শীর্ষে ইবিএল, অনুক্রমে ব্র্যাক ডাচ্-বাংলা, সিটি ও প্রিমিয়ার

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংক নিয়ে ২০১৩ সালে প্রথম সেরা ব্যাংক নির্বাচন করে বণিক বার্তা। তার পর থেকেই প্রতি বছর এ র‍্যাংকিং প্রকাশ করা হচ্ছে। ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এবার ৩৫টি ব্যাংক নিয়ে দশম র‍্যাংকিং তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুসরণ করে সাতটি নির্দেশক স্কোরিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর আর্থিক কার্যক্রমের মূল্যায়ন করা হয়েছে।

সুদ আয়ের বাইরে দেশের ব্যাংকগুলোর মুনাফার বড় অংশ আসছে বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে। ডলার সংকটের কারণে ২০২২ সালে এ খাত থেকে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমেছে। বিপর্যস্ত পুঁজিবাজার থেকেও প্রত্যাশা অনুযায়ী মুনাফা করতে পারেনি ব্যাংক। আবার তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর তহবিল সংগ্রহের ব্যয়ও বেশ বেড়েছে। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা অর্থনৈতিক সংকটের চাপ সামলাতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। এর মধ্যেও গত বছর প্রত্যাশার চেয়েও ভালো করেছে দেশের কিছু ব্যাংক। আবার ভালো অবস্থানে থাকা কিছু ব্যাংক র‍্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫টি ব্যাংকের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে করা বণিক বার্তার র‍্যাংকিং থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর র‌্যাংকিং করেছে বণিক বার্তা। ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছরই নিয়মিতভাবে এ র‌্যাংকিং প্রকাশ করা হচ্ছে। গত বছর পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংক নিয়ে এ র‌্যাংকিং করা হয়। তবে এবারের র‌্যাংকিংয়ে গত তিন বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এনআরবিসি, মিডল্যান্ড, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে প্রতিবেদনে ২০২১ সালের র‌্যাংকিংয়ের সঙ্গে ২০২২ সালের র‌্যাংকিয়ে ব্যাংকগুলোর উন্নতি-অবনতি এবং প্রাপ্ত নম্বর হ্রাস-বৃদ্ধির বিষয়টি তুলনা করার সময় ৩০টি ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিভিন্ন করপোরেট রিসার্চ টিমের সহায়তায় ১১তম বারের মতো এটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সাত নির্দেশকের ভিত্তিতে তৈরি করা এবারের র‌্যাংকিংয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫টি ব্যাংকের মধ্যে ১৬টির প্রাপ্ত স্কোর বেড়েছে। কমেছে ১৪টি ব্যাংকের। গত বছরের র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থানে থাকা ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) এবারো শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। গতবার ষষ্ঠ স্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড এবার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। গতবারের মতো এবারো তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। শীর্ষ তিন ব্যাংকের মধ্যে ইবিএল ৩৬ দশমিক ৫৭, ব্র্যাক ৩৪ দশমিক ৪১ এবং ডাচ্-বাংলা ৩৩ দশমিক ৮৭ নম্বর পেয়েছে। শীর্ষ দশে থাকা বাকি ব্যাংকগুলো হচ্ছে দ্য সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।

গোটা বিশ্বেই একটি ব্যাংকের সক্ষমতা, পারফরম্যান্স ও প্রকৃত পরিস্থিতির চিত্র বিশ্লেষণে নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড বা নির্দেশক ব্যবহার করা হয়। এগুলো হচ্ছে সম্পদের বিপরীতে আয় (রিটার্ন অন অ্যাসেট বা আরওএ), শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানার বিপরীতে আয় (রিটার্ন অন ইকুইটি বা আরওই), শ্রেণীকৃত ঋণ (এনপিএল) অনুপাত, কর-পরবর্তী নিট মুনাফা, শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস), মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত (ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি রেশিও বা সিএআর) ও শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফা (ওপিবি)। 

