রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সেবার মান সেকেলে। রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহৎ ব্যাংক সোনালীর ক্ষেত্রেও এ অভিযোগ বহু পুরনো। সেবা আধুনিকায়নের নামে গত কয়েক বছরে প্রযুক্তি খাতে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকটি। কোর ব্যাংকিং সলিউশনসহ (সিবিএস) নতুন নতুন সফটওয়্যার সংযোজনও হয়েছে। কেনা হয়েছে কয়েক হাজার কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ধরনের সার্ভার। যদিও শত শত কোটি টাকার এ বিনিয়োগ শেষ পর্যন্ত মুখ থুবড়ে পড়েছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে স্থবির হয়ে আছে সোনালী ব্যাংকের প্রযুক্তি ব্যবস্থা।
নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে টানা তিনদিন প্রায় অকার্যকর ছিল সোনালী ব্যাংকের গোটা প্রযুক্তি ব্যবস্থা। ব্যাংকটির সার্ভার পুরোপুরি ডাউন ছিল টানা ২৮ ঘণ্টা। এ ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছে সোনালী ব্যাংক। জোড়াতালি দিয়ে সিবিএস সারিয়ে তোলা হলেও এখনো স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে পারেনি ব্যাংকটি।
অনলাইনে টাকা জমা দেয়া, ব্যাংক হিসাবের বিবরণী সংগ্রহ, সরকারি বিভিন্ন সেবার মাশুল জমা দেয়ার মতো সাধারণ ব্যাংকিং সেবাও যথাসময়ে পাচ্ছেন না সোনালী ব্যাংকের গ্রাহকরা। চেক নগদায়নেও ব্যাংকটির গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রযুক্তিগত বিভ্রাটের কারণে সোনালী ব্যাংকের শাখাগুলোয় গ্রাহকদের সারি দীর্ঘ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার আগে হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছিল সোনালী ব্যাংক। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে হ্যাকাররা ব্যাংকটির আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ব্যবস্থার পাসওয়ার্ড হ্যাক করে আড়াই লাখ ডলার লুট করে নিয়েছিল। পরেও একাধিকবার সোনালী ব্যাংকের নেটওয়ার্কে হ্যাকারদের আক্রমণ হয়েছিল। ব্যাংকটির দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, সোনালী ব্যাংকের প্রযুক্তি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। এ কারণে মাঝেমধ্যেই ব্যাংকটির সিবিএসসহ বিভিন্ন সফটওয়্যার ও সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে যে পরিস্থিতি চলছে, সেটি অস্বাভাবিক। এ সময়ে ব্যাংকটির কোনো নেটওয়ার্ক হ্যাকারদের কবলে পড়েছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান জানিয়েছেন, ২৮ ঘণ্টা সার্ভার ডাউন থাকার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি কমিটি কাজ করছে। তবে ঠিক কী কারণে সার্ভার ডাউন হয়েছে, সেটি এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। এজন্য কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে।
আতাউর রহমান প্রধান বণিক বার্তাকে জানান, আগে সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক হিসাবায়ন সম্পন্ন করতে তিন-চারদিন লাগত। এবার ২০২১ সালের হিসাবায়ন মাত্র ৮ ঘণ্টায় সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।
সার্ভারের ওপর বাড়তি চাপ পড়ায় সেটি ডাউন হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
যদিও সোনালী ব্যাংকের অন্তত ছয়টি শাখার ব্যবস্থাপক বণিক বার্তাকে বলেছেন, অনেক দিন থেকেই সিবিএসসহ সোনালী ব্যাংকের অন্যান্য সফটওয়্যার সঠিকভাবে কাজ করছে না। সার্ভারে ডাটা ইনপুট দিলে নিতে পারে না। হঠাৎ করেই গতি দুর্বল হয়ে সার্ভার হ্যাং হয়ে যায়। প্রায়ই এমনটি হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকার সোনালী ব্যাংকের একটি শাখার ব্যবস্থাপক বলেন, ২ জানুয়ারি রাত ৩টার সময় ব্যাংক থেকে বাসায় ফিরতে হয়েছে। বহু চেষ্টা করেও শাখা থেকে ত্রুটি সারানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে প্রধান কার্যালয়ে যেতে হয়েছে। গিয়ে দেখি সারা দেশে শত শত শাখায় সমস্যা হলেও প্রধান কার্যালয়ে মাত্র চার-পাঁচজন লোক এ বিষয়ে কাজ করছেন। এর মধ্যে টেকনিক্যাল জনবল মাত্র দুজন। বাকিরা নন-টেকনিক্যাল। সোনালী ব্যাংকের মতো এত বৃহৎ একটি ব্যাংক এভাবে চলতে পারে না।
শাখা ব্যবস্থাপকরা বলছেন, গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই সোনালী ব্যাংকের কোর ব্যাংকিং সলিউশনের ত্রুটি বাড়তে থাকে। শেষ সপ্তাহে সিবিএসসহ অন্য সফটওয়্যারগুলো প্রায় অকার্যকর হয়ে যায়। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে বিভিন্ন মডিউল বন্ধ করে রাখা হয়।
চট্টগ্রামের একটি শাখার ব্যবস্থাপক বলেন, প্রতিদিন ইএফটির মাধ্যমে শত শত গ্রাহক টাকা জমা দেন। কিন্তু ব্যাংকের সফটওয়্যার সঠিকভাবে কাজ না করায় ভাউচারগুলো নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। সেবা নিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়া অনেক গ্রাহক মারমুখী হচ্ছেন। গ্রাহকদের খারাপ আচরণ বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হচ্ছে।
গত ৩ জানুয়ারি সোনালী ব্যাংকের রাজধানীর কলেজগেট শাখায় টাকা তুলতে যান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও ওইদিন ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারিনি। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আগের দিনও ওই শাখা থেকে গ্রাহকরা টাকা তুলতে পারেননি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সেবা এতটা নিম্নমানের হলে সেখানে গ্রাহকরা কেন যাবেন? সরকারি কিছু সেবার জন্যই বাধ্য হয়ে সোনালী ব্যাংকে যেতে হচ্ছে।
সোনালী ব্যাংকের প্রযুক্তিগত বিভ্রাটের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক জ্ঞাত রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সোনালীর পাশাপাশি অগ্রণী ব্যাংকের গ্রাহকরাও সেবা পেতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন। দুটি ব্যাংকেরই প্রযুক্তি ব্যবস্থা খুবই নাজুক। সোনালী ব্যাংকের গ্রাহকদের সেবা দিতে আরটিজিএস ব্যবস্থা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়