস্থিতি ভালো না হয়, তাহলে সেটি দুর্যোগের সময় টিকে থাকতে পারবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর সিএআর ১৫ শতাংশ থাকা উচিত। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সিএআরের হার ১৭-১৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। পূবালী ব্যাংক সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছে।’
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের রিজার্ভ এ বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ৩ হাজার ১১০ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। স্ট্যাটুটরি, রিভ্যালুয়েশন রিজার্ভ ও রিটেইন্ড আর্নিংস হিসেবে এ অর্থ সংরক্ষণ করেছে ব্যাংকটি।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়