র‌্যাংকিংয়ে আরওএর ক্ষেত্রে শীর্ষ মান নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শতাংশ। একইভাবে আরওইর ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ, এনপিএলের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ, সিএআরের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ, নিট মুনাফার ক্ষেত্রে ১ হাজার কোটি, এনএভিপিএসের ক্ষেত্রে ১০০ এবং ওপিবির ক্ষেত্রে ১০ কোটি টাকাকে শীর্ষমান হিসেবে ধরা হয়েছে। আর প্রতিটি নির্দেশকের সর্বোচ্চ নম্বর ধরা হয়েছে ১০। এক্ষেত্রে সাত নির্দেশকের মোট নম্বর ৭০ এবং পাঁচ নির্দেশকের মোট নম্বর ৫০। 

লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক মো. মোস্তফা নোমান এ র‌্যাংকিং তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে ঋণের সুদের হার তুলে দেয়ার মাধ্যমে দেশের ব্যাংক খাত একটি নতুন ধাপে প্রবেশ করেছে। এ হার প্রত্যাহারের ফলে ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ পোর্টফোলিও সম্প্রসারণ করবে এবং তাদের নিট সুদের মার্জিনও বাড়বে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও ২০২২ সাল শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ঋণের সুদহার সীমা তুলে নেয়ার সুফল পেতে হলে ব্যাংকগুলোকে তাদের সম্পদের পোর্টফোলিও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হতে হবে।’

নিট মুনাফা ও এনএভিপিএস বাদে পাঁচটি নির্দেশকের ভিত্তিতে করা এবারের র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষ তিনের মধ্যে রয়েছে ইবিএল, প্রিমিয়ার ও দ্য সিটি ব্যাংক। গত বছর প্রকাশিত র‌্যাংকিংয়ে এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ইবিএল, দ্য সিটি ও ট্রাস্ট ব্যাংক। এবারের র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষ দশে থাকা বাকি ব্যাংকগুলো হচ্ছে ট্রাস্ট, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক, প্রাইম, শাহ্জালাল ইসলামী, ডাচ্-বাংলা ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড।

দুই বছরের র‌্যাংকিং উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গতবারের তুলনায় এবারের র‌্যাংকিংয়ে সার্বিক স্কোর বেড়েছে ১৬টি ব্যাংকের। এগুলো হলো ইবিএল, ব্র্যাক, প্রিমিয়ার, ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম, পূবালী, ইসলামী ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী, এক্সিম, উত্তরা, আইএফআইসি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ওয়ান, স্ট্যান্ডার্ড ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। অন্যদিকে স্কোর হ্রাস পাওয়া ১৪ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে ডাচ্-বাংলা, দ্য সিটি, ট্রাস্ট, এমটিবি, এনসিসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ঢাকা, মার্কেন্টাইল, সাউথইস্ট, যমুনা, আল-আরাফাহ্ ইসলামী, এবি, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল) ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।

২০২২ সালের সেরা ব্যাংকের র‌্যাংকিংয়ে এর আগের বছরের তুলনায় নয়টি ব্যাংকের র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি হয়েছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ষষ্ঠ থেকে দ্বিতীয়, ব্যাংক এশিয়া অষ্টম থেকে ষষ্ঠ, পূবালী ১২তম থেকে নবম, ইসলামী ব্যাংক ১৩তম থেকে দশম, শাহ্জালাল ইসলামী ১৬তম থেকে ১১তম, এক্সিম ব্যাংক ২২তম থেকে ১৩তম, উত্তরা ১৯তম থেকে ১৫তম, আইএফআইসি ২৩তম থেকে ১৭তম ও ইউসিবি গতবারের ২০তম অবস্থান থেকে এবার ১৮তম অবস্থানে উঠে এসেছে।

