চার দশক আগে ঝিনাইদহ সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানে যুক্ত হন তিনি। পরে আসেন রাজনীতিতে। পৌর কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে সংসদ সদস্য পর্যন্ত হন। কিন্তু চোরাচালানের সেই চক্র থেকে বের হতে পারেননি। সেই বিরোধেই ভারতের কলকাতায় খুন হন আনোয়ারুল আজীম (আনার)।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও অন্ধকার জগতের লোক। খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আনোয়ারুলের বাল্যবন্ধু আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন। যিনি নিজেও সোনা পাচারকারী একটি চক্রের প্রধান। আর খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন পেশাদার সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়া, যিনি একসময় একটি চরমপন্থী সংগঠনের নেতা ছিলেন।
এই খুনের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, অপরাধজগতের সঙ্গে আনোয়ারুল আজীমের যোগাযোগ অনেক পুরোনো। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি নিজ জেলা ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তকেন্দ্রিক চোরাচালানে যুক্ত হন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে ঝিনাইদহ শহরের বাসিন্দা এক বড় সোনা চোরাচালানির হাত ধরে আনোয়ারুল যুক্ত হন আন্তর্দেশীয় চক্রের সঙ্গে। ধীরে ধীরে ঝিনাইদহ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সোনা চোরাকারবারের অন্যতম নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন আনোয়ারুল। সংসদ সদস্য হওয়ার আগপর্যন্ত আনোয়ারুলের বিরুদ্ধে চোরাচালান ও চোরাচালানকে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনায় অনেকগুলো মামলা ছিল। যদিও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কিছু মামলা থেকে রাজনৈতিক বিবেচনায় অব্যাহতি পান। বাকি মামলাগুলো থেকেও অব্যাহতি বা খালাস পান।
সংসদ সদস্য হওয়ার পর আনোয়ারুলের বিরুদ্ধে আর মামলা না হলেও ওই অঞ্চলে সোনা চোরাচালানের বড় নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিলেন বলে সরকারের একাধিক সংস্থার প্রতিবেদন ও সরেজমিন অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে। বিষয়টি স্থানীয় রাজনীতিক থেকে শুরু করে প্রশাসনের লোকজনও জানেন। কিন্তু সংসদ সদস্য হওয়ার পর এ নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে সাহস করেননি।
ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ রাজনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আনারের (আনোয়ারুল আজীম) চার দশকের অন্ধকার জীবন। রাজনীতিতে এসে এবং সংসদ সদস্য হয়ে সেই জীবনে আলো ফেলার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর অন্ধকার জীবন অন্ধকারেই মিলিয়ে গেল।’
প্রবীণ এই নেতার এমন মন্তব্যের কারণ, গত ১২ মে আনোয়ারুল ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন। পরে জানা যায়, ১৩ মে আনোয়ারুলকে খুন করে লাশ টুকরা টুকরা গুম করা হয়েছে সোনা চোরাচালানকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে। এখন পর্যন্ত লাশও পাওয়া যায়নি তাঁর।
সর্বশেষ গতকাল শনিবার (৮ জুন) কলকাতাভিত্তিক সংবাদপত্র আনন্দবাজার পত্রিকার এক খবরে সেখানকার তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে বলা হয়, আনোয়ারুল আজীম সীমান্তে সোনা পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি তিনি একটি টাকা পাচার চক্রেরও প্রধান ছিলেন। এ ছাড়া আনোয়ারুল খুনে সন্দেহভাজন আখতারুজ্জামানও সোনা পাচারে যুক্ত ছিলেন।
ভারতের সঙ্গে দেশের যে ৩২টি জেলার সীমান্ত রয়েছে, এর মধ্যে ঝিনাইদহ একটি। এই জেলার মহেশপুরের ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা ও নদীয়া জেলা (বাঘাডাঙ্গা সীমান্ত)। ঝিনাইদহ থেকে মহেশপুর যেতে হয় কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর উপজেলা পেরিয়ে। ঝিনাইদহ সদর থেকে মহেশপুরের দূরত্ব প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। মহেশপুর উপজেলার পাশেই চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা জীবননগর।
