সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ ও ওটিটি কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে যে দুটি নতুন আইনের খসড়া করেছে, তার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নিবর্তনমূলক’ এ দুটি নীতিমালা কার্যকর করা হলে সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করবে।
শনিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘সোজা কথায় বলা যায় এই নিবর্তনমূলক নীতিমালাটির তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি-অপশাসন, তাদের ভোট ডাকাতি, তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলোর প্রচার ঠেকাতে।’
গত ২ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসির ওয়েবসাইটে দেওয়া ও ইংরেজিতে লেখা খসড়া নীতিমালাকে ‘দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্লাটফর্মস ২০২১’ হিসেবে উল্লেখ করে ৫ মার্চের মধ্যে পর্যবেক্ষণ, মতামত ও সুপারিশ চাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ‘ওভার দ্য টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান এবং পরিচালনা নীতিমালা-২০২১ (খসড়া)’ শিরোনামে আরেকটি খসড়া নীতিমালা দিয়ে সংশোধন/মতামত চাওয়া হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে।
এ দুটি খসড়া আইনের সমালোচনায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,‘নিবর্তনমূল এই দু’টি নীতিমালা কার্যকর করা হলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি অনলাইন ভিত্তিক মিডিয়াগুলোর মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তার অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করবে, পাশাপাশি অনলাইন এনক্রিপশনকে অকার্যকর করে নিরাপত্তাকে দুর্বল করে ফেলবে।’
‘এর ফলে মানবাধিকারের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে এবং সাংবাদিক, বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী এবং ধর্মীয় ও সাংষ্কৃতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্টী আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে আইসিটি অ্যাক্ট সংশোধন করে ৫৭ ধারা যোগ করে এবং ২০১৮ সালে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের জনগণ এবং মিডিয়ার বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত করার পর এখন অবশিষ্ট সামান্য যে বাকস্বাধীনতা টুকু রয়েছে সেটুকু পুরোপুরি কেড়ে নেয়ার জন্য সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি নতুন নীতিমালা বা রেগুলেশন জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যে পরিমাণ ইতিহাস বিকৃতি করেছে সেই বিষয়ে কথা না বলার জন্যও তারা এই নীতিমালা ব্যবহার করবে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়েছে, দেশের মানুষ সেই ঘোষণা শুনেছে, বিদেশি পত্র-পত্রিকায় সে ঘোষনার কথা প্রকাশ হয়েছে, তার পরেও উনারা কোর্টর আদেশ আর সংবিধান সংশোধন করে স্বাধীনতার ঘোষকের নাম বদলে দিয়েছেন। ইতিহাসের প্রতিষ্ঠিত সত্যকে উনারা আদালত আর সংবিধানের মাধ্যমে বদলে দেন আর তারপর সে বিকৃত ইতিহাস রক্ষার জন্য এখন এই ধরনের নিবর্তনমূলক নীতিমালার পেছনে আশ্রয় নিতে চাচ্ছেন।’
সরকার পরিচালনায় থাকা আমলা মন্ত্রীরা যদি দুর্নীতি করেন তাহলে সেগুলো মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যমে যেন প্রচার করা না হয় সেটার রক্ষাকবচ হিসেবে ও বিটিআরসির এই নীতিমালা ব্যবহার করা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিটিআরসির নীতিমালার সবচেয়ে আশ্চর্যজনক অংশটি হচ্ছে- ‘কোনো ব্যক্তির প্রতি আক্রমণাত্মক, মিথ্যা, হুমকি বা ভীতি-প্রদর্শক ও অপমানজনক বা মানহানিকর’ বিষয় প্রচার করা যাবে না। গত এক যুগের বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মিথ্যা, মানহানিকর এবং নোংরা অপপ্রচার করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে।
‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে এসব মানহানিকর, মিথ্যা এবং নোংরা অপপ্রচারের অধিকাংশই হয়েছে সরকার নিয়ন্ত্রিত এবং সরকারপন্থী মিডিয়ার মাধ্যমে। বারবার আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করেও আওয়ামী লীগ সরকার নিয়ন্ত্রিত বিচার ব্যবস্থায় কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।’ যোগ করেন তিনি।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়