অন্যদিকে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের র‌্যাংকিংয়ে ১৮টি ব্যাংকের অবনমন হয়েছে। এর মধ্যে দ্য সিটি দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ, ট্রাস্ট চতুর্থ থেকে সপ্তম, প্রাইম সপ্তম থেকে অষ্টম, এমটিবি দশম থেকে ১২তম, এনসিসি ১১তম থেকে ১৪তম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ১৭তম থেকে ১৯তম, ঢাকা ব্যাংক ১৪তম থেকে ২০তম, মার্কেন্টাইল নবম থেকে ২১তম, সাউথইস্ট ১৮তম থেকে ২২তম, যমুনা ১৫তম থেকে ২৩তম, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ২১তম থেকে ২৫তম, এসআইবিএল ২৪তম থেকে ২৭তম, ওয়ান ব্যাংক ২৬তম থেকে ২৯তম, এবি ব্যাংক ২৫তম থেকে ৩০তম, স্ট্যান্ডার্ড ২৭তম থেকে ৩২তম, রূপালী ২৯তম থেকে ৩৩তম, এনবিএল ২৮তম থেকে ৩৪তম এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক গতবারের ৩০তম থেকে এবার ৩৫তম অবস্থানে নেমে গেছে। 

এবারের র‌্যাংকিংয়ে গতবারের মতো একই অবস্থান ধরে রেখেছে তিন ব্যাংক। এর মধ্যে ইবিএল প্রথম, ডাচ্-বাংলা তৃতীয় এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক পঞ্চম অবস্থান ধরে রেখেছে। এদিকে প্রথমবারের মতো র‌্যাংকিংয়ে যুক্ত হওয়া নতুন তালিকাভুক্ত পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এনআরবিসি ১৬তম, মিডল্যান্ড ২৪তম, ইউনিয়ন ২৬তম, গ্লোবাল ইসলামী ২৮তম এবং এসবিএসি ব্যাংক ৩১তম অবস্থান অর্জন করেছে। 

২০২১ সালের মতোই এবারের র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে ইস্টার্ন ব্যাংক। পাশাপাশি এবার ব্যাংকটির প্রাপ্ত স্কোর বেড়েছে। সাত নির্দেশকে ইস্টার্ন ব্যাংকের এবারের স্কোর ৩৬ দশমিক ৫৭। আর পাঁচ নির্দেশকে ব্যাংকটি ২৮ দশমিক ১২ স্কোর পেয়েছে। ২০২১ সালে এ দুটি নির্দেশকে ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রাপ্ত নম্বর ছিল যথাক্রমে ৩৫ দশমিক ৬৫ ও ২৭ দশমিক ৫৪। ব্যাংকটির সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হলো শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফা। দেশব্যাপী মাত্র ৮৩টি শাখার মাধ্যমে ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড। দ্য সিটি ব্যাংক রয়েছে তৃতীয় স্থানে। আরওএ, আরওই, নিট মুনাফায়ও ভালো অবস্থানে রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক। তবে ব্যাংকটির সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো সিএআর ও শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি)।

টানা তিন বছর র‌্যাংকিংয়ে অবনমনের পর এবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। ৭০ ও ৫০ এ দুটি স্কেলেই ব্যাংকটির উন্নতি হয়েছে। সাত নির্দেশকভিত্তিক র‌্যাংকিংয়ে আগেরবার ষষ্ঠ স্থানে নেমে যাওয়া ব্র্যাক ব্যাংক এবার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। পাঁচটি নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির এবারের অবস্থান ষষ্ঠ। ২০২১ সালে ব্র্যাক ব্যাংক এ র‌্যাংকিংয়ে ১৪তম স্থানে নেমে গিয়েছিল। র‌্যাংকিংয়ে উন্নতির পাশাপাশি ব্যাংকটির এবার প্রাপ্ত স্কোর বেড়েছে। সাত নির্দেশকে ৩৪ দশমিক ৪১ ও পাঁচ নির্দেশকে ২৪ দশমিক ২০ নম্বর পেয়েছে ব্যাংকটি। 

ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বিকাশ। দেশের বৃহত্তম এ এমএফএস প্রতিষ্ঠানটির জন্য বাড়তি সিএআর সংরক্ষণ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। এ কারণে ব্যাংকটির সমন্বিত সিএআর দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। মূলত এ নির্দেশকে শীর্ষস্থান প্রাপ্তি ব্র্যাক ব্যাংকের র‌্যাংকিংয়ের উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে। তবে ২০২২ সাল শেষে শুধু ব্র্যাক ব্যাংকের সিএআর ১৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, যা ব্যাংকটির দুর্বলতারই নির্দেশক। গত বছর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬১২ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। ২০২১ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের নিট মুনাফা ছিল ৪৬৫ কোটি টাকা। শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ও নিট মুনাফায় ভালো অবস্থানে থাকলেও ব্র্যাক ব্যাংকের দুর্বলতা হলো আরওই, খেলাপি ঋণ ও শাখা প্রতি মুনাফা।

