বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী দেশ। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে আর সব দেশের মতো ভুগতে হয় বাংলাদেশকেও। মহামারীর কারণে ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকের শেষ দিক থেকেই শুরু হয় ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিলের ধারা, যা অব্যাহত ছিল বছরজুড়ে। তবে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে মহামারীর সেই অভিঘাত পরের বছরই কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা। পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর রফতানির তালিকা অনুযায়ী, অভিঘাত কাটিয়ে ওঠার পেছনে বড় ভূমিকা রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষ হলো হা-মীম, পলমল ও ডিবিএল।
২০২১ সালে বিজিএমইএর শীর্ষ রফতানিকারক সদস্য কারখানা ইউনিটগুলোর তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম অবস্থানে রয়েছে হা-মীম গ্রুপ। তিন কারখানা রিফাত গার্মেন্টস, আর্টিস্টিক ডিজাইন ও অ্যাপারেল গ্যালারির মাধ্যমে ২০২১ সালে হা-মীম গ্রুপ রফতানি করে ৫৮ কোটি ডলারেরও বেশি পোশাক পণ্য।
১৯৮৪ সালে হা-মীম গ্রুপের ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করেন একে আজাদ। তার গড়ে তোলা হা-মীম গ্রুপে একে একে যুক্ত হয়েছে ২৬টি কারখানা। এ গ্রুপের ওভেন পোশাক পণ্য প্রস্তুতকারক কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে আর্টিস্টিক ডিজাইন লিমিটেড, হা-মীম অ্যাপারেলস লিমিটেড, দ্যাটস ইট গার্মেন্টস লিমিটেড, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেড, অ্যাপারেলস গ্যালারি লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, ক্রিয়েটিভ কালেকশন লিমিটেড, নেক্সট কালেকশনস লিমিটেড, হা-মীম ডিজাইন লিমিটেড। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান রফতানিকারক ইউনিট হলো ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করা রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড।
এছাড়া হা-মীম গ্রুপের সোয়েটার উৎপাদনকারী কারখানার মধ্যে আছে দ্যাটস ইট নিট লিমিটেড ও দ্যাটস ইট সোয়েটার লিমিটেড। ওয়াশিং কারখানা আছে সাতটি, যেগুলোর ওয়াশিং সক্ষমতা প্রতিদিন তিন লাখ পিচ। ডেনিম কাপড়ের কারখানাটি হলো হা-মীম ডেনিম মিলস লিমিটেড। এমব্রয়ডারি, প্রিন্টিং ও অ্যাকসেসরিজের মতো পোশাকের আনুষঙ্গিক পণ্য উৎপাদন সক্ষমতাও আছে হা-মীম গ্রুপের। সব মিলিয়ে এ গ্রুপের আওতায় ২৬টি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানে প্রোডাকশন লাইন সংখ্যা ৩০০। প্রতি মাসে হা-মীম গ্রুপের উৎপাদন সক্ষমতা ৭০ লাখ পিচ। গ্রুপের অধীনে কর্মরত কর্মী সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।
কভিডকাল পেরিয়ে ব্যবসায়িক উত্তরণের বিষয়ে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ২০২০ সালে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কারখানা চালু রাখা। সেই চ্যালেঞ্জ ভালোভাবেই মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে ২০২১ সালে। এখন প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে পোশাক কারখানাগুলোয়। গত অর্থবছরে পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধিও ভালো ছিল। এখন আমরা এ প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে কাজ করছি।
হা-মীমের পরই সবচেয়ে বেশি পোশাক রফতানি করা প্রতিষ্ঠানটি হলো পলমল। শীর্ষ তালিকায় আছে এ গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান। নাফা অ্যাপারেলস, আসওয়াদ কম্পোজিট মিলস ও আয়েশা ক্লদিং কো.— এ তিন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২১ সালে পলমল গ্রুপের পোশাক রফতানির অর্থমূল্য ছিল ৪৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানটি হলো দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড বা ডিবিএল গ্রুপ। তালিকায় এ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রয়েছে দুটি। এগুলো হলো ফ্লেমিঙ্গো ফ্যাশনস ও জিন্নাত নিটওয়্যারস। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২১ সালে ডিবিএল গ্রুপ ৪৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি করেছে।
