গত ২৮শে জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এরপর থেকে রাজপথে রয়েছে দলটি। ইতিমধ্যে দুই বিভাগে রোডমার্চসহ পদযাত্রা, সমাবেশ করেছে দলটি। একই দাবিতে রাজপথে রয়েছে বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। ইতিমধ্যে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে বিএনপি। গত ১৯শে অক্টোবর ১৫ দিনের লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। এরমধ্যে আরও ৫টি বিভাগে রোডমার্চ ও রাজধানীতে ১২টি সমাবেশ ও কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। লাগাতার কর্মসূচির প্রথম দিন রাজধানীর পাশের দুই থানা টঙ্গী ও কেরানীগঞ্জে সমাবেশ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ভৈরব থেকে সিলেট পর্যন্ত রোডমার্চ করবে তারা। সকাল ৯টায় ভৈরব বাসস্ট্যান্ডে উদ্বোধনী সমাবেশের পর রোডমার্চ শুরু হবে।
মাঝপথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোড মোড়, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ মোড় ও মৌলভীবাজারের শেরপুরে তিনটি পথসভা হবে।
এরপর সিলেটের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে বক্তব্য রাখবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এ ছাড়া ২৩শে সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে পটুয়াখালী, ২৬শে সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগে, ১লা অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ, ৩রা অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চ করবে তারা। এর আগে রংপুর থেকে দিনাজপুর ও বগুড়া থেকে নওগাঁ- সৈয়দপুর হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত রোডমার্চ করেছে বিএনপি’র তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন। দুই বিভাগের এই রোডমার্চে প্রায় ১৫টি স্পটে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এসব বক্তব্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিন্ন বার্তা দিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই শীর্ষ দুই নেতা।
বলছেন, সরকারের সঙ্গে কেউ নেই। দেশের বাইরেও সরকার একঘরে। বিদেশি কোনো বন্ধুরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে নেই। দেশের সকল বিরোধী দল ও জনগণ একদিকে আর আওয়ামী লীগ আরেকদিকে। সরকার পতনের একদফা আন্দোলন শেষ ধাপে রয়েছে। অক্টোবরে শুরু হবে চূড়ান্ত আন্দোলন। সেই আন্দোলন সফল করতে যুবক-বৃদ্ধ-নারী সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে। শুধু সরকারের পতন ঘটালেই হবে না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত রাস্তায় থাকতে হবে। যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য সবাই প্রস্তুত থাকতে হবে। তরুণদের উদ্দেশ্যে আরেকটি তারা বার্তা দিচ্ছেন, গত ১৫ বছরে ৪ কোটি ৭০ লাখ তরুণ নতুন ভোটার হয়েছেন। কিন্তু এসব তরুণ গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে ভোটার হয়েও আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না তারা। ভোটাধিকার বঞ্চিত এসব তরুণকে আগামীতে সরকার পতন আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করছেন তারা। অতীতে দেশের সব আন্দোলন সফল করেছেন তরুণরা। এবারো একদফার আন্দোলন সফল করতে নেতৃত্ব দেবে তারা।
এদিকে বিএনপি’র একাধিক সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, রোডমার্চের মাধ্যমে জেলা-উপজেলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে চায় বিএনপি। অক্টোবরে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য জেলার নেতাদের প্রস্তুত থাকতে উদ্বুদ্ধ করতে চায় তারা। ঢাকা ঘেরাও কিংবা অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচির ডাক এলেই তা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করার আহ্বান জানানো হবে। এ ছাড়া সারা দেশেই সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার বার্তা দিচ্ছেন নেতারা। ওদিকে আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন সারির নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নয়াপল্টন কার্যালয়ের দোতলায় স্কাইপিতে কখনো গ্রুপে আবার কার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলছেন। নেতাদের পরামর্শ ও মতামত নিচ্ছেন তিনি।
বিএনপি’র চলমান আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়ে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি অহিংস পথে আন্দোলন করছে এবং সাধারণ মানুষকে আন্দোলনে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে। বিএনপি সাধারণ মানুষকে এই বার্তাটা দিচ্ছে- লগি-বৈঠা ছাড়াও শান্তিপূর্ণভাবে কীভাবে আন্দোলন করা যায়। সাধারণ মানুষের আন্দোলন দিয়েই চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের একটি কর্মসূচি থেকে আরেকটি কর্মসূচিতে লোকসংখ্যা বাড়ছে। আওয়ামী লীগ ও পুলিশ যতই বাধা দিচ্ছে ততই সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সত্য ও ন্যায়ের এই সংগ্রামে আমরা সফল হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মানবজমিনকে বলেন, আমরা যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি সেটা জনগণের দাবি। সেজন্য চলমান কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ একাত্মতা প্রকাশ করছে। আমরা এসব কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করছি, উদ্বুদ্ধ করছি। তিনি আরও বলেন, জনগণের দাবির সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো আন্দোলনই বৃথা যায় না। তাই আমাদের আন্দোলনও বৃথা যাবে না। আমাদের আন্দোলন চূড়ান্ত বিজয়ের পথে রয়েছে।
প্রস্তুত সিলেট: চার জেলা ঘুরে সিলেটে আজ ঢুকবে বিএনপি’র রোডমার্চ। বিকালে নগরের ঐতিহাসিক আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হবে এই রোডমার্চ। রোডমার্চকে ঘিরে সিলেট বিএনপিতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। গতকাল শুরু হয়েছে মঞ্চ নির্মাণ কাজ। সিলেটের আলীয়া মাদ্রাসা ময়দান অনেক বড় মাঠ। সেখানে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। এত লোক সমাগম ঘটানো সম্ভব হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সিলেট বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন সিলেট নগরের ৪২ ও জেলার ১৮টি ইউনিটের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জমায়েত হবে। পাশাপাশি সেখানে থাকবেন চার জেলা থেকে রোডমার্চ করে আসা নেতাকর্মীরা। ফলে সিলেটের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে বিপুলসংখ্যক লোক সমাগম ঘটবে। হয়তো লক্ষাধিক মানুষও উপস্থিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। এ কারণে তারা সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে রেখেছেন।
বিএনপি’র নেতারা জানিয়েছেন, সিলেটে রোডমার্চের বহরটি আসতে আসতে বিকাল হয়ে যাবে। আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে সমাপনী সমাবেশ করা হবে। রোডমার্চ সফল করতে ইতিমধ্যে সিলেটে এসেছেন বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। তারা সিলেটে সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়টি দেখভাল করছেন। ইতিমধ্যে গত মঙ্গলবার জেলা বিএনপি পরিচিতি সভা শেষে প্রস্তুতি সভা করেছে। মহানগর বিএনপি’র তরফ থেকে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। এ ছাড়া যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে এসে রোডমার্চ সফল করতে ঘন ঘন বৈঠক করছেন। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, গত ৪ দিন তিনি বিভাগের ৩ জেলায় প্রস্তুতি সভা করেছেন। রোডমার্চকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। এবং দলে দলে নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ এসে রোডমার্চে অংশ নেবে। তিনি বলেন, হবিগঞ্জের সমাবেশস্থল থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর বহর নিয়ে রোডমার্চে যোগ দেবেন। এরপর শেরপুর হয়ে সিলেটে পৌঁছবেন। সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, রোডমার্চকে কেন্দ্র করে সিলেট বিএনপি পরিবার ফের চাঙা হয়ে উঠেছে। প্রতিটি নেতাকর্মী যার যার অবস্থান থেকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়