ইস্টার্ন ব্যাংককে পেছনে ফেলে ২০২০ সালে দেশসেরা ব্যাংক হয়েছিল ডাচ্-বাংলা। কিন্তু ২০২১ সালে ৭০ স্কেলের র‌্যাংকিংয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে যায় ব্যাংকটি। আর ৫০-এর স্কেলে ডাচ্-বাংলার অবস্থান নেমে যায় পঞ্চম স্থানে। এবার সাত নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়ে নিজের তৃতীয় স্থান ধরে রাখতে পেরেছে ডাচ্-বাংলা। তবে পাঁচ নির্দেশকে ব্যাংকটির র‌্যাংকিং আরো অবনমন হয়ে নবম স্থানে নেমে গেছে। দুটি নির্দেশকেই ডাচ্-বাংলার প্রাপ্ত স্কোর কমেছে। ২০২১ সালে দুটি স্কেলে ব্যাংকটির প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৩৫ দশমিক ১৫ ও ২৩ দশমিক ৭৪। ২০২২ সালে ব্যাংকটি যথাক্রমে ৩৩ দশমিক ৮৭ ও ২২ দশমিক ২২ নম্বর পেয়েছে।

শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্যের দিক থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অবস্থান শীর্ষস্থানে। আর সর্বোচ্চ নিট মুনাফার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। তবে খারাপ করেছে শাখাপ্রতি মুনাফা, খেলাপি ঋণ, সিএআরে। ডাচ্-বাংলার শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফা ৫ কোটি ১৯ লাখ, যা প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাংকগুলোর তুলনায় খুবই কম। আর সিএআরের হার ১৫ দশমিক ৫৫ ও খেলাপি ঋণের হার ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।

টানা তিন বছর ধরে র‌্যাংকিংয়ে উন্নতির ধারাবাহিকতা ছিল দ্য সিটি ব্যাংকের। ২০২১ সালে ৭০ ও ৫০ উভয় স্কেলে দেশসেরা ব্যাংকের দ্বিতীয় স্থান দখলে নিয়েছিল ব্যাংকটি। তবে এবার সিটি ব্যাংকের র‌্যাংকিংয়ে অবনমন হয়েছে। এবার সাত নির্দেশকে সিটি ব্যাংকের অবস্থান চতুর্থ। আর পাঁচ নির্দেশকে ব্যাংকটি তৃতীয় স্থানে নেমেছে। র‌্যাংকিংয়ে অবনমনের পাশাপাশি প্রাপ্ত স্কোরও কমেছে সিটি ব্যাংকের। 

২০২১ সালে আরওএ, আরওই, নিট মুনাফা ও শাখাপ্রতি মুনাফায় ভালো করেছিল সিটি ব্যাংক। কিন্তু এবার ব্যাংকটির নিট মুনাফা কমে যাওয়ার প্রভাব সবক’টি সূচকে পড়েছে। ২০২১ সালে ৫৪৯ কোটি টাকা নিট মুনাফা করা সিটি ব্যাংকের মুনাফা গত বছর ৪৭৮ কোটি টাকায় নেমে আসে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংকটির আরওএ ও আরওইতে। এছাড়া সিএআর, খেলাপি ঋণের হার ও এনএভিপিএসে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটির সিএআর ১৩ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং এনএভিপিএস ২৮ টাকা ২১ পয়সা।

