ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে নাকি টেক্কা দিচ্ছেন আরববিশ্বের এক রানি!
তিনি ফ্যাশন সচেতন, উচ্চশিক্ষিতা, আধুনিকা। তবে ব্রিটেনের রাজপরিবারের সম্ভ্রম আদায় করেছেন সম্পূর্ণ অন্য কারণে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
সমালোচকরা বলেন, কৌলীন্য নিয়ে বরাবরই বাকিংহাম প্যালেস নাক উঁচু। সেই বাকিংহাম আমন্ত্রণ জানিয়েছিল আরবের এই রানিকে। তার সম্মানে রানির খাস বাসভবন উইন্ডসর দুর্গে বসানো হয়েছিল রাজ পরিবারের রাজকীয় খানাপিনার আসর, গ্র্যান্ড ব্যাঙ্কোয়েট।
আরববিশ্বের ওই রানির নাম মোজা বিনতে নাসের। রাজত্ব আরবের দেশ কাতারে। কাতারের সাবেক রাজা শেখ হামাদ বিন খালিফা আল থানির স্ত্রী। আর বর্তমান রাজা শেখ থামিম বিন হামাদ আল থানির মা।
বয়স নেহায়েৎ কম নয়। ৭ সন্তানের জননী নাসের। তবে ব্রিটেন সফরে যখন গিয়েছিলেন, তখন তাকে দেখে মুগ্ধ ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম তাঁর তুলনা টেনেছিল চিত্র পরিচালক আলফ্রেড হিচককের নায়িকাদের সঙ্গে।
সিনেমাপ্রেমীরা বলেন, হিচককের নায়িকাদের বৈশিষ্ট্য হল তারা প্রত্যেকেই স্টাইলিশ, অভিজাত, রাজোচিত এবং অদ্ভুত এক ঠান্ডা ব্যক্তিত্বের হালকা মুখোশ পরা নারী, যার ভিতরে ধিকধিক আগুন চাপা রয়েছে। ব্রিটেনের ফ্যাশন পত্রিকা ভ্যানিটি ফেয়ার লিখেছিল, হিচককের নায়িকাদের সঙ্গে যদি রাজকীয় প্রাচুর্য মিশিয়ে দেওয়া হয় তবে ইনি তার মূর্ত প্রতীক। আমরা মুগ্ধ।
তবে উপমাটি নাসেরের একটি দিকের বর্ণনা দিয়েছিল। কাতারের রানি আর অধুনা রাজমাতা নাসের নিজেকে ফ্যাশন, রাজকীয়তা আর আভিজাত্যের উর্ধ্বে নিয়ে গিয়েছেন নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে। রাজকীয় প্রাচুর্যতা অবশ্য তাঁর বিয়ের সূত্রে পাওয়া। তবে কাতারের রানি হিসেবে তিনি যে সম্পত্তির মালকিন, তাতে ব্রিটেনের রাজপরিবারের যাবতীয় সম্পদ অন্তত পাঁচবার কিনে ফেলা যাবে।
ওই বিপুল অর্থ আর কাতারের মাটির নীচে নিহিত সম্পদের ভরসায় নাসের আর পাঁচজন রানির মতোই পায়ে পা তুলে আরামের জীবন কাটাতে পারতেন। তাতে তার ফ্যাশনদুরস্ত পোশাক-আশাকে কমতি হত না। আরববিশ্বের অন্য রানিরাও সে ভাবেই থাকেন।
কিন্তু নাসের ঠিক করলেন তিনি দেশের কাজ করবেন। দেশের উন্নতিতে কাজে লাগবেন। কাতারের সম্পদ একদিন ফুরোবেই। তারপরও যাতে কাতারের প্রাসঙ্গিকতা কমে না যায় তারই চেষ্টা শুরু করলেন নাসের। আর প্রথমেই জোর দিলেন শিক্ষায়।
বিশ্বের আর কোনো দেশে শুধু শিক্ষার জন্য নিয়োজিত কোনো শহর সম্ভবত নেই। কাতারে নাসের তৈরি করলেন এডুকেশন সিটি। এমন একটি শহর যেখানে আধুনিক শিক্ষার সবরকম ব্যবস্থা রয়েছে। সেই শহরের এক একটি শিক্ষাভবনের স্থাপত্য এবং আধুনিক প্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধা দেখে অবাক হয়েছে বিশ্বের সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বমানের নামী সব বিশ্ববিদ্যলয় নিজেদের শাখা খুলেছে কাতারের শিক্ষা-শহরে।
কাতার রাজতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু রাজতন্ত্রকে টিকে থাকতে হলে প্রজাদের সমর্থন চাই। কাতারের রানি তাই তৈরি করেন আরব ডেমোক্রেসি ফাউন্ডেশন। দেশের গুণী ব্যক্তিদের নিয়ে তৈরি এই প্রতিষ্ঠান নজর রাখে দেশে গণতন্ত্র রক্ষা করা হচ্ছে কি না।
আসলে নাসেরের বাবা ছিলেন কাতারের রাজার বিরোধী পক্ষ। প্রজাদের হয়ে কথা বলতেন তিনি। এই নিয়ে পূর্বতন রাজার কোপে পড়ে একবার সপরিবারে কাতার ছাড়তে হয়েছিল নাসরের বাবাকে। পরে তারই কন্যার বিয়ে হয় রাজপরিবারে। সেই নাসের প্রজাদের কথা না ভাবলে কে ভাববেন!
