চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। করোনার প্রভাবে রাজস্ব আহরণের গতি শ্লথ হয়ে পড়লে লক্ষ্যমাত্রা ২৯ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়। তবে সংশোধিত এ লক্ষ্যমাত্রা থেকেও পিছিয়ে পড়েছে রাজস্ব আহরণ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) রাজস্ব আহরণে ঘাটতি ৪৪ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। করোনার পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রয়োজনীয় সংস্কার না হওয়াকে রাজস্ব আহরণে ঘাটতির কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনবিআরের সর্বশেষ রাজস্ব আহরণ অগ্রগতি-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে (সাময়িক) দেখা গেছে, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চলতি অর্থবছর ৩ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে হবে। সে হিসেবে অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৬২ হাজার ১১৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এ সময়ে আহরণ হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৭৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৪৪ হাজার ৩৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব বেড়েছে সাড়ে ২৯ হাজার কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত আমদানি-রফতানি পর্যায়ে রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৬ হাজার ৯২৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে আদায় হয়েছে ৬৮ হাজার ১২৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। অর্থাৎ আমদানি-রফতানি খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭৯৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। একই সময়ে স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৮৪ হাজার ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এক্ষেত্রেও ১১ মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৯৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে আয়কর ও ভ্রমণ করের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৭ হাজার ২৯৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আদায় হয়েছে ৬৫ হাজার ৬২৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা কমানোর পরও আয়করে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৬৮ কোটি ২১ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বণিক বার্তাকে বলেন, করোনার প্রভাবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এছাড়াও আমদানি-রফতানি, উৎপাদনসহ সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। এজন্য রাজস্ব আহরণও কম। তবে আগের অর্থ বছরগুলোতে নয় মাসে যে পরিমাণ অর্জন হতো, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতো। এরপর বছর শেষে বলা হতো সরকার শতভাগের কাছাকাছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। তথ্য বিভ্রান্তিতে মূল লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টি আর জানানোই হতো না। কিন্তু এবার শুরু থেকে রাজস্ব আহরণের মাত্রা এতটাই কম ছিল যে লক্ষ্যমাত্রা ২৯ হাজার কোটি টাকা কমানোর পরও আহরণ তার চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রাজস্ব দেন অনেকেই। কিছু ক্ষেত্রে অগ্রিম রাজস্বও পেত এনবিআর। তাই আগের বছরগুলোতে ওই মাসটিতে রাজস্ব আহরণ বেড়ে যেত। কিন্তু করোনার কারণে এবার জুনেও রাজস্ব বাড়ার সম্ভাবনা কম। তাই এ বছরটি বড় ঘাটতি নিয়েই শেষ হবে। রাজস্ব বাড়ানোর জন্য এনবিআর বেশকিছু অটোমেশন প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। বিশেষ করে ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এর বাস্তবায়ন খুব ধীর। এসবও রাজস্ব আহরণ কমার অন্যতম কারণ।
এদিকে গত ৩ জুন জাতীয় সংসদে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার প্রস্তাবিত এ বাজেট চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। বৈদেশিক অনুদান মিলিয়ে বাজেটে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার। সে হিসেবে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেটে ঘাটতি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও রাজস্ব আয়ে ধসের বাস্তবতা মেনে নিয়ে আগামী বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নতুন করে বাড়ানো হয়নি। আগামী বাজেটেও এনবিআরের রাজস্ব আয়ের প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়