এবারের র‌্যাংকিংয়ে বড় ধরনের উন্নতি হয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের। ৭০ স্কেলের র‌্যাংকিংয়ে ব্যাংকটি নিজের পঞ্চম স্থান ধরে রাখতে পেরেছে। তবে ৫০ স্কেলের র‌্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ব্যাংকটি। ২০২১ সালের র‌্যাংকিংয়ে দুটি নির্দেশকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের অবস্থান ছিল যথাক্রমে পঞ্চম ও চতুর্থ। র‌্যাংকিংয়ে উন্নতির পাশাপাশি প্রাপ্ত নম্বরও বেড়েছে প্রিমিয়ারের। নিট মুনাফা ও এনএভি সূচক বাদ দিয়ে করা র‌্যাংকিংয়ে প্রিমিয়ারের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসাকে চমক হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হলো আরওই। ২০২২ সালে ব্যাংকটির ইকুইটির বিপরীতে আয় ছিল ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা ব্যাংক খাতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ১৭ দশমিক ১৬ শতাংশ আরওই নিয়ে এক্ষেত্রে শীর্ষস্থানটি শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের। আরওই ছাড়াও প্রিমিয়ার ব্যাংক ভালো নম্বর পেয়েছে খেলাপি ঋণ ও শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফা অর্জন সূচকে। সর্বনিম্ন খেলাপি ঋণের দিক থেকে ব্যাংকটির অবস্থান তৃতীয়। তবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা হলো এনএভিপিএস, সিএআর ও নিট মুনাফা।

গত বছরের মতো এবারের র‌্যাংকিংয়েও উন্নতি করেছে ব্যাংক এশিয়া। সাতটি নির্দেশকে ব্যাংকটির এবারের অবস্থান ষষ্ঠ। আর পাঁচটি সূচকে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে ব্যাংকটি। ২০২১ সালের র‌্যাংকিংয়ে ব্যাংক এশিয়ার অবস্থান ছিল যথাক্রমে অষ্টম ও সপ্তম। র‌্যাংকিংয়ে বড় উন্নতির পাশাপাশি ব্যাংকটির প্রাপ্ত স্কোরও বেড়েছে। মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাতের (সিএআর) দিক থেকে ব্যাংকটির অবস্থান দ্বিতীয়। আর শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফার দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। তবে আরওএ, আরওই, খেলাপি ঋণ ও এনএভিপিএসের দিক থেকে ব্যাংক এশিয়া বেশ পিছিয়ে পড়েছে।

২০২১ সালের র‌্যাংকিংয়ে বড় চমক দেখায় ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড। ৭০-এর স্কেলে ট্রাস্ট ব্যাংকের র‌্যাংকিং দাঁড়ায় চতুর্থ। আর ৫০-এর স্কেলে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে ট্রাস্ট ব্যাংক। কিন্তু এবারের র‌্যাংকিংয়ে ট্রাস্ট ব্যাংক পিছিয়ে পড়েছে। সাতটি নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়ে ট্রাস্ট ব্যাংক চতুর্থ থেকে সপ্তম স্থানে নেমে গেছে। আর পাঁচটি নির্দেশকে ব্যাংকটির এবারের অবস্থান হলো চতুর্থ। র‌্যাংকিংয়ের পাশাপাশি প্রাপ্ত নম্বরও কমেছে ট্রাস্ট ব্যাংকের। মূলত নিট মুনাফা কিছুটা কমে যাওয়ার প্রভাবে ব্যাংকটির র‌্যাংকিং অবনমন হয়েছে। ট্রাস্ট ব্যাংক শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে শাখাপ্রতি মুনাফার সূচকে ভর করে। এ সূচকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। আরওইর দিক থেকেও ভালো অবস্থানে রয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক। কিন্তু আরওএ, খেলাপি ঋণের হার, সিএআর, নিট মুনাফা ও এনএভিপিএসের দিক থেকে পিছিয়ে আছে ব্যাংকটি।

ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়রা আজম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যালান্সশিটের আকার অপেক্ষাকৃত অনেক ছোট। কিন্তু এ ব্যালান্সশিটেও যে মুনাফা হচ্ছে, সেটি সবার সেরা। ট্রাস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণগুলো ২০০৭ থেকে ২০১১ সালে বিতরণ করা। এসব খেলাপি ঋণের বিপরীতে এখন আমরা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করছি। পরিচালন মুনাফা থেকেই সঞ্চিতি রাখতে হচ্ছে। ট্রাস্ট ব্যাংক ধারাবাহিক উন্নতির পথে রয়েছে।’