কাতারর রানি হিসেবে আরও অনেক কাজ করেছেন নাসের। একটা সময়ে শুধু তেল বিক্রির অর্থে যেমন চলছে চলুক নীতিতে এখনো কাতার গত ২০ বছরে উন্নতির শিখরে পৌঁছে গিয়েছে। সবটাই হয়েছে নাসেরের তৈরি কাতার ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে।
কাতারের তরুণদের চাকরি দেয়ার জন্য তৈরি করেছেন সিলটেক প্রকল্প, নাসেরের উদ্যোগে কাতারে তৈরি হয়েছে আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ, শিশু এবং মহিলাদের চিকিৎসার আলাদা হাসপাতাল, চিকিৎসা সংক্রান্ত মেডিকেল রিসার্চ সেন্টার। যার উন্নতির স্বার্থে রাজ পরিবারের তরফে ৭৯০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকার সমান।
এমনকি কাতারে বসবাসকারী অমুসলিমদের জন্য উপাসনালয় তৈরির ব্যবস্থাও করেছেন নাসের। এরআগে, কাতারের আর কোনো রাজা বা রানিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে ভাবতে দেখা যায়নি।
পশ্চিম এশিয়ার পুরুষ প্রধান জগতে একজন নারীর এভাবে দেশের জন্য কাজ করা মুখের কথা নয়, তবে নাসের কোনোদিন কে-কী বলল তার পরোয়া করেননি। আরববিশ্বের মেয়েরা যেখানে মাথা থেকে বুক পর্যন্ত ওড়নায় ঢেকে রাখেন, সেখানে কাতারের রানি পুরুষের মতো স্যুট পরে মাথায় পাগড়ি বেঁধে দেশবিদেশ ঘুরে বেড়ান।
স্বাভাবিকভাবেই সৌদি আরব, সংযুক্ত আমিরাত, ইয়েমেন, ওমানের দেশগুলোতে নাসেরকে মন্দ চোখে দেখা হয়। এমন একজন মহিলা যিনি আরব দুনিয়ার সংস্কৃতিকে মাটিতে মেশাচ্ছেন। তবে নাসের তার এই গুণের জন্যই নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করতে পেরেছেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে।
শোনা যায়, ব্রিটেন সফরে রানির স্বামী ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপ অভিভূত হয়েছিলেন নাসেরকে দেখে। তার কাজের কথা শুনে। তবে নাসেরের প্রতি ফিলিপের ভালোলাগাএকটু অন্যভাবে উপস্থাপন করেছিল ব্রিটেনের কয়েকটি দৈনিক। নাসের-ফিলিপের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি বন্দি করেছিলেন ছবি শিকারিরা। সে সব ছবি দিয়ে ফিলিপের বৃদ্ধ বয়সে প্রেমে পড়ার ইঙ্গিত দিয়ে প্রতিবেদনও বেরিয়েছিল সংবাদমাধ্যমে।
নাসের ব্রিটেনের রানিকে টেক্কা দিয়েছেন আরও একটি ক্ষেত্রে। কিছুদিন আগেই লন্ডনের একটি নতুন প্রাসাদের মতো বাড়ি কিনেছেন নাসের। সেই বাড়ি এই মুহূর্তে ব্রিটেনের সবচেয়ে দামি সম্পত্তি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাসের ওই বাড়িকে যেভাবে সাজানোর পরিকল্পনা করেছেন, তাতে সেটি ব্রিটেনের রাজপ্রাসাদকেও হার মানাবে।
অর্থের অভাব কখনোই হয়নি কাতারের রানি নাসেরের। আরববিশ্বের বিশেষত কাতারের মতো দেশের রাজ পরিবারে তা হয়ও না। তবে নাসের সেই প্রাচুর্যের গণ্ডিতে আটকে না থেকে সাধারণ মানুষের কথা ভেবেছেন। কারণ তিনি নিজেও সাধারণ ছিলেন এক সময়ে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়