চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর শুরুর আগেই বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। সংক্রমণ প্রতিরোধে মার্চের শেষে শুরু হওয়া সাধারণ ছুটি ও আন্তর্জাতিক বাজারগুলোতে লকডাউনের প্রভাবে এপ্রিলেই বাংলাদেশের রফতানি তলানিতে গিয়ে ঠেকে। জুন-পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিক ধারার দিকে হাঁটতে শুরু করে রফতানি। কিন্তু ততদিনে যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে গেছে। চলতি অর্থবছর শেষ হতে বাকি আছে মাত্র ২৫ দিন। এ সময়ে রফতানি লক্ষ্যপূরণে প্রয়োজন হবে ৫১৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতি মাসে নিয়মিত রফতানির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। ১১ মাসের পরিসংখ্যান নিয়ে সর্বশেষ সংস্করণে দেখা যাচ্ছে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাসে রফতানি হয়েছে ৩ হাজার ৫১৮ কোটি ৮ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয় ৩ হাজার ৯৫ কোটি ৯১ লাখ ৪০ হাজার ডলারের। এ হিসেবে ১১ মাসে রফতানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের ১২ মাসে মোট ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি লক্ষ্য। ১১ মাসে রফতানি হয়েছে ৩ হাজার ৫১৮ কোটি ডলারের। এ হিসেবেই লক্ষ্যপূরণে বাকি এক মাসে ৫১৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হতে হবে। এরই মধ্যে ১১ মাসের রফতানি লক্ষ্যও ছুঁতে পারেননি রফতানিকারকরা। ১১ মাসে লক্ষ্যের চেয়ে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ কম রফতানি করেছেন তারা। সার্বিক হিসেবে বাকি ২৫ দিনে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হবে না বলেই জানিয়েছেন তারা।
ইপিবি প্রকাশিত পরিসংখ্যানে একক মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত মে মাসে রফতানি হয়েছে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য। ২০২০ সালের মে মাসে রফতানি হয়েছিল ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের পণ্য। এ হিসেবে মে মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বা বেড়েছে ১১২ দশমিক ১১ শতাংশ। যদিও মে মাসের কৌশলগত লক্ষ্যের তুলনায় রফতানি কমেছে ১৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী পাট ও পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, রাসায়নিক পণ্য, প্লাস্টিক পণ্যের রফতানি বেড়েছে অর্থবছরের ১১ মাসে। এ সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ২ হাজার ৮৫৬ কোটি ডলারের, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি। ১১ মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে ১০৮ কোটি ডলারের, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৩৩ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। ৮৪ কোটি ৬০ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে রফতানীকৃত পণ্যের ৮৫ শতাংশই তৈরি পোশাক। এ বিবেচনায় পোশাক পণ্যের রফতানি হ্রাস বা বৃদ্ধির বড় প্রতিফলন দেখা যায় মোট রফতানিতে। সংশ্লিষ্টদের দাবি, আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে করোনায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তাদের মতে, কভিডের প্রভাবে ক্ষতি আরো বেশি হতে পারত। কিন্তু কারখানা সচল রাখা ও সরকারি প্রণোদনার মতো কার্যকর সিদ্ধান্তের কারণে এ ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। যদিও রফতানির আন্তর্জাতিক গন্তব্যগুলোর কোথাও কোথাও তৃতীয় ও দেশের করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণপ্রবাহের কারণে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
করোনার সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয় চীনের উহানে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এর আগে থেকেই বৈশ্বিক পোশাক খাতে ভঙ্গুরতা দেখা যাচ্ছিল। ব্যবসা সংকোচনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মানসিকতায় ছিল ছোট-বড় ক্রেতাদের অনেকেই। ফলে অনেক খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র ছিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। করোনার প্রভাবে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা আরো দুর্দশায় পড়ে যান। সংক্রমণ প্রতিরোধে অবরুদ্ধতার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখতে হয় বিক্রয়কেন্দ্র। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও পোশাক রফতানিকারকদের ক্রয়াদেশ বাতিল হয় একের পর এক।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর হিসাব বলছে, কভিডের প্রথম সংক্রমণপ্রবাহের কারণে গত বছরের এপ্রিলের মধ্যেই প্রায় সোয়া ৩ বিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক রফতানির বাজারগুলোয় ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলার লড়াই এখনো চলছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে তৃতীয় সংক্রমণপ্রবাহের প্রভাব। বর্তমানে ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল না করলেও পণ্য জাহাজীকরণের সময় পিছিয়ে দিচ্ছেন। রফতানির বিপরীতে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপরিশোধিত রয়ে যাচ্ছে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়