সাতটি ও পাঁচটি নির্দেশকের ভিত্তিকে করা র‌্যাংকিংয়ে আগের বছরের তুলনায় এবার একধাপ করে অবনমন হয়েছে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের। এর মধ্যে সাতটি নির্দেশকে ব্যাংকটি সপ্তম থেকে অষ্টম এবং পাঁচটি নির্দেশকে ষষ্ঠ থেকে সপ্তম স্থানে নেমে গেছে। তবে অবস্থান অবনমন হলেও ব্যাংকটির প্রাপ্ত নম্বর কিছুটা বেড়েছে। এনপিএল ও সিএআরে পঞ্চম, নিট মুনাফায় সপ্তম এবং ওপিবি ও আরওএতে নবম স্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। তবে কিছুটা পিছিয়ে আছে আরওই এবং এনএভিপিএসে।

বণিক বার্তার র‌্যাংকিংয়ে ধারাবাহিক উন্নতি করছে পূবালী ব্যাংক। দেশের প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংকটির এবারের অবস্থান দাঁড়িয়েছে নবম। সাতটি সূচকে ২০২১ সালে ব্যাংকটি ১২তম অবস্থানে ছিল। আর পাঁচটি সূচকে পূবালী ব্যাংকের র‌্যাংকিং ১৪তম অবস্থানে এসেছে। আগে এ সূচকে ব্যাংকটির অবস্থান ছিল ১৭তম। র‌্যাংকিংয়ে উন্নতির পাশাপাশি পূবালী ব্যাংকের প্রাপ্ত নম্বরও বেড়েছে। সর্বনিম্ন খেলাপি ঋণের দিক থেকে পূবালী ব্যাংকের অবস্থান সবার শীর্ষে। ২০২২ সাল শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ছিল মাত্র ২ দশমিক ৬২ শতাংশ। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের মিডল্যান্ড ব্যাংক। খেলাপি ঋণ, এনএভিপিএস ও নিট মুনাফায় এগিয়ে থাকলেও পূবালী ব্যাংক ওপিবি, আরওই, আরওএ এবং সিএআরের দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে।

খেলাপি ঋণের সর্বনিম্ন হার পূবালী ব্যাংককে গৌরবান্বিত করেছে বলে জানান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘পূবালী ব্যাংক দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো। তার পরও আমাদের খেলাপি ঋণের হার এখন ২ দশমিক ৬২ শতাংশ। এটি দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সর্বনিম্ন খেলাপি ঋণ। ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ শতভাগ স্বাধীন। ব্যাংকের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের পূর্ণ চর্চা থাকার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা কোনো ব্রিফকেস কোম্পানি বা কাগুজে কোম্পানিকে ঋণ দিই না। গ্রাহক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের কারণেই অস্থিতিশীল এ সময়েও পূবালী ব্যাংক খেলাপি ঋণের সর্বনিম্ন হার ধরে রাখতে পেরেছে।’

মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘২০২২ সালে পূবালী ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এ কারণে ব্যাংকের সিএআর কিছুটা কমে গেছে। আমরা মূলধন বাড়ানোর জন্য ৭০০ কোটি টাকার সাব-অর্ডিন্যান্ড বন্ড ইস্যু করেছি। এ প্রক্রিয়া শেষ হলে ব্যাংকের অন্য সূচকগুলোরও উন্নতি হবে। আশা করছি, বণিক বার্তার র‌্যাংকিংয়ে পূবালী ব্যাংক আগামীতে আরো এগিয়ে যাবে।’

সম্পদ ও দায়ের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হলো ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। সাতটি ও পাঁচটি নির্দেশকের ভিত্তিতে করা র‌্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির অবস্থান ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে কিছুটা এগিয়েছে। সাতটি নির্দেশকে ব্যাংকটি ১৩তম থেকে দশম এবং পাঁচটি নির্দেশকে ১৯তম থেকে ১৮তম অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। নিট মুনাফায় প্রথম ও এনএভিপিএসে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে ব্যাংকটি। এছাড়া এনপিএলে সপ্তম এবং ওপিবিতে ১৩তম স্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। তবে পিছিয়ে আছে আরওএ, আরওই এবং সিএআরে।