স্থানীয় পুলিশ, বিজিবি ও অন্য সূত্রগুলো বলছে, মহেশপুরের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত ৫৭ কিলোমিটারের। এর মধ্যে ১১ কিলোমিটার এলাকা কাঁটাতারবিহীন। এই সীমান্ত দিয়ে চোলাচালান হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এ ক্ষেত্রে পথ বা রুট হিসেবে কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও জীবননগরকে ব্যবহার করা হয়। আর কালীগঞ্জ উপজেলাটি হচ্ছে চোরাচালানকারীদের জন্য যাতায়াতের অন্যতম পথ।
সরকারি একটি সংস্থার সূত্র বলছে, আশির দশকের শুরুতে এই পথে ব্যাপকভাবে গরু ও মাদক চোরাচালান শুরু হয়। ওই সময় আনোয়ারুল আজীম চোরাচালানে যুক্ত হন। একপর্যায়ে তিনি সীমান্তকেন্দ্রিক কারবারে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। এরপর ১৯৮৯ সালে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৯৩ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
উত্থান
এই বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ১০ জন নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের একজন ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন আনোয়ারুল আজীম। মান্নান আগে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৫ সালে মান্নানের সঙ্গেই তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ভারতে পালিয়ে যান আনোয়ারুল। ওই সময় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়। তবে ২০০৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগে তাঁর কোনো পদ ছিল না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ ওয়াকিবহাল কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর চোরাচালানে আনোয়ারুলের প্রভাব বাড়তে থাকে। তত দিনে তিনি সোনা চোরাচালানকারী একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত হন। ওই চক্রের প্রধান ছিলেন ঝিনাইদহ সদরের পরিতোষ চক্রবর্তী। পরিতোষকে সোনা চোরাচালানে আনোয়ারুলের গুরু মনে করা হয়।
আনোয়ারুলের চোরাচালানে যুক্ততার বিষয়ে গত শুক্রবার দুপুরে কালীগঞ্জের নিশ্চিতপুরে তাঁর বাড়ির কাছে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কথা হয় তাঁর ছোট মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌসের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবার সম্পর্কে যেসব সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে, এগুলো ঠিক নয়। তাঁর বাবা কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। যেসব মামলা হয়েছিল, সেগুলো ষড়যন্ত্রমূলক বলে তিনি দাবি করেন।
খুনের মামলার আসামি
ঝিনাইদহ শহরের সোনার ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত পরিতোষ ২০১৩ সালে মারা যান। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তাঁর সঙ্গে আনোয়ারুলের সম্পর্ক ছিল বলে জানা গেছে। আনোয়ারের বিরুদ্ধে যে ২১টি মামলার তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে, এর মধ্যে ২টি মামলার অভিযোগপত্রে পরিতোষের সঙ্গে আনোয়ারুলের নামও এসেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের মে মাসে সোনার একটি চালান ধরিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থানার শ্যামপুরে গুলি করে হত্যা করা হয় তরিকুল সাইফুল নামের এক ব্যক্তিকে। ওই মামলার তদন্তে উঠে আসে, এই হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে আনোয়ারুল আজীম ও পরিতোষ চক্রবর্তী জড়িত। তখন এ ঘটনায় পরিতোষ চক্রবর্তী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তাতে তিনি আনোয়ারুল আজীমের নাম বলেছেন বলে জানা গেছে।
