বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনার ভারতীয় ধরন বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নতুন করে সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের ৯৬টি দেশে ধরনটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ২০১৯ সালে কভিড-১৯ রোগ শনাক্ত হওয়ার পর এর যতগুলো ধরন শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে সংক্রমণযোগ্য ও ভয়াবহ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
গত বছরের অক্টোবর মাসে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে প্রথম এ ধরন শনাক্ত করা হয়। এ বছরের শুরু থেকে এটি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এর সংক্রমণ রীতিমতো ভীতিকর অবস্থা তৈরি করেছে। কভিডের তৃতীয় ঢেউ তছনছ করে রেখেছে এ অঞ্চলের দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বেশি মানুষ বাস করে ইন্দোনেশিয়ায়। দেশটির জনসংখ্যা ২৭ কোটির বেশি। এখন পর্যন্ত ৯৪ হাজারের বেশি মানুষের কভিড-১৯ রোগে মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৩৪ লাখ ৯ হাজার ৬৫৮ জন। পর্যবেক্ষণ সংস্থা আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটার তথ্য বলছে, গত দুই সপ্তাহে দেশটিতে যে পরিমাণ কভিড-১৯ শনাক্তের পরীক্ষা করা হয়েছে তার ৯৪ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের। দেশটির মাত্র ৬ শতাংশ মানুষকে এখন পর্যন্ত টিকার আওতায় আনা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ দেশটিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে হাসপাতালে শয্যা ও অক্সিজেন সংকট দেখা দিতে পারে।
প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশ মালয়েশিয়ায় গতকাল ১৭ হাজার ৭৮৬ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। দেশটিকে এখন কভিড-১৯ রোগের হটস্পট বা সংক্রমণের কেন্দ্র বলা হচ্ছে। স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, সরকার ঠিকমতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মহামারী নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের পদত্যাগও দাবি করেন তারা। কুয়ালালামপুরে আয়োজিত এক বিক্ষোভে ‘ব্যর্থ সরকার’-সংবলিত কালো প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে বিক্ষোভকারীরা। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও হ্যাশট্যাগ দিয়ে চলছে ব্যর্থ সরকার প্রচারণা।
অন্যদিকে থাইল্যান্ডে একদিনে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৯১২ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪ হাজার ৮৫৭ জন, একদিনে সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা ১৭৮ জন। দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭ কোটি। থাই সরকার বলছে, ব্যাংককে মোট সংক্রমণের ৮০ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের এবং সারা দেশে এ সংখ্যা ৬০ শতাংশ।
থাইল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের মহাপরিচালক সুপাকিত সিরিলাক বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর চেয়ে অনেক বেশি সংক্রমণযোগ্য। তাই ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যাও বেশি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরেক দেশ ভিয়েতনাম। দেশটির জনসংখ্যা পৌনে ১০ কোটির মতো। সেখানে সংক্রমণ এতটাই বেড়ে গেছে যে আগামীকাল থেকে দেশটির ১৯টি শহর ও প্রদেশে আরো দুই সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কেবল এসব দেশই নয়, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, আফগানিস্তানের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থাও সঙিন। এসব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাজুক সময় পার করছে। হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংকট, অক্সিজেন সংকট, প্রয়োজনের সময় অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়াসহ নানা সমস্যার কথা রোজই গণমাধ্যমে উঠে আসছে।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বৃদ্ধির পেছনে কিছু কারণের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন এ অঞ্চলে টিকাদানের হার কম। একটি পরিসংখ্যান বলছে, কেবল সিঙ্গাপুর ও কম্বোডিয়ায় টিকাদানের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। অন্য দেশগুলো এখনো এ হার বাড়াতে পারেনি। এছাড়া যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানাও সংক্রমণ বৃদ্ধির একটি কারণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত চার সপ্তাহে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা সংক্রমণের পরিমাণ ৮০ শতাংশ বেড়েছে। অনেক দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই কভিডের প্রভাবে নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়