জিপিএ বাদ দিয়ে বদলে যাচ্ছে এসএসসির মূল্যায়ন, বর্ণ দিয়ে ফল

দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পর অবশেষে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী কেন্দ্রভিত্তিক পাবলিক পরীক্ষার (এসএসসি) মূল্যায়ন–কাঠামো চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, লিখিত অংশের ওয়েটেজ হবে ৬৫ শতাংশ এবং কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ ৩৫ শতাংশ। একেকটি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে সর্বোচ্চ এক স্কুল দিবস (দিনে যতক্ষণ স্কুল চলে)। আগের মতো জিপিএর ভিত্তিতে ফল প্রকাশ হবে না।

তবে ফলাফলের (রিপোর্ট কার্ড) বিষয়টি সহজে বোঝার জন্য সাতটি স্কেলের ঘরে আলাদা ইংরেজি বর্ণ দিয়ে বোঝানো হবে। অবশ্য এই লেটার গ্রেড নম্বরের ভিত্তিতে হবে না।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, মূল্যায়ন–কাঠামো অনুমোদন দিতে গতকাল সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয় মাধ্যমিক স্তর এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা স্তরের যৌথ জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভা। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মূল্যায়ন কৌশলের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন কার্যপত্র লেখা হলে সে অনুযায়ী মূল্যায়ন–কাঠামোর বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, খসড়া মূল্যায়ন–কাঠামোয় একেকটি বিষয়ে পাঁচ ঘণ্টায় পরীক্ষা নেওয়ার কথা আলোচনা হয়েছিল। তবে এনসিসিসির সভায় এ বিষয়ে আরও নমনীয় হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ে সর্বোচ্চ এক স্কুল দিবসে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়।

নতুন কাঠামোর খসড়ায় বলা হয়েছিল, শিক্ষার্থীর নির্ধারিত পারদর্শিতা অনুযায়ী সাতটি স্কেল বা সূচকে ফল বা রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করা হবে। এই সাত স্কেলের নাম হবে অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক। যেমন সর্বোচ্চ স্কেল ‘অনন্য’ বলতে বোঝানো হবে শিক্ষার্থী সব বিষয়ে পারদর্শিতার চূড়ান্ত স্তর অর্জন করেছে। প্রারম্ভিক স্তর বলতে পারদর্শিতার সবচেয়ে নিচের স্তরকে বোঝানো হবে। রিপোর্ট কার্ডে শিখনকালীন মূল্যায়ন ও পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়নের ফলাফল আলাদাভাবে প্রকাশিত হবে।

এত দিন আলোচনা হয়েছিল, এই সাত স্কেলের ঘর ভরাট অনুযায়ী ফলাফল বোঝানো হবে। এখন সেটি না করে ইংরেজি বর্ণ দিয়ে সেটি বোঝানো হবে। তবে এই লেটার গ্রেড এখনকার মতো নম্বরেরে ভিত্তিতে হবে না। পারদর্শিতার স্তর অনুযায়ী এই লেটার গ্রেড হবে। মূলত অভিভাবকসহ মানুষ যাতে সহজে ফলাফল বুঝতে পারে, সে জন্য এটি যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, কোনো শিক্ষার্থী যদি এসএসসি পরীক্ষায় এক বা দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হয়, তাহলে শর্ত সাপেক্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পাবে। তবে তাকে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ বিষয়ে পাস করতে হবে। আর তিন বা তার বেশি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলে একাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া যাবে না। কোনো বিষয়ে একের বেশি পারদর্শিতার ক্ষেত্রে ‘প্রারম্ভিক’ স্তরে থাকলে শিক্ষার্থী ওই বিষয়ে উত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে না।

লিখিতি ও কার্যক্রমভিত্তিক—এই দুই ভাগে মূল্যায়ন হলেও প্রশ্নের ধরন এখনকার মতো থাকছে না। কার্যক্রমভিত্তিক (অ্যাসাইনমেন্ট করা, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যার সমাধান করা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি) বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে হবে লিখিত অংশের মূল্যায়ন।

বর্তমানে মূলত দশম শ্রেণিতে নির্বাচনী পরীক্ষায় (টেস্ট) উত্তীর্ণ হলে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে নির্বাচনী পরীক্ষা হবে না। কোনো শিক্ষার্থী যদি দশম শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ কর্মদিবস উপস্থিত না থাকে, তাহলে সে পাবলিক মূল্যায়ন বা এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে না।

নতুন নিয়মে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। পদ্ধতিগত পরিবর্তন থাকলেও এখনকার মতো শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনেই এখনকার মতো কেন্দ্রভিত্তিতে হবে এই পরীক্ষা বা মূল্যায়ন।

মাদ্রাসা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত

মাদ্রাসায় যেহেতু এখনো নতুন শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত হয়নি, তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে দাখিল পরীক্ষা আগের নিয়মেই হবে। তবে বিশেষায়িত বিষয়গুলো বাদে বাকি বিষয়গুলোর মূল্যায়ন শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে। বর্তমানে যা নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হয়। এখন নবম শ্রেণির পাঠ্যসূচি মাদ্রাসা পর্যায়েই মূল্যায়ন করা হবে।

ধারাবাহিক মূল্যায়ন নিয়ে যে সিদ্ধান্ত

এই বৈঠকে বিদ্যালয় পর্যায়ের মূল্যায়ন–কাঠামো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) লিখিত নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যালয়ে ৩ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে অর্ধবার্ষিক (ষাণ্মাসিক) মূল্যায়ন। পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন–কাঠামোর খসড়ার সঙ্গে মিল রেখে হচ্ছে এই পরীক্ষা।

এনসিসিসির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই সামষ্টিক মূল্যায়ন পর্যালোচনা করে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ধারাবাহিক ও সামষ্টিক মূল্যায়ন চূড়ান্ত হবে।

গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। চলতি বছর দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও চালু হয় এ শিক্ষাক্রম। ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম।
এই বিভাগের আরও খবর
টাঙ্গাইলে বিদ্যালয়ে ক্লাস নিলেন উপদেষ্টা

টাঙ্গাইলে বিদ্যালয়ে ক্লাস নিলেন উপদেষ্টা

বাংলা ট্রিবিউন
পেছালো ঢাবির একটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ

পেছালো ঢাবির একটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ

দৈনিক ইত্তেফাক
লক্ষ্মীপুরে সেতু ধসে যাতায়াত বন্ধ চার দিন, বাতিল হলো একটি কলেজের পরীক্ষা

লক্ষ্মীপুরে সেতু ধসে যাতায়াত বন্ধ চার দিন, বাতিল হলো একটি কলেজের পরীক্ষা

প্রথমআলো
হলগুলোতে ছাত্রদলের পোস্টার, মধ্যরাতে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের মিছিল

হলগুলোতে ছাত্রদলের পোস্টার, মধ্যরাতে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের মিছিল

সমকাল
ঢাবিতে মুক্তিযুদ্ধের নাতি-নাতনির কোটা বাতিল

ঢাবিতে মুক্তিযুদ্ধের নাতি-নাতনির কোটা বাতিল

ভোরের কাগজ
এনটিআরসিএর ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি আসছে, নিয়োগ হবে এক লাখ শিক্ষক

এনটিআরসিএর ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি আসছে, নিয়োগ হবে এক লাখ শিক্ষক

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া