একই বছরের ডিসেম্বরে দামুড়হুদা থানার দর্শনা সীমান্তের কাছে ১২ কেজি সোনাসহ একটি ট্রাক জব্দ করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর (বর্তমান নাম: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি)। ওই মামলার তদন্তে পরিতোষের সঙ্গে আনোয়ারুলের নামও এসেছিল। এরপর আনোয়ারুল আবার ভারতে পালিয়ে যান।
এই দুই মামলায় আনোয়ারুল আজীমের সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আনোয়ারুল দেশে ফিরে আসেন। রেড নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়।
২০১২ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই দুই মামলায় আনোয়ারুলের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এমনকি পরিতোষ চক্রবর্তীসহ আরও চার সহযোগীর নামও মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার করা হয়।
আনোয়ারুলের বিরুদ্ধে অন্য মামলাগুলোর মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা তিনটি মামলা চোরাচালান–সংক্রান্ত। এর একটিতে রাজনৈতিক বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে অব্যাহতি পেয়েছেন। অন্য দুটি মামলায় পুলিশ তাঁকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে ১০টি মামলা ছিল। পরবর্তী সময়ে সব কটিতে তিনি খালাস পেয়েছেন। ছয়টি মামলা হয়েছে সরকারি কাজে বাধাসহ হামলার অভিযোগে। এসব মামলার একটিতে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। বাকি পাঁচটিতে খালাস পেয়েছেন।
পলাতক জীবন থেকে জনপ্রতিনিধি
বিএনপি সরকারের সময় পলাতক থাকা অবস্থায়ই আওয়ামী লীগের কালীগঞ্জ উপজেলা কমিটির পদ পেতে ব্যাপক চেষ্টা চালান আনোয়ারুল। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি দেশে ফেরেন। সোনা চোরাচালান ও খুনের মামলার আসামি হয়ে ওই বছরই আবার ভারতে পালিয়ে যান। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি দেশে ফেরেন এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
জেলা আওয়ামী লীগের দুজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের আপত্তি ছিল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতার সুপারিশে আনোয়ারুলকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরে ওই দুই নেতার আশীর্বাদে তিনি ২০১৪ সালের বিনা ভোটের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন। এরপর বাকি দুটি সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন।
জেলা আওয়ামী লীগের ওই নেতাদের ভাষ্য, আনোয়ারুল আজীম যে চোরাচালানে যুক্ত, এটা দলের স্থানীয় নেতারা জানেন। বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি এসেছে। কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রভাবশালী একাধিক নেতার আশীর্বাদ থাকায় এ নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আনোয়ারুল আজীম ব্যবসা করতেন বলে জানি। তাঁর বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা নেই। এ জন্য কিছু বলতেও পারছি না।’
আনোয়ারুলের উত্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের কাছেও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে আনোয়ারুলকে আমরা চিনতাম না। তিনি দীর্ঘদিন ভারতে পলাতক ছিলেন। দল ক্ষমতায় আসার পর তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন, পরে সংসদ সদস্য হলেন। দল ভালো মনে করেছে, তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে।’
