খুচরায় সবচেয়ে কম দামি খেজুর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ভালো মানের খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে। অথচ দেশের আমদানিকারকরা দামি ও কম দামি গড়পড়তা সব খেজুরের শুল্কায়ন করছেন গড়ে ১০৫ টাকা হারে। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ ভোক্তারা খেজুর কিনছেন বাড়তি দামে।
সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দামি ও কম দামি খেজুরের শুল্কায়নে পৃথক শ্রেণি রাখেনি। ফলে সব খেজুর একই দামে শুল্কায়ন হওয়ায় দামি খেজুরের ক্ষেত্রে আমদানিকারকরা ইচ্ছামতো মুনাফা করছেন। এতে সাধারণ ক্রেতারা ঠকছেন।
গত ২৫ মার্চ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন খেজুরের পাইকারি আড়ত ফলমণ্ডিতে অভিযান চালায়। অভিযানের আগে খেজুর আমদানি নিয়ে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করে প্রশাসন। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করেছে ম্যাজিস্ট্রেসি টিম। কারসাজির মাধ্যমে আমদানিকারক থেকে শুরু করে মধ্যস্বত্বভোগীরা এই খেজুরের বাজার থেকে কয়েক শ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে তারা। তাদের মতে, তিন পর্যায়ে কারসাজি হয়েছে—আমদানিকারক, কমিশন এজেন্ট ও পাইকারি ব্যবসায়ী। ঢাকা ও চট্টগ্রামের চারজন আমদানিকারকই এনেছেন ২২ হাজার মেট্রিক টন খেজুর। তাঁদের মাধ্যমেই এই কারসাজি হয়েছে বলে ভাষ্য জেলা প্রশাসনের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বাজারে বর্তমানে অভিজাত হিসেবে পরিচিত মিসরের মেডজুল খেজুর প্রতি কেজি পাইকারি পর্যায়ে এক হাজার ৩০০ এবং খুচরায় এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া পাইকারি দরে ইরানের মরিয়ম খেজুর এক হাজার ২০০, মেহেরাজ মাবরুম ৮৫০, মেহেরা আজোয়া ৭০০, মায়াবি আজোয়া ৭৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ডলার সংকটে আমদানি তুলনামূলক কম হওয়ার পাশাপাশি সৌদি আরব থেকে অন্যান্য দেশও খেজুর আমদানি বাড়িয়ে দেওয়ায় দাম বাড়ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের।
২৫ মার্চ অভিযানে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আল্লাহর রহমত স্টোর নামের একটি প্রতিষ্ঠান ৩৩টি ঋণপত্রের আওতায় গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত দুই হাজার ৫৭২ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করে। চট্টগ্রাম কাস্টমসে তারা যে কাগজপত্র জমা দিয়েছে তাতে দেখা যায়, সব ধরনের খেজুরের কেজিপ্রতি আমদানি ব্যয় দেখানো হয়েছে ৭০ টাকা ৫৩ পয়সা। প্রতিষ্ঠানটি একই কোডের আওতায় সব ধরনের খেজুর আমদানি করেছে। অথচ বাজারে আমরা বিভিন্ন নামের বিভিন্ন মানের (গ্রেড) খেজুর দেখি। এতে প্রমাণিত হয় যে তারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে এবং আন্ডার-ইনভয়েসিং করেছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে আমদানি হওয়া সব খেজুরই আসে কন্টেইনারে জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আমদানির পর প্রতি কেজি খেজুর একটি এইচএস কোডের ভিত্তিতে শুল্কায়ন করে কাস্টমস। এই কোডে প্যাকেটজাত খেজুরে তিন কেজির বেশি ওজনের ক্ষেত্রে শুল্কহার ১৫ শতাংশ। আর তিন কেজির নিচে শুল্কহার ৩০ শতাংশ। সব ধরনের খেজুর যত দামেই আমদানি করা হোক না কেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মাত্র এক ডলার ধরেই তার ওপর শুল্কায়ন করছে।
জানতে চাইলে খেজুর শুল্কায়ন গ্রুপের চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা রেকর্ড ভ্যালু ধরেই খেজুর শুল্কায়ন করে আসছি। এই নিয়ম আগে থেকেই চলছে। তবে সম্প্রতি খেজুর নিয়ে জেলা প্রশাসনের অভিযান এবং আলোচনার পর আমরাও মানভেদে ফিক্সড ডিউটি (শতাংশ নয়) করার জন্য রাজস্ব বোর্ডে প্রস্তাব দিচ্ছি।’
চট্টগ্রামভিত্তিক এক খেজুর আমদানিকারক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ধরুন জাহিদি খেজুর কেজি এক ডলারের নিচে কেনা, তাতে টাকা পাচার হয়নি। কিন্তু অন্য খেজুর তো দু-তিন ডলারে কেনা হয়েছে। সেই খেজুর এক ডলার কেনা দেখানো মানেই তো বাকি টাকা আন্ডার-ইনভয়েসিং করে পাচার করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য মতে, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে ৫০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি খেজুর আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯ হাজার ২১১ মেট্রিন টন খেজুর আমদানি করেছে চট্টগ্রামের ফলমণ্ডির অ্যারাবিয়ান ডেটস ফ্যাক্টরি লিমিটেড। এই পরিমাণ খেজুর আমদানি করতে প্রতিষ্ঠানটির খরচ হয়েছে ৭৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ কেজিপ্রতি আমদানি খরচ পড়েছে ৮২ টাকা ৬৪ পয়সা। বলা হয়ে থাকে, বাংলাদেশে খেজুরের বাজারের নাটের গুরু এই অ্যারাবিয়ান ডেটস ফ্যাক্টরি। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। কথা বলতে তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি। তবে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন নুরু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রশাসন থেকে যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। কারণ এইচএস কোড সরকার করে, সেখানে আমাদের কোনো হাত নেই।’ আমদানি ও ভোক্তা পর্যায়ে দামে বিশাল ফারাক থাকার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বাজারমূল্য কে নির্ধারণ করবে? এটা দেখার কেউ তো নেই। তা ছাড়া ব্যবসায়ীরা যখন লস দেয় তখন কেউ আসে না।’ দামের অতিরিক্ত ব্যবধানের জন্য সুবিধাবাদী কিছু ব্যবসায়ীকে দায়ী করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়