২০ দলে অস্পষ্টতা, ভিন্নপথে ঐক্যফ্রন্ট

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের বৃহৎ ঐক্য গড়তে বিএনপির কর্মপ্রক্রিয়া নিয়ে দলটির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে অস্পষ্টতা আছে। নতুন জোট কাঠামো কিংবা রূপরেখার বিষয়ে কোনো ধারণা এখনো পায়নি শরিকরা।

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি ঐক্য তৈরির চেষ্টা করলেও তাদের আরেক ‘নির্বাচনী জোট’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আছে ভিন্নপথে। বাম দলগুলের সমন্বয়ে আলাদা জোট গঠন করে জাতীয় সরকারের দাবিতে সোচ্চার হতে চায় তারা।

গত ২৮ জানুয়ারি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাজনৈতিক ঐক্য গঠনপ্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর থেকে ছোট-বড় বেশ কিছু দলের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সমমনা প্রায় সব দলের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শেষ হলেও দুই মাসে এ প্রক্রিয়ার কোনো ভিত্তি তৈরি করতে পারেনি দলটি।

এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিএনপির এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় তাঁরা তিন ধরনের মনোভাব পেয়েছেন। কয়েকটি দল দৃশ্যত সরকারবিরোধী কঠোর মনোভাব দেখালেও তারা বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। কয়েকটি দল যেকোনো উপায়ে বিএনপির নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার পক্ষে। আর কয়েকটি দল তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতার অংশীদার হতে চায়।

ঐক্যপ্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে ২০ দলের নেতাদের বিক্ষিপ্ত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বিদ্যমান জোট বিলুপ্ত হবে কি না, নতুন জোটসঙ্গী কারা হবে, জোটে জামায়াতের অবস্থান কী হবে, আন্দোলনের রুপরেখা কী—এসব বিষয়ে শরিকদের মতামত নেওয়া হয়। কিন্তু বিএনপির অবস্থান শরিকদের জানানো হয়নি।

২০ দলের শরিক এনডিপি চেয়ারম্যান আবু তাহের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক হলেও আমরা কোনো ধারণাই পাইনি। আমাদের পুরোপুরি অন্ধকারে রাখা হয়েছে। এতে জোটের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে। বিভাজন তৈরি হচ্ছে। ’ 

সম্প্রতি বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) তোপখানার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির জোটসঙ্গী জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং গণফোরাম (একাংশ) নেতারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির এক নেতাও ছিলেন। সেই আলোচনায় নেতারা পৃথক জোট এবং জাতীয় সরকারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে পৃথক একটি জোট গঠনের জন্য তাঁরা চেষ্টা করছেন। তাঁরা বিকল্প শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চান। তিনি বলেন, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সব দিক বিবেচনা করে বিএনপির সরকারবিরোধী ঐক্যের সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকার ইচ্ছা আছে তাঁদের।

সংশ্লিষ্ট নেতাদের মতে, সরকারবিরোধী আন্দোলনের ফসল কি নির্দলীয় সরকার, না কি জাতীয় সরকার হবে—তা নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে স্পষ্ট মতবিরোধ আছে। এত দিন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে আসা কিছু রাজনৈতিক দল হঠাৎ জাতীয় সরকার নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। এলডিপি, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের মতো দলগুলো এখন বলছে, রাজনৈতিক সংস্কার দরকার। এটি শুধু তিন মাসে সম্ভব নয়।

তবে লন্ডনে গত সোমবার এক আলোচনাসভায় বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এর আগে জাতীয় সরকার নয়।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঐক্যপ্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা ২২ বছর ধরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে আছি। একটি জোট থাকতে অন্য জোটের দরকার হয় না। ’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাই। যারা ক্ষমতায় এসে সরকারের দীর্ঘদিনের দুঃশাসন ও অপশাসনের বিচার করবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করবে। তারপর সুষ্ঠু পরিবেশে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ’

গত ১৪ মার্চ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের সঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বৈঠক করেছেন। বৈঠকে জাতীয় সরকারের দাবিতে আলাদা জোট গঠন ও আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর কয়েক দিন আগে অলি আহমদের বাসায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান। সেখানে বিএনপি নেতারা জাতীয় সরকার নিয়ে অলি আহমদ কেন সোচ্চার, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিএনপি নেতারা বলেন, জাতীয় সরকার চাইলেও আন্দোলন করতে হবে। সে আন্দোলনের নেতৃত্ব তো বিএনপিকেই দিতে হবে। সরকার গঠন হলে বিএনপিকে সামনে রেখেই তা হতে হবে। তাহলে কেন আগে জাতীয় সরকারের কথা আসছে। আগে তো ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। বিএনপি নেতারা দাবি করেন, তাঁদের এই বক্তব্যের সঙ্গে অলি আহমদ একমত হয়েছেন।    

তার পরও বিএনপি নেতারা মনে করেন, যার যে দাবি হোক, সবাই এ সরকারের পতন চায়। এ দাবিতে সরকারবিরোধী সব দলকে একসূত্রে আনা যাবে। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে, দলের মধ্যে ঐক্যও হবে।   
এই বিভাগের আরও খবর
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন নাসির উদ্দীন

প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন নাসির উদ্দীন

ভোরের কাগজ
ঝালকাঠি-১ আসনের সাবেক এমপি শাহজাহান ওমর গ্রেফতার

ঝালকাঠি-১ আসনের সাবেক এমপি শাহজাহান ওমর গ্রেফতার

জনকণ্ঠ
জয়কে অপহরণ মামলা : জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান

জয়কে অপহরণ মামলা : জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান

নয়া দিগন্ত
প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে ড. ইউনূস

প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে ড. ইউনূস

জনকণ্ঠ
গাজীপুরে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট

গাজীপুরে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট

বিডি প্রতিদিন
পালানোর সময় গাজীপুরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র গ্রেপ্তার

পালানোর সময় গাজীপুরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র গ্রেপ্তার

দৈনিক ইত্তেফাক
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া