২০১২ সালে তৎকালীন বিসিবি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের হাত ধরে বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবেই যাত্রা শুরু করেছিল বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ)। শুরুর দিকে আইপিএলের পরের অবস্থানে বিবেচিত হওয়া টুর্নামেন্টটি এখন পিএসএল, বিগব্যাশের সঙ্গেও তুলনায় যেতে পারছে না। এমনকি এবারই শুরু হতে যাওয়া দুবাইয়ের আইএলটি২০ কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের সঙ্গে টক্কর দিতে পারছে না বিপিএল।
দিন দিন টুর্নামেন্টটি জৌলুস হারিয়ে জীর্ণশীর্ণ দায়সারা এক আয়োজনে পরিণত হয়েছে। আর চার দিন পরেই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটির নবম আসর মাঠে গড়াবে। অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে ডিআরএস ছাড়াই শুরু হচ্ছে এবারের আসর। দিন যত যাচ্ছে, আয়োজনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রিকেটের মান নিম্নগামী হচ্ছে এখানে। ঘরোয়া এই আসর থেকে নতুন খেলোয়াড় তো বের হয়-ই না, উল্টো খেলার বাইরে নানা বিতর্কে দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।
বিপিএলের প্রাপ্তি নিয়ে গত বছরই প্রশ্ন তুলেছিলেন জাতীয় দলের টেস্ট ও টি২০ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা এই আসরের মান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন। হতাশ সাকিব বলেছিলেন, ‘বিপিএলের প্রতিটি আসর থেকে অন্তত দুইজন করে ক্রিকেটার বের হওয়া উচিত। কিন্তু আমার দেখামতে, সাইফউদ্দিন ও শেখ মেহেদি ছাড়া বিপিএলের আট আসর থেকে আর কাউকে বের হতে দেখিনি। এটা একটা বড় হতাশার জায়গা।’
তবে বিপিএলের সবেধনে নীলমণি এ দুই আবিষ্কার এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের তেমনভাবে মেলে ধরতে পারেননি। সাইফউদ্দিন অবশ্য অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দিয়েই নজরে এসেছিলেন। বিপিএলে দাপট দেখিয়ে জাতীয় দলে আরও একজন জায়গা করে নিয়েছিলেন, তিনি সাকিবেরই দল ফরচুন বরিশাল সতীর্থ মুনিম শাহরিয়ার। বিপিএলে মারকাটারি ব্যাটিং করা এ ওপেনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটে বলই লাগাতে পারেন না। পাঁচটি টি২০-তে সুযোগ দেওয়ার পর তাঁকে ছুড়ে ফেলা হয়েছে জাতীয় দল থেকে।
বিপিএলের আরেক আবিষ্কার শেখ মেহেদিও উল্লেখ করার মতো কিছু করতে পারেননি। যার মানে দাঁড়ায়, এখানে আসলে মানসম্পন্ন ক্রিকেট হয় না। অথচ আইপিএল থেকে জাসপ্রিত বুমরা, সূর্যকুমার যাদবের মতো সুপারস্টার বেরিয়ে এসেছেন। পিএসএল থেকে নজর কেড়েছেন শাদাব খান, হারিস রউফ, ইফতেখার আহমেদ, খুশদিল শাহর মতো টি২০ স্পেশালিস্ট। এমনকি উইন্ডিজের সিপিএল থেকে রোভম্যান পাওয়েল, কাইল মায়ার্স, ব্রেন্ডন কিং, ওডেন স্মিথের মতো ক্রিকেটার বেরিয়ে এসেছেন।
বিপিএলের গত আট আসরের রান সংগ্রাহক ও উইকেট শিকারিদের তালিকার দিকে তাকালে দেখা যাবে, নতুন কোনো প্রতিভাই নেই। ব্যাটিংয়ে দেশিদের মধ্যে দাপট তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েসের মতো পরিচিত মুখদের। বোলিংয়েও সাকিব, মাশরাফি, মুস্তাফিজ, রুবেলের মতো পুরোনোই। বিদেশিদের দাপটের কথা তো বলা বাহুল্য। প্রতিটি দলই গুরুত্বপূর্ণ সব পজিশনে বিদেশিদের ওপর নির্ভর করে।
ওপেনার, ফিনিশার, ডেথ বোলার- এসব পজিশনে দেশি তরুণদের ওপর নূ্যনতম আস্থা রাখতে দেখা যায় না দলগুলোকে। নতুন প্রতিভা বের না হওয়ার অন্যতম কারণ এটি। আক্ষেপের বিষয় হলো, গত কয়েক আসরে মানসম্মত বিদেশিও আসছে না। এবার তো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ ও কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ চলায় তৃতীয় বা চতুর্থ সারির বিদেশি পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ সালাউদ্দিন জানিয়ে দিয়েছেন যে প্রথম রাউন্ডে বিদেশি ছাড়া নামবেন।
বিপিএলের আরেকটি হতাশার জায়গা হলো উইকেট। এত নিম্নমানের উইকেট সম্ভবত পৃথিবীর কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দেখা যায় না। এর জন্য অবশ্য আয়োজকরা মাঠের স্বল্পতাকে দায়ী করেন। মিরপুর স্টেডিয়াম মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার হয় বলে এখানে মানসম্পন্ন উইকেট তৈরি সম্ভব নয় বলে অনেকবারই জানিয়েছেন বিসিবির কিউরেটররা।
তাই এসব উইকেটে সুযোগ পেলেও অধিকাংশ দেশি ক্রিকেটার নিজেদের মেলে ধরতে ব্যর্থ হন। ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের বিনিয়োগ ফেরানোর ব্যবস্থা করা ও স্থায়ী হওয়ার সুযোগও দেওয়া হয় না। তাই দল নিয়ে লম্বা পরিকল্পনা করতে পারেন না তাঁরা। উল্টো অর্থকড়ি লোকসান দিয়ে ক'দিন পরেই মালিকানা ছেড়ে দেন। ফলে বছর বছর নতুন নতুন মালিক, নতুন নতুন নামে ফ্র্যাঞ্চাইজি আসায় টুর্নামেন্টটি এখনও দাঁড়াতে পারছে না।
২০১৬: সেরা পাঁচে ছিলেন তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাব্বির রহমান, মোহাম্মদ শেহজাদ ও মুশফিকুর রহিম। বোলিংয়ের সেরা পাঁচে থাকা একমাত্র বাংলাদেশি শফিউল।
২০১৭: সেরা পাঁচ ব্যাটারের তৃতীয়তে তামিম আর চতুর্থ স্থানে ছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। বোলিংয়ে সাকিব আল হাসান, আবু জায়েদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
২০১৮: সেরা পাঁচ ব্যাটারের মধ্যে দ্বিতীয় আর তৃতীয়তে ছিলেন তামিম ও মুশফিক। বোলিংয়ে সেরা পাঁচে ছিলেন- সাকিব, তাসকিন, মাশরাফি, রুবেল হোসেন ও সাইফউদ্দিন।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়