ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে বড় দেশগুলোর ভূমিকা বরাবরই আলোচনায় এসেছে। বিশেষ করে ভারত ও চীনের। সম্প্রতি আল-জাজিরায়, ভারতের অবস্থান সামনের দিনে কী হতে পারে তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আল-জাজিরার বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে ভারতের ভারসাম্য বজায় রাখা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। তবে নয়াদিল্লির অনন্য অবস্থানে, রাশিয়া ও পশ্চিমাদের বন্ধু হিসাবে, একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসাবে আবির্ভূত হতে পারে ভারত।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখন দিল্লি ইউক্রেনে মানবিক সহায়তার হাত বাড়াতে দেরি করেনি। কিন্তু পরবর্তীতে ভারত জাতিসংঘে মস্কোর কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানো থেকে বিরত থেকেছে। একটি ভারসাম্যের নীতি অবলম্বন করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশাসন, যা ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষানীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে ধরা হয়।
গত নভেম্বরে ভারতের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেন, তিনি ‘অন্যান্যদের’ দাবি পূরণ করার চেষ্টা করছেন না। ভারতের নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চলার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
কিন্তু যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক জ্বালানি ও খাদ্য ঘাটতি ভারতকে রাশিয়ার প্রতি তার সীমাবদ্ধ অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করতে প্ররোচিত করেছিল।
উজবেকিস্তানের সমরখন্দে গত সেপ্টেম্বরে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে নরেন্দ্র মোদী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেন, ‘আমি জানি, আজকের যুগ, যুদ্ধের যুগ নয় এবং আমি আপনার সঙ্গে এটা নিয়ে ফোনেও কথা বলেছি।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কয়েক সপ্তাহ আগে বালিতে বিশ্বের ২০টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের জোট জি-২০-এর শীর্ষ সম্মেলনে এ বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির উপায় সবাইকেই খুঁজতে হবে। সেই দায়িত্ব আজ আমাদের প্রত্যেকের ওপরই।’
নয়াদিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) এর ফেলো বিবেক মিশ্রা আল-জাজিরাকে বলেন, ভারতের অবস্থান একটি পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘গত ১০ মাসে, আমরা যুদ্ধে ভারতের মধ্যস্থতার বর্ণচ্ছটা দেখেছি। নয়াদিল্লি পরোক্ষভাবে মস্কোকে বলেছিল, যুদ্ধ শেষ করার সময় এসেছে বলে এটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আগামী বছর থেকে, ভারত জি-২০-এর নেতৃত্ব দেওয়ার অর্থ, যুদ্ধ সমাপ্তিতে মধ্যস্থতা করার ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির ভূমিকা আরও বেশি প্রাধান্য পাবে। এটি ভারতের নেতৃত্বের লক্ষণও ধরে নেওয়া যায়।’
আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জি-২০-র সভাপতির দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে ভারত। বিশ্ব মঞ্চে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে।
জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনের একজন সহযোগী ফেলো জন-জোসেফ উইলকিন্স বলেন, ‘নতুন দায়িত্বগ্রহণের সঙ্গে ভারত সম্ভবত কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন রক্ষায় মনোযোগ দেবে।’ তিনি আরও বলেন, ভারতের বিশ্বে একটি ভারসাম্যের পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখার ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু এ বছর আমরা দেখছি দেশটির পররাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠা সম্ভবত একটি অন্যন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। এর ফলে দিল্লির বিশ্বব্যাপী প্রভাব বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ভারতের ক্রমবর্ধমান অবস্থান কি রাশিয়ার সঙ্গে চলমান বাণিজ্যকে প্রভাবিত করবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ সম্পর্কে ভারতের সাম্প্রতিক উদ্বেগের কথা স্বীকার করেন এবং উজবেকিস্তান বৈঠকে মোদীকে আশ্বস্ত করেন মস্কো ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সবকিছু করবে। যদিও তিনি সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ার জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করেন।
তবে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে পুতিন বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করে ভারতের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে আগ্রহী।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়