নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় এ সময়ের মধ্যে পরিবহন পুলের অধিকাংশ গাড়ির চাকা ঘোরেনি। অনলাইনে পাঠদান হলেও বন্ধ ছিল পরীক্ষা কার্যক্রম। সশরীরে আয়োজন করা হয়নি সভা, সেমিনার কিংবা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মতো একাডেমিক অনুষ্ঠান। বছরজুড়ে তালা ঝুলেছে সিংহভাগ গবেষণাগারের দরজায়। আবাসিক হল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের খাবার কিংবা কোনো উদযাপনে ভর্তুকির প্রয়োজন পড়েনি। ঘটা করে উদযাপন করা হয়নি কোনো দিবস-উৎসব। একইভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির মতো পরিষেবা খাতগুলোতেও সেই অর্থে স্বাভাবিক সময়ের মতো ব্যয় হয়নি।
তার পরও স্থবির হয়ে পড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনায় সরকারের ব্যয় কমছে না। উল্টো ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্থাৎ করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পেছনে সরকারের ব্যয় বেড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনুন্নয়ন খাতে ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৫ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত হিসাবে সে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ থাকলেও চলতি অর্থবছরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যয়ের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটেও অনুন্নয়ন বরাদ্দের আকার গত অর্থবছরের চেয়ে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল।
করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনা সত্ত্বেও ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টিকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, করোনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রমের পরিধি আগের তুলনায় অনেক কম ছিল। তাই এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যয় বৃদ্ধি কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে আমি মনে করি। যদিও ঠিক কী কারণে ব্যয় বাড়ল, সেটি নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। তবে ব্যয়ের পরিমাণ একবার কমালে পরবর্তী সময়ে বরাদ্দ কমে যেতে পারে—এমন আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খাত সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়েছে বলে মনে করেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপাচার্য।
ইউজিসির আর্থিক বিষয়গুলো দেখভাল করেন কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য ড. মো. আবু তাহের। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এর কয়েকটি কারণ তুলে ধরেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের এ অধ্যাপক বলেন, করোনার মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অ্যাডহক ও মাস্টাররোলে নিয়োগ বন্ধ ছিল না। নতুন করে শিক্ষক ও কর্মকর্তাও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অনেক শিক্ষককে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। আবার অনেক শিক্ষককে নিয়ম না থাকলেও আপার গ্রেডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। করোনাকালে বিশেষ কিছু খাতে অর্থ ব্যয় করা লেগেছে। এসব কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যয় বেড়েছে।
এদিকে আগামী অর্থবছরেও বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ২০২১-২২ অর্থবছরে অনুন্নয়ন খাতের ব্যয় বাবদ ৭ হাজার ৪১৩ কোটি টাকার চাহিদার কথা ইউজিসিকে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বরাদ্দের চেয়ে ১ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে বেতন পরিশোধ বাবদ ৩৩২ কোটি ও ভাতাদি বাবদ ৫৩৬ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
চাহিদা পর্যালোচনা করে এরই মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী অর্থবছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য বাজেট প্রণয়ন করেছে ইউজিসি। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের ৪৯ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৫ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকার অনুন্নয়ন বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ বাজেট আজ ইউজিসির ১৬০তম পূর্ণ কমিশন সভায় চূড়ান্ত করার জন্য উত্থাপন করা হবে।
গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ছে ৫১ শতাংশ
আগামী অর্থবছরের জন্য দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণা খাতে ১০০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে ইউজিসি। যদিও গত বছরে এ বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ইউজিসি বলছে, নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণা সংকটের বিষয়টি তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে। এছাড়া গুণগত গবেষণা না থাকায় উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে যেতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তাই বিশেষ বিবেচনায় গবেষণা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনেক বড় উল্লম্ফন ঘটানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের বণিক বার্তাকে বলেন, উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্যই হলো নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি। যদিও গবেষণা কম হওয়ার কারণে উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের ক্ষেত্রে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র খুবই অনুজ্জ্বল। দেশের উন্নয়নে গুণগত গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে প্রায়োগিক গবেষণায় বেশি অর্থ ব্যয় করার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছে ইউজিসি। আমরা পদোন্নতি পাওয়ার জন্য গবেষণা চাই না। আমরা সত্যিকারের প্রায়োগিক ও সৃষ্টিশীল গবেষণা কার্যক্রম চাই।
উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ১২৬ কোটি টাকা
আগামী অর্থবছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত ৪৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ৫৩টি প্রকল্পের অনুকূলে উন্নয়ন বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩১ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক অর্থবছরের ব্যবধানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে উন্নয়ন বরাদ্দ বৃদ্ধির হার ৩৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়