কভিডের টিকাকরণ কার্যক্রম গোটা বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই)। এরই মধ্যে নাগরিকদের প্রায় ৬৪ শতাংশকে কভিডের দুই ডোজ টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে দেশটি। বিতরণকৃত টিকার সংখ্যা ছাড়িয়েছে সোয়া কোটি ডোজ। দেশটির টিকাদান কার্যক্রমের এ সফলতার সবচেয়ে বড় সুবিধা আদায় করে নিতে যাচ্ছে দুবাই আমিরাত। এরই মধ্যে সচল হয়ে উঠেছে আমিরাতটি। একই সঙ্গে চাঙ্গা হয়ে উঠছে ইউএইর দুবাইকেন্দ্রিক পর্যটন খাতও।
জ্বালানি তেলের দরপতনের কারণে কভিডের আগে থেকেই বিপাকে পড়ে গিয়েছিল ইউএইর অর্থনীতি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অর্থনীতির বৈচিত্র্যায়নের পরিকল্পনা হাতে নেয় দেশটি। এ বৈচিত্র্যায়ন পরিকল্পনা সাজানো হয়েছিল দুবাইকে কেন্দ্র করে। ইউএইর দুবাই আমিরাতকে বলা হয় মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসায়িক ও পর্যটন খাতের হাব। এ পর্যটন খাতকে কেন্দ্র করেই বৈচিত্র্যায়ন পরিকল্পনা সাজিয়েছিল ইউএই। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের পথ রুদ্ধ করে দেয় মহামারীর প্রাদুর্ভাব।
কভিডের অভিঘাতে গত বছর খারাপ সময় কাটালেও চলতি বছরের শুরুতেই ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় ইউএই। বাজারে টিকা আসার আগেই উৎস দেশগুলো থেকে দ্রুত টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা করে ইউএই সরকার। বর্তমানে বিশ্বের অন্য অনেক দেশ টিকার সংকটে ভুগলেও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ইউএইতে তা এখনো দেখা দেয়নি। বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতিতে টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী দেশগুলোর অন্যতম হয়ে ওঠে আরব আমিরাত। টিকাদান কর্মসূচির এ সফলতা দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে আবারো সচল করে তোলে দুবাইকে। গতি পায় ইউএইর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি বৈচিত্র্যায়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নও।
কডিডের চলমান প্রবাহের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরোপ করা হচ্ছে লকডাউনসহ নানা কঠোর বিধিনিষেধ। এর বিপরীতে সচল হয়ে উঠছে দুবাই। গোটা বিশ্বেই পর্যটন খাত এখন দুর্বিপাকে। এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে দুবাইয়ে। সেখানে পর্যটন খাতের স্থগিত হয়ে পড়া পরিকল্পনাগুলো পুনরায় বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে দুবাই। চলতি বছরের শেষ দিকে সেখানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্থগিত হয়ে পড়া এক্সপো ২০২০ দুবাই। এছাড়া আগামী বছর কাতারে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপকে ঘিরেও দুবাইয়ের পর্যটন খাতে নতুন কিছু পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ইউএই। ২০০৯ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার পর মহামারীর কারণে গত বছরই প্রথম সংকোচনের মুখ দেখে দেশটি। কভিডের অভিঘাত ইউএইর অর্থনীতির চাকা পুরোপুরি থমকে দিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশটির আবাসন, বাণিজ্য, বিদেশী বিনিয়োগ ও জ্বালানি ব্যবসা। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের দরপতন দেশটির জন্য পরিস্থিতি আরো দুরূহ করে তোলে।
ওই সময়ে বিভিন্ন খাতে কর্মরত বাংলাদেশীসহ প্রচুর প্রবাসী কর্মীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয় ইউএই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের কর্মস্থলে ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। এছাড়া দেশটিতে কর্মসংস্থান নিয়ে বড় ধরনের আশঙ্কা তৈরি করেছিল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাও। যদিও দেশটির সরকারের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত ছিল টিকাকরণ কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার দিকেই। এ কার্যক্রমে সাফল্যের কারণে দেশটির বিভিন্ন খাত এরই মধ্যে সচল হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
বর্তমানে দেশটিতে সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে আট লাখ বাংলাদেশী প্রবাসী অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন খাতের শ্রমিক ছাড়া ব্যবসায়ীও রয়েছেন ৫০ হাজার। দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা দেশটিতে প্রবাসী শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। তবে দেশে করোনার বর্তমান সংক্রমণপ্রবাহের কারণে ২১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে ইউএই। এছাড়া দেশটি বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের ট্রানজিট ফ্লাইট পরিবহনও বন্ধ করে রেখেছে। ফলে বর্তমানে ইউএইর সঙ্গে বাংলাদেশের আকাশপথে যোগাযোগ এখন কার্যত বন্ধ।
তবে বর্তমানে সে পরিস্থিতি অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে দেশটি। দুবাই ছাড়াও ইউএইর সফল টিকা কর্মসূচিকে কাজে লাগিয়ে সচল হয়ে উঠেছে আবুধাবি, আজমান, শারজাহসহ দেশটির অন্য সব আমিরাত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও বলছে, দ্রুত টিকাকরণের পাশাপাশি পর্যটন খাতের সম্প্রসারণ এবং সরকারি নীতির কারণে ইউএই খুব দ্রুতই মহামারীর অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে যাচ্ছে।
টিকাকরণের পাশাপাশি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আমিরাতগুলোর স্থানীয় সরকারের মহামারীকালীন বিভিন্ন পদক্ষেপও ইউএইর দ্রুত পুনরুদ্ধারকে সম্ভব করে তুলেছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। গালফ নিউজ জানাচ্ছে, মহামারীর শুরু থেকে এ পর্যন্ত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পেছনে ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারগুলো। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ৫ হাজার কোটি দিরহামের (প্রতি দিরহামের বিনিময় হার বাংলাদেশী ২৩ টাকার সমান) বিনাসুদে ঋণ সুবিধা ঘোষণা করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
ইউএইর কেন্দ্রীয় সরকারের এক প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করে বলা হয়, আগামী বছরের মধ্যেই করোনার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতি। একই সঙ্গে আগামী বছরের পুরো সময়জুড়েই দেশটিতে ঋণ প্রবৃদ্ধি এবং জনগণের ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাবে। সেন্ট্রাল ব্যাংক অব ইউএইর বার্ষিক প্রতিবেদনেও আগামীতে দেশটিতে উৎপাদন ও সেবা খাতে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে সাড়ে ৩ শতাংশ। এক্ষেত্রেও প্রধান অনুঘটক হিসেবে দেখা হচ্ছে জনগণের দ্রুত টিকাকরণকে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়