খুনের নেপথ্যে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সীমান্তকেন্দ্রিক তৎপরতার বিষয়ে ওয়াকিবহাল একাধিক সূত্র বলছে, আনোয়ারুল আজীম খুনের নেপথ্যে সোনা চোরাচালানকেন্দ্রিক বিরোধ। দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইদহ সীমান্ত দিয়ে সোনা চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন আনোয়ারুল আজীম, আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন ও যশোর এলাকার আওয়ামী লীগের এক নেতা (সাবেক সংসদ সদস্য)। আনোয়ারুল ও আক্তারুজ্জামান ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একসময় একই চক্রে যুক্ত ছিলেন। কয়েক বছর ধরে তাঁরা দুজনে আলাদাভাবে সোনার কারবার করছিলেন। কিন্তু ঝামেলা তৈরি হয় একের পর এক সোনার চালান ধরা পড়াকে কেন্দ্র করে। এ সময় সীমান্ত এলাকায় আক্তারুজ্জামান ও যশোর অঞ্চলের ওই নেতার অনেকগুলো চালান ধরা পড়ছিল। কিন্তু আনোয়ারুলের কোনো চালান ধরা পড়ছিল না। এটাকে কেন্দ্র করে সোনা পাচারকারী চক্রগুলোর মধ্যে ভুল–বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। অন্যদের সন্দেহ, তাদের চালান ধরা পড়ার পেছনে আনোয়ারুলের হাত আছে।
ঝিনাইদহ অঞ্চলের অপরাধ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আক্তারুজ্জামানের চালান ধরা পড়ছিল বেশি। এতে তাঁর লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৭ জানুয়ারি মহেশপুরে সাড়ে চার কেজি সোনার একটি চালান ধরিয়ে দেন। ওই চালান আনোয়ারুল আজীমের ছিল। এর জেরে আনোয়ারুলের সহযোগী তরিকুল ইসলাম (আকেলে) ওই দিনই মহেশপুরের বাঘাডাঙ্গা গ্রামে দুজনকে গুলি করে হত্যা করেন। এরপর তরিকুল ভারতে পালিয়ে যান। এ নিয়েও আক্তারুজ্জামান আরও ক্ষিপ্ত হন আনোয়ারুলের ওপর।
এই জোড়া খুনের বাদী রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত দুজনের মধ্যে শামীম ইসলাম তাঁর ভাই এবং মন্টু মণ্ডল তাঁর চাচা। এই খুনের প্রধান আসামি তরিকুল ইসলাম একজন চোরাচালানকারী। তাঁর একটি চালান ধরা পড়ার পর তাঁর ভাই শামীমকে সন্দেহ করেন। এর জেরেই দুজনকে গুলি করে হত্যা করেন। রফিক বলেন, ‘সত্য-মিথ্যা জানি না। তরিকুলের বিষয়ে যতটুকু শুনেছি, সে আনারের (আনোয়ারুল আজীম) লোক।’
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান প্রথম আলোকে বলেন, তরিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে এই বিষয়গুলো জানা যেত। যেহেতু তাঁকে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি, তাই এ বিষয়ে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে চেষ্টা চলছে। তবে পুলিশ সুপার আনোয়ারুলের খুনের কারণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, এই জোড়া খুনের দুই দিন পর ১৯ জানুয়ারি আনোয়ারুল আজীম চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। এরপর তিনি ১৬ মার্চ ভারতে যান। সর্বশেষ ১২ মে তিনি ভারতে যান। এর এক দিন পর খুন হন। এই খুনের জন্য আক্তারুজ্জামানকেই মূল পরিকল্পনাকারী বলছে বাংলাদেশ ও ভারতের কলকাতার পুলিশ।
মহেশপুর, সোনা পাচারের গুরুত্বপূর্ণ পথ
বিজিবি বলছে, ভারতে যে স্বর্ণ পাচার হয়, অধিকাংশই পাচার হয় দেশের পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে। এর মধ্যে ঝিনাইদহের মহেশপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট বা পথ। চলতি বছর এই রুটে পাচারের চেষ্টাকালে বেশ কয়েকটি চালান বিজিবির হাতে ধরা পড়েছে।
২০২৩ সালে মহেশপুর সীমান্ত এলাকা থেকে ৩৮ কেজি ওজনের সোনা আটক করেছে বিজিবি, যার বাজারমূল্য ২৬ কোটি টাকার বেশি। আর চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে আটক করা হয় ২৭ কেজির বেশি সোনা।
এর মধ্যে সর্বশেষ গত ১৬ এপ্রিল মহেশপুরের পলিয়ানপুর সীমান্তের ছয়ঘড়িয়া থেকে ৪ কেজি ৬৩৩ গ্রাম, এর আগে ৮ এপ্রিল নগরবন্নী এলাকা থেকে সাড়ে ৩ কেজি সোনার চালান ধরে বিজিবি।
বিজিবির মহেশপুর ব্যাটালিয়নের (৫৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, মহেশপুর সীমান্তে ভারতের পক্ষ থেকে বেশির ভাগ অংশেই কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো চোরাচালান হয়, সেটি অগোচরে হতে পারে। বিজিবি এই সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়