ভারতের কর্নাটকে অমিত সাহস দেখালেন এক মুসলিম তরুণী। ওই রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিপুল সংখ্যক সমর্থকের সামনে একাই জানিয়ে দিলেন তিনি মুসলিম। মাথা নত করার নয়। ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে যখন বিজিপি সমর্থকরা তাকে ঘিরে ধরে, তখন তিনি মোটেও কম্পিত হননি। বীরাঙ্গনার মতো হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিয়েছেন- ‘আল্লাহু আকবর’। মুহূর্তে ওই তরুণীর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।
কর্নাটকে হিজাব বনাম স্যাফ্রোন বা গেরুয়া স্কার্ফ নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে মুসলিম ও বিজেপির সমর্থকরা। এক সপ্তাহের বেশি সংঘাতময় অবস্থার সৃষ্টি হলেও তা প্রশমনের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
উল্টো তা আরও শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার বিক্ষোভ হয়েছে শিবামোজ্ঞা শহরে।
এ খবর দিয়ে অনলাইন এনডিটিভি বলছে, মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে উদুপি জেলার এমজিএম কলেজের গেটে দুটি গ্রুপ অবস্থান নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ডাকা হয়। এ উত্তেজনার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে এনডিটিভি, দূরদর্শন (ডিডি)। তাতে দেখা যায় নিজে স্কুটি চালিয়ে কলেজে পৌঁছেন এক মুসলিম তরুণী। বোরকায় তার শরীর আচ্ছাদিত। তিনি কলেজের পার্কিংয়ে স্কুটি পার্ক করেন। শান্তভাবে তা থেকে নেমে আসেন। ওদিকে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে ছিলেন বিজেপির সমর্থক ছাত্ররা। তারা ওই যুবতীকে দেখেই গেরুয়া পতাকা উড়াতে উড়াতে তার দিকে এগিয়ে যায় এবং স্লোগান দেয় ‘জয় শ্রীরাম’।
বিপুল সংখ্যক ছাত্রের এমন বিক্ষোভ দেখে বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি ওই তরুণী শিক্ষার্থী। উল্টো তিনি তাদের সামনে দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে স্লোগান দেন- ‘আল্লাহু আকবর’। একবার দু’বার নয়। বেশ কয়েকবার এ স্লোগান দেন তিনি। বিজেপিপন্থিরা তার আরো কাছে চলে আসে। তিনি স্বাভাবিক গতিতে সামনে এগিয়ে যান। কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয় বিজেপিপন্থিদের সঙ্গে। এ সময় ওই তরুণীর সাক্ষাতকার নিতে চেষ্টা করে মিডিয়া। সঙ্গে সঙ্গে আবার তাকে ঘিরে ধরে ওইসব ছাত্ররা। তারা গেরুয়া শাল উড়িয়ে, পতাকা দুলিয়ে নানা রকম স্লোগান দিতে থাকে।
এ পর্যায়ে দু’চারজন ব্যক্তিকে দেখা যায় ওই তরুণীকে উদ্ধার করছেন। তারপর তিনি চলে যান ক্লাসরুমের দিকে। এমন ঘটনায় সেখানে উত্তেজনা তুঙ্গে। হিজাব পরা ও স্যাফ্রোন বা গেরুয়া শাল পরা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উত্তেজনার পর হরিহরা এবং দাভেঙ্গেরে শহরে সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেখানে বিক্ষোভের সময় এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস এবং লাঠিচার্জ করে।
এসব ঘটনা থেকে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছালেও কর্নাটকে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এখনও নীরব। তারা অপেক্ষা করছে কর্নাটক হাই কোর্টের একটি সিদ্ধান্তের জন্য। কলেজে হিজাব পরা নিয়ে বিধিনিষেধ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত চেয়ে উদুপির একটি সরকারি কলেজের পাঁচ যুবতী আদালতে পিটিশন করেছে। সেই পিটিশনের জবাবে আদালত কি বলে সেদিকে তাকিয়ে আছে সরকার।
পিটিশনের জবাবে কোনো সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার ঘোষণা করেনি আদালত। তবে আদালত থেকে বলা হয়েছে, এই পিটিশনের আরও শুনানি হবে। এ সময়ে ছাত্র সমাজ ও জনগণকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করেছে আদালত। জনগণের প্রজ্ঞা ও গুণাবলীর ওপর আদালতের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আদালত আশা করে জনগণ সেই চর্চা করবে।
প্রথমে উদুপির একটি কলেজে হিজাব ইস্যুতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে হিজাব পরার দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন মুসলিম ছাত্রীরা। পরে তা কর্নাটকের অনেক কলেজে ছড়িয়ে পড়ে। পাল্টা বিক্ষোভ করে বিজেপিপন্থি শিক্ষার্থীরা। তারা বিজেপির গেরুয়া শাল গলায় ঝুলিয়ে, পতাকা উড়িয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে উভয় পক্ষ। মঙ্গলবার তাতে সাম্প্রদায়িকতার রঙ লাগে। এক পক্ষ অন্যপক্ষের বিরুদ্ধে অধিক আগ্রাসীভাবে সংঘাতে লিপ্ত হয়।
এদিন উদুপিতে একটি কলেজে বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেন। এর একপক্ষ হিজাবের সমর্থক। অন্য পক্ষ গেরুয়া স্কার্ফ পরার পক্ষে। এখান থেকেই এদিন উত্তেজনার শুরু। এনডিটিভি বলছে, উদুপির গভর্নমেন্ট গার্লস পিইউ কলেজে গত মাসে শুরু হয় হিজাব বিষয়ক প্রতিবাদ বিক্ষোভ। ওই সময় ৬ জন ছাত্রী অভিযোগ করেন, মাথায় স্কার্ফ পরে ক্লাস করায় তাদেরকে বাধা দেয়া হয়েছে। ক্লাসরুমে মুসলিম বালিকাদের হিজাব পরার বিরোধিতা করে উদুপি এবং চিক্কামাগালুরুর উগ্র ডানপন্থিরা।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়