সেরা ব্যাংকের তালিকায় ২০২২ সালের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে করা এবারের সাতটি নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়ে গতবারের ১৬তম স্থান থেকে উন্নীত হয়ে ১১তম স্থানে দাঁড়িয়েছে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক। অন্যদিকে পাঁচটি নির্দেশকের ভিত্তিতে করা র‌্যাংকিংয়ে ব্যাংকটি গতবারের ১১তম স্থান থেকে এবার অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে। আরওইতে ব্যাংকটির অবস্থান প্রথম এবং আরওএতে চতুর্থ। এছাড়া নিট মুনাফায় দশম ও শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফায় ১১তম অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। তবে পিছিয়ে আছে এনএভিপিএস, এনপিএল এবং সিএআরের দিক দিয়ে।

সম্পদের আকার খুবই ছোট হওয়া সত্ত্বেও শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক দেশের বড় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারছে বলে মনে করেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা। স্বল্প এ বিনিয়োগ দিয়েও আমরা দেশের বড় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা করতে পারছি। এ ব্যাংকের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো ট্রেড ফাইন্যান্স। আমদানি ও রফতানি থেকে প্রাপ্ত কমিশন ও ফি থেকে আমরা যথেষ্ট পরিমাণ মুনাফা করতে পারছি। শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের সিএআর বাড়ানোর জন্য ৫০০ কোটি টাকার সাব-অর্ডিন্যান্ড বন্ড ছাড়া হয়েছে। এটি চূড়ান্ত হলে ব্যাংকের সিএআর ১৫ শতাংশে উন্নীত হবে।’ 

সাতটি নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়ে গতবারের দশম অবস্থান থেকে নেমে এবার ১২তম স্থানে দাঁড়িয়েছে এমটিবি। অন্যদিকে পাঁচটি নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়ে গতবারের দশম অবস্থান এবারো ধরে রেখেছে ব্যাংকটি। ওপিবিতে সপ্তম ও সিএআরে দশম অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। তবে পিছিয়ে আছে এনপিএল, নিট মুনাফা, এনএভিপিএস, আরওই এবং আরওএর দিক দিয়ে। 

এবারের সাতটি নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়ে বড় উল্লম্ফন হয়েছে এক্সিম ব্যাংকের। ২০২১ সালের র‌্যাংকিংয়ের ২২তম অবস্থান থেকে এবার ১৩তম অবস্থানে উঠে এসেছে ব্যাংকটি। অন্যদিকে পাচটি নির্দেশকের ভিত্তিকে করা র‌্যাংকিংয়ে ব্যাংকটি আগেরবারের ২০তম স্থান থেকে এবার ১৩তম স্থানে উঠে এসেছে। ব্যাংকটির শক্তিমত্তার জায়গা হচ্ছে এনপিএল ও নিট মুনাফা। দুই সূচকে নবম অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। তবে সিএআর, এনএভিপিএস, ওপিবি, আরওএ এবং আরওইর দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে।

বণিক বার্তার র‌্যাংকিংয়ে এক্সিম ব্যাংকের উন্নতিকে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সুকর্মের ফল বলে মনে করেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক যোগদানের পর এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। তিনি নিরলসভাবে ব্যাংকটিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রীতিনীতি মেনে ব্যাংকের বিনিয়োগ থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজ সম্পাদিত হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকের সবক’টি সূচকে উন্নতি হয়েছে।’

গতবারের ১১তম অবস্থান থেকে এবার ১৪তম অবস্থানে অবনমন হয়েছে এনসিসি ব্যাংকের। র‌্যাংকিংয়ে অবনমনের পাশাপাশি এবার ব্যাংকটির প্রাপ্ত নম্বরও কমেছে। পাঁচটি নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়েও নবম থেকে ১১তম স্থানে অবনমন হয়েছে ব্যাংকটির। সিএআরে অষ্টম, আরওএতে দশম এবং ওপিবিতে ১২তম অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। তবে পিছিয়ে আছে এনপিএল, এনএভিপিএস, নিট মুনাফা এবং আরওইতে।

