২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বদলে যায় বিশ্ব। এই হামলার জেরেই আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় মার্কিন সামরিক বাহিনী।
পরবর্তীতে মার্কিন নেতৃত্বের ন্যাটো সামরিক জোটের বহুজাতিক বাহিনী আফগানিস্তানে আসে। বহুজাতিক এই বাহিনীর সাথে দেশটির ক্ষমতাচ্যুত সশস্ত্র রাজনৈতিক দল তালেবান একটানা ২০ বছর যুদ্ধ চালিয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপির তথ্য অনুযায়ী, ২০ বছরের একটানা যুদ্ধে সব পক্ষ ও সাধারণ আফগান নাগরিকসহ এক লাখ ৭০ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে।
এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০ বছরে দুই হাজার চার শ' ৪৮ মার্কিন সৈন্যসহ মোট তিন হাজার পাঁচ শ' ৯২ বিদেশী সৈন্য আফগানিস্তানে নিহত হয়েছে। এছাড়া আরো তিন হাজার আট শ' ৪৬ মার্কিন ঠিকাদার ২০ বছরের যুদ্ধে প্রাণ হারান।
এছাড়া আফগান সামরিক বাহিনীর ৬৬ হাজার সৈন্য, ৫১ হাজার এক শ' ৯১ তালেবান যোদ্ধা ও ৪৭ হাজার দুই ৪৫ বেসামরিক আফগান নাগরিক যুদ্ধে নিহত হন বলে এপির প্রতিবেদনে বলা হয়।
এপির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০ বছরে মোট চার শ' ৪৪ ত্রাণকর্মী ও ৭২ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
অপরদিকে রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডারস আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজকে জানায়, ২০ বছর আফগানিস্তানে যুদ্ধে ১৬ বিদেশী সাংবাদিকসহ এক শ'র বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
আফগান রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল সলিডারিটি মুভমেন্টের প্রধান সাইয়েদ ইসহাক গাইলানি বলেন, 'গত ২০ বছরে আমরা আফগানিস্তানে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা দেখেছি, এমনকি 'সকল বোমার জননী' (মাদার অব অল বোম্বস) আফগানিস্তানে প্রয়োগ করা হয়েছে। আত্মঘাতী হামলায়ও অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। উভয়পক্ষেই আফগানদের হত্যা করা হয়েছে।'
অপর রাজনৈতিক দল শুরা-ই-আলী রাহ-ই-নাজাতের প্রধান সাইয়েদ আকবর আগা বলেন, 'মার্কিনিরা মসজিদে, গ্রামে ও অন্য স্থানে বিবাহ অনুষ্ঠান, জানাজা, সমাবেশে নির্বিচারে বোমা হামলা করেছে। যুদ্ধের সময়, তালেবান নিহত হয়েছে, বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে, আফগান সামরিক বাহিনীর সদস্য ও সরকারি কর্মচারীরা নিহত হয়েছে এবং মার্কিনিরাও নিহত হয়েছে।'
কাবুলের বাসিন্দা মোহাম্মদ আকবর নিয়াজি বলেন, 'মার্কিন সৈন্য ও অন্যরা এখানে এসেছিলো। ২০ বছরের যুদ্ধে তাদের কেউ নিহত হয়েছে এবং বাকিরা ফিরে গিয়েছে। কিন্তু বৃহত্তম ক্ষতি বহন করছে আফগান সামরিক বাহিনী, বেসামরিক লোকজন ও তালেবান এবং তারা সকলেই আফগান। তারা সবাই ছিলো পরস্পরের ভাই কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের ষড়যন্ত্রে তাদের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে।'
কাবুলের অপর এক বাসিন্দা মোহাম্মদ হারুন বলেন, 'আফগানরা বিপুল ক্ষতি বহন করছে। হোক সরকারি বাহিনীর সদস্য নিহত বা তালেবান, তারা সকলেই ছিলো আফগান।'
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার জেরে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ হামলার জন্য আফগানিস্তানে আশ্রয়ে থাকা আলকায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করেন। ওই সময় আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের কাছে ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানান বুশ।
তালেবান সরকার ওসামা বিন লাদেনকে তুলে দেয়ার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে মার্কিনিদের কাছে প্রমাণ চায়। প্রমাণ ছাড়া তারা ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের কাছে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
বুশ প্রশাসন ও তালেবানের মধ্যে বিরোধের জেরে ২০০১ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন শুরু করে মার্কিন বাহিনী। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসজ্জ্বিত মার্কিন সৈন্যদের হামলায় তালেবান সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়।
তবে একটানা দুই দশক যুদ্ধ চলতে থাকে দেশটিতে।
এরইমধ্যে আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের সদস্য দেশগুলোও যুক্ত হয়। মার্কিনিদের সমর্থনে নতুন প্রশাসন ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠে দেশটিতে।
২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন সৈন্যদের এক ঝটিকা অভিযানে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন। ২০১৩ সালে অজ্ঞাতবাসে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের মৃত্যু হয়।
তা স্বত্ত্বেও তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখে।
দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বের বহুজাতিক বাহিনীর দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা অনুসারে ৩১ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে বহুজাতিক বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের ডেডলাইন থাকলেও ৩০ আগস্ট সম্পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহার সম্পন্ন হয়।
মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন থাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালেবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। তালেবানের অভিযোগ, আশরাফ গনির নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মে মাসে বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহারের মধ্যেই পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো শুরু করে তালেবান।
৬ আগস্ট প্রথম প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলীয় নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী যারানজ দখল করে তারা। যারানজ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ১০ দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় রাজধানী কাবুলে পৌঁছে যায় তালেবান যোদ্ধারা। তালেবানের অগ্রসরে আশরাফ গনির কাবুল ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার জেরে আফগান প্রশাসন ভেঙে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ আগস্ট কাবুলে প্রবেশ করে তালেবান যোদ্ধারা।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়