বস্ত্র, পোশাক, সিরামিক, ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে ব্যবসা থাকা ডিবিএল গ্রুপে কর্মী সংখ্যা ৩৮ হাজারেরও বেশি। গ্রুপটির বার্ষিক টার্নওভার ৬০ কোটি ডলার। এ প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন, কভিডের অভিঘাত কাটিয়ে ২০২১ সালে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়তে শুরু করে, যার ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত।
ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এমএ রহিম ফিরোজ বণিক বার্তাকে বলেন, কভিডকাল গোটা পোশাক খাতেই নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। অভিঘাত কাটিয়ে ইউরোপ-আমেরিকা যখন সচল হলো তখন সেখানকার ক্রেতারা তাদের সরকারের দেয়া বিভিন্ন প্রণোদনা খরচ করতে শুরু করেন। ফলে চাহিদা চাঙ্গা হতে শুরু করে। দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রফতানিকারক হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই যার চাপ এসে পড়ে বাংলাদেশে। পাশাপাশি চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধের প্রভাবে চীন থেকে ক্রয়াদেশের একটি অংশ বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনামে ভাগ হয়ে যায়। এসব কিছুর পরিপ্রেক্ষিতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে কভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধার শুরু হয়। সে ধারাবাহিকতা এখনো বজায় আছে। সব মিলিয়ে ২০২১ সালে আমরা প্রায় ৪৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করতে সক্ষম হয়েছি।
তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানটি হলো স্কয়ার গ্রুপের স্কয়ার ফ্যাশনস লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২১ সালে রফতানি হয়েছে ৩১ কোটি ডলারের বেশি পোশাক পণ্য। পঞ্চম অবস্থানে আছে আল-মুসলিম গ্রুপের একেএম নিটওয়্যার। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গত বছর গ্রুপটির পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল সাড়ে ২০ কোটি ডলারের বেশি। ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে মণ্ডল গ্রুপ। এ গ্রুপের কটন ক্লাব লিমিটেডের রফতানি ছিল ১৯ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
এশিয়ান গ্রুপের চিটাগং এশিয়ান অ্যাপারেলস ছিল তালিকার সপ্তম অবস্থানে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২১ সালে রফতানি হয়েছে ১৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের পণ্য। একেএইচ গ্রুপের একেএইচ নিটিং অ্যান্ড ডায়িং লিমিটেড রয়েছে বিজিএমইএর শীর্ষ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের তালিকার অষ্টম অবস্থানে। প্রতিষ্ঠানটির পোশাক রফতানির পরিমাণ ২০২১ সালে ছিল ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের কিছু বেশি।
নবম অবস্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানটি হলো ন্যাচারাল ডেনিমস। ন্যাচারাল গ্রুপের এ প্রতিষ্ঠানের রফতানি ২০২১ সালে ছিল ১৬ কোটি ১৫ লাখ ডলারের। দশম অবস্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানটি হলো বিটপি গ্রুপের। তারাশিমা অ্যাপারেলস লিমিটেডের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে ১৬ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে।
তালিকায় থাকা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে নিউটেক্স গ্রুপের ইমপ্রেস-নিউটেক্স কম্পোজিট টেক্সটাইলস লিমিটেড। ইপিলিয়ন গ্রুপের ইপিলিয়ন স্টাইল, আরমানা গ্রুপের ডেনিম্যাক, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স, পাকিজা গ্রুপের পাকিজা নিট কম্পোজিট, অ্যাপটেক গ্রুপের বিগ বস করপোরেশন, ডেকো গ্রুপের ডেকো ডিজাইনস, নিউএজ গ্রুপের নিউএজ অ্যাপারেলস, উইন্ডি গ্রুপের উইন্ডি অ্যাপরেলস, নাসা গ্রুপের এজে সুপার গার্মেন্টস, এসকিউ গ্রুপের এসকিউ সেলসিয়াস, অনন্ত গ্রুপের অনন্ত গার্মেন্টস, ডেবোনেয়ার গ্রুপের ডেবোনেয়ার ও কেডিএস গ্রুপের কেডিএস গার্মেন্ট।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়