২০২১ সালের সাতটি নির্দেশকের র‌্যাংকিয়ে ১৯তম অবস্থান থেকে এবার ১৫তম অবস্থানে উঠে এসেছে উত্তরা ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংকটির প্রাপ্ত নম্বরও বেড়েছে। পাঁচটি নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির অবস্থান ২২তম থেকে ১৭তমতে উন্নীত হয়েছে। আরওএতে দ্বিতীয়, সিএআর ও এনএভিপিএসে সপ্তম এবং আরওইতে নবম অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। তবে পিছিয়ে আছে ওপিবি, এনপিএল ও নিট মুনাফায়।

প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত হওয়া এনআরবিসি ব্যাংকের সাতটি নির্দেশকের ভিত্তিতে করা র‌্যাংকিংয়ে অবস্থান ১৬তম। আর পাঁচটি নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়ে এর অবস্থান ১২তম। আরওএ এবং আরওইতে ব্যাংকটির অবস্থান তৃতীয়। এছাড়া এনপিএলের দিক দিয়ে ব্যাংকটির অবস্থান ১৪তম। পিছিয়ে আছে এনএভিপিএস, সিএআর, নিট মুনাফা এবং ওপিবিতে।

২০২১ সালের ২৩তম অবস্থান থেকে ২০২২ সালের সাতটি নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়ে ১৭তম অবস্থানে উঠে এসেছে আইএফআইসি ব্যাংক। অন্যদিকে পাঁচটি নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়ে ব্যাংকটি একধাপ এগিয়ে ২০তম অবস্থানে উঠে এসেছে। পাশাপাশি ব্যাংকটির প্রাপ্ত নম্বরও বেড়েছে। নিট মুনাফায় ১১তম ও আরওএতে ১২তম স্থান অর্জন করেছে ব্যাংকটি। তবে পিছিয়ে আছে এনএভিপিএস, এনপিএল, সিএআর, ওপিবি এবং আরওইতে।

সাতটি নির্দেশকের ভিত্তিতে করা র‌্যাংকিংয়ে ২০২১ সালের ২০তম অবস্থান থেকে এবার ১৮তম অবস্থানে উঠে এসেছে ইউসিবি। তবে পাঁচটি নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির অবস্থান আগের বছরের ২৩তম স্থান থেকে অবনমন হয়ে ২৬তম স্থানে দাঁড়িয়েছে। এনএভিপিএসে নবম ও নিট মুনাফায় ১২তম অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। এছাড়া ওপিবিতে ব্যাংকটির অবস্থান ১৬তম। তবে পিছিয়ে আছে এনপিএল, সিএআর, আরওএ এবং আরওইতে।

দুই র‌্যাংকিংয়েই এবার অবনমন হয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। এর মধ্যে সাতটি নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়ে ২০২১ সালের ১৭তম থেকে ২০২২ সালে ১৯তম এবং পাঁচটি নির্দেশকের র‌্যাংকিংয়ে ২০২১ সালের ১৫তম থেকে ২০২২ সালে ২৩তম স্থানে অবনমন হয়েছে ব্যাংকটির। আরওইতে অষ্টম, এনপিএলে ১১তম এবং নিট মুনাফায় ১৪তম স্থানে রয়েছে ব্যাংকটি। তবে পিছিয়ে আছে সিএআর, ওপিবি, এনএভিপিএস ও আরওএতে।
এই বিভাগের আরও খবর
এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

প্রথমআলো
ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

কালের কণ্ঠ
বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

নয়া দিগন্ত
প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

বাংলা ট্রিবিউন
ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

বাংলা ট্রিবিউন
ভারতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম, কেজি উঠেছে ৭০–৮০ রুপিতে

ভারতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম, কেজি উঠেছে ৭০–৮০ রুপিতে

প্রথমআলো
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া