সহায়তা পেলে পোশাকের ঝুট হতে পারে অন্যতম রপ্তানি পণ্য

পোশাক কারখানার উচ্ছিষ্ট কাপড়সহ (ঝুট) নতুন চার ধরনের পণ্যে রপ্তানি ভর্তুকি চান ব্যবসায়ীরা। অন্য তিনটি পণ্য হচ্ছে সোডিয়াম সিলিকেট, কৃত্রিম তন্তু এবং আর্টিফিশিয়াল কোয়ার্টজ বা কৃত্রিম পাথর।

পণ্যগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত সমিতিগুলো আবেদন করার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার এ নিয়ে বৈঠক করে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে, তবে পরে আরও বৈঠক হবে। এরপর এগুলোতে রপ্তানি ভর্তুকির সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগের মনোভাবের ওপরই নির্ভর করবে, এসব পণ্যে রপ্তানি ভর্তুকি দেওয়া হবে কি না। ব্যবসায়ীরা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ভর্তুকি চাইলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা অর্থ বিভাগের কাছে চাইবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন কোনো পণ্যে রপ্তানি ভর্তুকি দেওয়া এবং চলমান কোনো পণ্যে ভর্তুকি হ্রাস-বৃদ্ধি করা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একার সিদ্ধান্তে হবে না। এমনকি শুধু অর্থ বিভাগ রাজি থাকলেও হবে না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেরও (এনবিআর) সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ফলে সবাই মিলে সিদ্ধান্তটি নিতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুপারিশ করতে পারবে এবং তা করবেও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বর্তমানে ৩৭টি খাতে পণ্য রপ্তানিকারকদের ২ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিভিন্ন হারে নগদ ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।

বৈঠকে অংশ নেওয়া দেশের নিট পোশাক খাতের অন্যতম ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানি ভর্তুকির বর্তমান নিয়মকানুন ঠিক নেই। এ ভর্তুকি পেতে গেলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কখনো কখনো দুর্নীতিও মোকাবিলা করতে হয়।

নতুন কিছু পণ্যে ভর্তুকি দেওয়ার পাশাপাশি সরকারকে ভর্তুকি দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে বলেও তিনি মনে করেন।

তৈরি পোশাকের ঝুট
বাংলাদেশ টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ওয়েস্ট প্রসেসরস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিজিডব্লিউপিইএ) সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক আবেদনে বলেছে, তৈরি পোশাকের ঝুট বিপুল সম্ভাবনাময় একটি রপ্তানি খাত হতে পারে। তবে এ খাতের রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া দরকার।

দেশে কী পরিমাণ ঝুট উৎপাদন হয় সে বিষয়ে বিটিজিডব্লিউপিইএর কাছে কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে গত নভেম্বরে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বছরে চার লাখ টন ঝুট উৎপাদন হয় এবং এ ঝুট থেকে বছরে ৩০০ কোটি ডলার আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিটিজিডব্লিউপিইএ সূত্রে জানা গেছে, সমিতিটির ৬০ জন সদস্যের অনেকেই ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্কসহ ইউরোপের দেশগুলোতে ঝুট রপ্তানি করেন। গত পাঁচ বছরের গড় রপ্তানি হচ্ছে ৫ থেকে ৬ কোটি ডলার।

ঝুটের মোট উৎপাদন নিয়ে কোনো ধারণা দিতে না পারলেও বিটিজিডব্লিউপিইএ সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দেশে যে পরিমাণ ঝুট উৎপাদন হয়, তার ৩০ শতাংশ আসে তুলাজাত পোশাকপণ্য থেকে। বাকি ঝুট আসে পলিয়েস্টার ও পলিয়েস্টারজাতীয় পোশাক পণ্য থেকে। প্রণোদনা ও সরকারের সুনজর থাকলে এ খাত থেকে কেবল ৩০০ কোটি নয়, হাজার কোটি ডলারও রপ্তানি আয় হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানির সঙ্গে আজই কথাবার্তা হয়েছে জানিয়ে সৈয়দ নজরুল বলেন, ৩০ টাকা দরের ঝুটে মূল্য সংযোজন করে ১৭০ টাকায় বিক্রি করবেন তিনি।

কৃত্রিম তন্তু
বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তৈরি কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে কৃত্রিম তন্তু থেকে বানানো পোশাকের উৎপাদনও বাড়ছে। কৃত্রিম তন্তুর বিশ্ববাজারও অনেক বড়।

২০১৯ সালে সারা বিশ্বে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ১৯ হাজার থেকে ২০ হাজার কোটি ডলারের কৃত্রিম তন্তুর পোশাক রপ্তানি হয়। ২০২৫ সালে তা ৪০ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চ পূর্বাভাস দিয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারার ফেডারেশনের (আইটিএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মোট পোশাকের ৭৮ শতাংশই কৃত্রিম তন্তুর। বাকি ২২ শতাংশ তুলার তন্তুর।

বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ। প্রথম চীন ও তৃতীয় ভিয়েতনাম। তারপরও কৃত্রিম তন্তুর পোশাক রপ্তানিতে চীন ও ভিয়েতনাম থেকে পিছিয়ে বাংলাদেশ। ভিয়েতনাম বিশ্বের কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের ১০ শতাংশ হিস্যা দখল করে আছে, বাংলাদেশের হিস্যা সেখানে ৫ শতাংশের কাছাকাছি। প্রতিবেশী ভারত প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের কৃত্রিম তন্তুর পোশাক রপ্তানি করছে।

বিটিএমএ জানায়, বর্তমানে প্রায় ৮০টি বস্ত্রকল পলিয়েস্টার, ভিসকস, টেনসিল, মোডালসহ বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম তন্তুর সুতা ও কাপড় উৎপাদন করছে। যদিও ২০১৬ সালে সংখ্যাটি ছিল ৫০-এর কম।

কৃত্রিম পাথর ও সোডিয়াম সিলিকেট
কাসেম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আর্টিফিশিয়াল কোয়ার্টজ বা পাথর রপ্তানিতে প্রণোদনা চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। আর সুপার সিলিকা বাংলাদেশ লিমিটেড চেয়েছে সোডিয়াম সিলিকেট রপ্তানির বিপরীতে নগদ সহায়তা।

কৃত্রিম কোয়ার্টজ ভবন তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মূলত ভবনে সাজসজ্জার কাজে ব্যবহার করা হয় এ পণ্য। কৃত্রিম কোয়ার্টজ ময়লা-প্রতিরোধী এবং তা পরিষ্কার করা সহজ। এ পণ্য মেঝে তৈরির কাজে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

আর সোডিয়াম সিলিকেট সাবান, সিরামিক এবং ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোড কারখানায় গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এই বিভাগের আরও খবর
এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

প্রথমআলো
ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

কালের কণ্ঠ
বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

নয়া দিগন্ত
প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

বাংলা ট্রিবিউন
ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

বাংলা ট্রিবিউন
ভারতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম, কেজি উঠেছে ৭০–৮০ রুপিতে

ভারতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম, কেজি উঠেছে ৭০–৮০ রুপিতে

প্রথমআলো
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া