মাথাপিছু আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে বেশ এগিয়ে আছে শ্রীলংকা। তবে গৃহযুদ্ধের ক্ষত, উন্নয়ন প্রকল্পে সীমাতিরিক্ত বৈদেশিক ঋণসহ নানা কারণে এ মুহূর্তে বেশ চাপে আছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটির অর্থনীতি। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও নেমে এসেছে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। এ অবস্থায় ডলার ধার দিয়ে শ্রীলংকার প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলংকার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এরই মধ্যে সমঝোতা স্মারকটির খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে।
সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষর হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার ধার দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ধারের জন্য ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে লাইবরের (লন্ডন আন্তঃব্যাংক সুদের হার) সঙ্গে অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদ যুক্ত করে শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করবে। তিন মাসের বেশি সময়ের জন্য দিতে হবে লাইবরের সঙ্গে অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ সুদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনিয়োগের বিপরীতে গ্যারান্টি দেবে শ্রীলংকার সরকার ও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ২০ কোটি ডলার সমমূল্যের শ্রীলংকান রুপি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে লিয়েন হিসেবে জমা থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে শ্রীলংকা থেকে বাংলাদেশে রফতানীকৃত পণ্যের মূল্য স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করবে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলংকা।
২৩ মে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৪১৪তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার ৫ নং আলোচ্যসূচি ছিল সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলংকার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বিপক্ষীয় কারেন্সি সোয়াপ সুবিধা প্রদান-সংক্রান্ত। পর্ষদের ওই সভায় উত্থাপিত এ-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়াটি পাস হয়েছে। পর্ষদ সভার সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, শ্রীলংকা সরকার ও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে কারেন্সি সোয়াপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষর হলে সেটি হবে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন। এটি হবে কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কারেন্সি সোয়াপের প্রথম ঘটনা। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৪৫ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। রিজার্ভের এ অর্থ থেকে শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ২০ কোটি ডলার ধার দেয়া হবে। বিপরীতে দেশটির সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যারান্টার হবে। সব দিক বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বিনিয়োগ বেশ নিরাপদ।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। নিজ নিজ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল শেষে ভারতের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৫৩৬ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছিল বাংলাদেশের রিজার্ভ। আর পাকিস্তানের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৬ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে নেপালের রিজার্ভ উন্নীত হয়েছিল ১১ বিলিয়ন ডলারে।
অর্থনীতির আকারের তুলনায় রিজার্ভ সক্ষমতার দিক থেকে দুর্বল অবস্থানে আছে শ্রীলংকা। দেশটির বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলার। শ্রীলংকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২০১৮ সালের এপ্রিলে। সে সময়ও দেশটির রিজার্ভের পরিমাণ ছিল মাত্র ৯ বিলিয়ন ডলার।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নাজুক পরিস্থিতি কাটাতে অনেক আগে থেকে ভারতের সঙ্গে কারেন্সি সোয়াপ করে আসছে শ্রীলংকা। এ মুহূর্তে ভারতের সঙ্গে শ্রীলংকার কারেন্সি সোয়াপের পরিমাণ ৪০ কোটি ডলার। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এ কারেন্সি সোয়াপের মেয়াদ রয়েছে। তবে শ্রীলংকার সবচেয়ে বেশি কারেন্সি সোয়াপ রয়েছে বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনের সঙ্গে। গত মার্চে চীনের সঙ্গে দেড় বিলিয়ন ডলার বা ১০ বিলিয়ন চাইনিজ ইয়েন সোয়াপ করার চুক্তি হয়েছে। শ্রীলংকার ভৌত অবকাঠামো খাতে নির্মাণ ও উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ করেছে চীন।
বৈদেশিক মুদ্রার দিক থেকে অতি দুর্বল দেশের পাশে দাঁড়ানোর অংশ হিসেবে কারেন্সি সোয়াপ করা হয় বলে জানান অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এ নির্বাহী পরিচালক বণিক বার্তাকে বলেন, দীর্ঘকালীন গৃহযুদ্ধ ও বৈদেশিক ঋণের ভারসাম্যহীনতার কারণে ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি থেকে শ্রীলংকা বেরোতে পারছে না। এ কারণে দেশটির বৈদেশিক রিজার্ভের পরিস্থিতি খুব দুর্বল। অনেকটা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার অংশ হিসেবে শ্রীলংকার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক কারেন্সি সোয়াপ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিনিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদ হিসেবে বাড়তি আয় করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে ঝুঁকিও আছে।
আহসান এইচ মনসুরের ভাষ্য হলো, মাথাপিছু আয়, উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাসহ সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ থেকে শ্রীলংকা বেশ এগিয়ে। তবে দেশটির জনগণের মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণ অনেক বেশি। একই সঙ্গে চীনের কাছ থেকে নেয়া বড় বড় ঋণ শ্রীলংকার অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়