বেশ কিছুদিন ধরে স্মরণকালের ভয়াবহ কয়লা সংকটে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন। এতে কয়েকটি প্রদেশে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন। সেই সংকট এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশটি। সংকটের পেছনে অস্ট্রেলিয়ার কয়লা রফতানি নিষেধাজ্ঞাকে অভিযুক্ত করা হয়। এখন অস্ট্রেলিয়াকেই উল্টো কালো তালিকাভুক্ত করেছে চীন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এ নিষেধাজ্ঞা কতদিন কার্যকর থাকবে কিংবা আদৌ চীন এ নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থির থাকতে পারবে কিনা।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইম ঘোষণা করে যে চীন-অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্য উন্নয়নে চীনের জ্বালানি সংকট সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখবে। কিন্তু কয়লার নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক সরবরাহ সংকটের কারণে জবরদস্তিমূলক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন।
ম্যাককুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বালানি অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ ড. লুরিন ডি মেলো বলেছেন, এটা নজিরবিহীন কারণ কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারদর এরই মধ্যে মে মাসের তুলনায় ১০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে, এটা অস্বাভাবিক।
করোনার কারণে সংঘটিত লকডাউনের পর এখন বৈশ্বিক অর্থনীতি মাত্রই উত্থান ঘটছে। এর মধ্যে অব্যাহতভাবে চরম আবহাওয়াগত কারণ (অতিবৃষ্টি, বন্যা, ঝড়, অনাবৃষ্টি), ভূরাজনৈতিক কারণ, কয়লার উৎপাদন ব্যাহত হওয়া এবং রাশিয়া ও চীনের মজুদদারি জ্বালানি সংকটকে তীব্র করে তুলেছে। গ্যাস, কয়লা ও তেলের চাহিদা অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। এটিই পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক করে তুলেছে।
চীন বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে। শিল্প এলাকাগুলোতে বিদ্যুতের সংকট উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করছে। নাগরিকরা অনেক ক্ষেত্রেই ব্ল্যাকআউটের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
একই রকম অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইউরোপও। গ্যাসের দাম বাড়ছে। জানুয়ারির তুলনায় ২০০ শতাংশ বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। দেশগুলোকে ভাবতে হচ্ছে তারা শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখবে নাকি নাগরিকদের ভালো রাখবে। এ সংকট অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের জন্য সৌভাগ্যের, কারণ তারা কয়লা ও গ্যাসের রফতানিকারক।
গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে চীন কয়লা আমদানির ওপর নির্ভর করলে বিভিন্ন প্রদেশের প্রকট হয়ে ওঠা বিদ্যুৎ সংকট কমে আসবে। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার এক মিলিয়ন টন কয়লার জাহাজকে ডেলিভারি না নিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে চীনের শুল্ক বিভাগ। এমনকি এগুলোর জন্য মূল্যও পরিশোধ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, চীনের কয়লা সংকট চীন-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার কয়লাভিত্তিক ব্যবসার বিরোধ নিরসনের সুযোগ খুলে দেবে বলে ভাবা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন বিব্রতকর অবস্থায় পৌঁছেছে যে মুখ দেখাদেখি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।
চীনে কয়লা আমদানির শীর্ষ দেশ ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া ও মঙ্গোলিয়া। বছরের প্রথম আট মাসে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা ও ফিলিপাইন থেকে চীনের কয়লা আমদানি রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। এ অবস্থায় চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার কয়লা বাণিজ্য বিরোধের কোনো প্রভাব চীনের কয়লা আমদানিতে পড়ছে না।
তাহলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে কয়লা ইস্যুতে কি অস্ট্রেলিয়াই এখন ব্যাকফুটে?
তাপীয় কয়লা রফতানিতে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় বৃহৎ রফতানিকারক দেশ। চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যার শীর্ষ ক্রেতা। টনপ্রতি যার দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩৩০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। এটা কতদিন থাকবে তা কে জানে?
এ তিন দেশই জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে কার্বন নিঃসরণ শূন্য করার লক্ষ্য নিয়েছে। বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এতে বেশি জোর দিচ্ছে। তার মানে কি কয়লার এটাই সর্বোচ্চ দাম? ডি মেলো বলছেন, না। চীন ৩০৩টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালায়। এখনো সেখানে বিদ্যুতের জন্য কয়লাই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়। এজন্য অনেক দেশের মতো চীনও কয়লা মজুদ বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে।
জার্মানি ও ভারতের মতো দেশে কম কার্বনশক্তি অর্জনেও কয়লার গুরুত্ব রয়েছে। ডি মেলো বলছেন, গ্যাসের উচ্চমূল্য পরিশোধের সামর্থ্য তাদের নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে খারাপ আবহাওয়ার কারণে। রাশিয়া থেকেও প্রয়োজনীয় গ্যাস পাচ্ছে না জার্মানি। ফলে তাদের নিরুপায় হয়ে কয়লার কাছেই ফিরতে হচ্ছে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়