চাকরি ছাড়ার পথ খুঁজছেন মার্কিন পেশাদার কূটনীতিকরা

নিয়োগ জটিলতাসহ নানাবিধ কারণে আগে থেকেই কূটনীতিকের সংকটে ভুগছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবার সে সংকট আরো ঘনীভূত হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে ওয়াশিংটনের পেশাদার কূটনীতিক বহরের এক-তৃতীয়াংশই এখন নতুন চাকরি খুঁজছেন। দীর্ঘদিনের ব্যবস্থাপনাগত নানা সংকটের কারণে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আর কাজ করতে চাইছেন না তারা।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট ও জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ডিপ্লোমেসির যৌথ প্রয়াসে সম্প্রতি গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রায় তিন হাজার ফরেন সার্ভিস অফিসার ও বিশেষজ্ঞের ওপর জরিপের ভিত্তিতে এটি পরিচালিত হয়েছে।

প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ফরেন পলিসি জানাচ্ছে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বর্তমানে লোকবল হ্রাসের হার মন্ত্রণালয়ের প্রক্ষেপিত হারের চেয়ে অনেক বেশি। ২০১৬ সাল থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগে কূটনীতিকদের চাকরি ছাড়ার প্রবণতা তৈরি হয়। বর্তমানে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ওই বছরের দ্বিগুণে।

চার বছর আগে থেকেই সাবেক ও বর্তমান মার্কিন কূটনীতিকরা বলে আসছেন, ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা এক ধরনের মানসিক নীতিগত শূন্যতায় ভুগছেন। একই সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে গোটা পররাষ্ট্র বিভাগে ব্যাপক মাত্রায় পদ্ধতিগত অব্যবস্থাপনা ছড়িয়ে পড়ারও অভিযোগ তুলেছেন তারা।

তবে গবেষণার তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগে এ সংকট ট্রাম্পেরও অনেক আগে থেকেই ছিল। এ পদ্ধতিগত অব্যবস্থাপনার কারণেই বিভাগটি মেধাবী কূটনীতিক তৈরি ও পুরনোদের ধরে রাখার ক্ষেত্রে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কূটনীতিক শূন্যতায় ভুগছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী অনেক দেশেই আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে হোয়াইট হাউজ। এমনকি প্রভাবশালী মিত্র ও বৈরী অনেক দেশেই পূর্ণ নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত নেই ওয়াশিংটনের। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে কূটনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের শূন্যতায় ভুগেছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সে শূন্যতা দূর করার অঙ্গীকার করলেও তা এখনো পূরণ করতে পারেননি তিনি। উল্টো মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনীতিক সংকট দিন দিন আরো প্রকট হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তিন ভবিষ্যত্ কূটনীতিক গবেষণাটি চালিয়েছেন। র্যাঞ্জেল ফেলোশিপ প্রোগ্রামের আওতায় বর্তমানে সেখানে অধ্যয়ন করছেন তারা। মার্কিন কূটনীতিকদের সংগঠন আমেরিকান ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পৃষ্ঠপোষকতায় গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। গবেষণা কার্যক্রমের তত্ত্বাবধানে ছিলেন সাবেক কূটনীতিক নিকোলাস বার্নস। বলা হচ্ছে, চীনে রাষ্ট্রদূত হিসেবে জো বাইডেনের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে কূটনীতিক সংকটের বিষয়টি নিয়ে জো বাইডেনকেই ভুগতে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এর কারণ হিসেবে পদ্ধতিগত জটিলতা ও লোকবলের সংকটকে দায়ী করছেন পর্যবেক্ষকরা। একই কারণে শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়, প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক নিয়োগের ক্ষেত্রে মারাত্মক অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে তাকে। পার্টনারশিপ ফর পাবলিক সার্ভিস নামে একটি সংস্থার বরাত দিয়ে দি ইকোনমিস্ট সম্প্রতি জানিয়েছে, ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম পাঁচ মাসে জো বাইডেন প্রশাসনে রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ দিতে পেরেছেন মাত্র ৬৭ জনকে। যেখানে একই সময়ের মধ্যে বারাক ওবামা নিয়োগ দিতে পেরেছিলেন ১৪৯ জনকে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে সেখানে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। ওই সময় অনেকগুলো জ্যেষ্ঠ পদ মাসের পর মাস এমনকি বছরখানেকও শূন্য ছিল। জ্যেষ্ঠ পেশাদার কূটনীতিকদের অনেককেই সে সময় চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ইউক্রেনকে দেয়া সামরিক সহায়তা স্থগিত করাকে কেন্দ্র করে ট্রাম্পের প্রথম অভিসংশনের শুনানি চলাকালে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও এ বিতর্কে টেনে আনা হয়।

২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ও ফরেন সার্ভিস কর্মকর্তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরি ছেড়ে দেন। তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে নিয়োজিত পেশাদার কূটনীতিক। অথচ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরিতে এটিই যেকোনো কর্মকর্তার অর্জনযোগ্য সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পদ। দেশটিতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পাওয়া পেশাদার কূটনীতিকদের পদমর্যাদা সামরিক বাহিনীর চার তারকা জেনারেলদের সমান।

তবে হার্ভার্ডের গবেষণা বলছে, এ সমস্যার সূচনা ও সমাপ্তিকে মোটেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে সীমাবদ্ধ করা যাচ্ছে না। গবেষকদের অন্যতম ক্যাস্ত্রো জুনিগা ফরেন পলিসিকে বলেছেন, পররাষ্ট্র বিভাগের চাকরি ছাড়তে চাওয়া কর্মকর্তার সংখ্যা দেখে আমরা সত্যিকার অর্থেই হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছি। আমরা ধারণা করেছিলাম, ট্রাম্প প্রশাসনের নেতাদের কারণে অনেকেই চাকরি ছেড়েছেন। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি, এ সমস্যার সঙ্গে কিছু কাঠামোগত বিষয়ও জড়িত, যার অতি সত্বর সমাধান করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আমরা এ গবেষণার জন্য জরিপ চালিয়েছিলাম ২০২০ সালের নির্বাচনের পর। অর্থাত্ ট্রাম্প প্রশাসন যে আর থাকছে না, সে বিষয়টি জরিপে অংশগ্রহণকারীরা ভালোভাবেই জানতেন। তার পরও তারা চাকরি ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আমরা যেভাবে ভেবেছিলাম যে ট্রাম্প প্রশাসনের কারণেই কর্মকর্তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আর থাকছেন না, সে ধারণাও আর ধোপে টেকেনি।
এই বিভাগের আরও খবর
যে কারণে পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

যে কারণে পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

জনকণ্ঠ
ইউক্রেনের ৫০ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার

ইউক্রেনের ৫০ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার

ভোরের কাগজ
আন্তর্জাতিক নির্দেশিকাকে লঙ্ঘন করে শিশুখাদ্যে চিনি মেশাচ্ছে নেসলে

আন্তর্জাতিক নির্দেশিকাকে লঙ্ঘন করে শিশুখাদ্যে চিনি মেশাচ্ছে নেসলে

মানবজমিন
ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো

ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো

কালের কণ্ঠ
রেকর্ড বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত আমিরাত, ওমানে ভারি বর্ষণে নিহত ১৮

রেকর্ড বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত আমিরাত, ওমানে ভারি বর্ষণে নিহত ১৮

যুগান্তর
ইসরাইলে হামলার পর ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ'র নতুন নিষেধাজ্ঞা, কী বলছে রাশিয়া

ইসরাইলে হামলার পর ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ'র নতুন নিষেধাজ্ঞা, কী বলছে রাশিয়া

নয়া দিগন্ত
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়