অর্ধকোটির বেশি মানুষের প্রাণহানি আর অর্থনৈতিক ক্ষতির দুই বছরের ধাক্কা পার করে আরেকটি নতুন বছরে করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হচ্ছে মানুষকে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের নতুন রূপ চোখ রাঙালেও দেশি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, চলতি বছরেই শেষ হবে এই বিভীষিকা।
তিনটি কারণে মহামারির অবসানের আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হলো- শুরু থেকে চলমান সংক্রমণে অসংখ্য আক্রান্তের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া, ২০২২ সালের শেষ নাগদ বিশ্বের অর্ধেক সংখ্যকের বেশি মানুষের টিকার আওতায় আসা এবং করোনার নতুন ধরন এলেও তার প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার ক্ষমতা কমে যাওয়া।
আশার পিঠে আশঙ্কাও রয়েছে। করোনার কয়েকটি ধরনের পর বারবার মিউটেশনে সৃষ্ট ওমিক্রন এখন বিশ্বকে ভোগাচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে অতিসংক্রামক এই ধরন। তবে করোনার আগের ধরনগুলোর চেয়ে এর প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার ক্ষমতা কম। করোনার আগের ধরনগুলোসহ ওমিক্রন সংক্রমণে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কায় নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করছে সরকারগুলো। তবে আশার কথা হলো, ওমিক্রনের উৎস দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা শুক্রবার তাদের দেশে জারি হওয়া কারফিউ তুলে নিয়েছে। দেশটির সরকার বলেছে, ওমিক্রন আর বড় ধরনের হুমকি নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানমও বলেছেন, সবাই সতর্ক হলে ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে টিকা দেওয়া নিশ্চিত করা গেলে ২০২২ সালই হবে মহামারির শেষ বছর।
বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারি শেষ নাগদ বিশ্বে ওমিক্রনের সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছাবে। আবার নেমে যাবে। মাঝেমধ্যে এমন ঢেউ আসতে পারে। যদিও তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে না। এমনকি এটি মৌসুমি রোগে রূপ নেবে।
গতকাল শনিবার সিএনএনকে যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন চিলড্রেন হসপিটালের পরিচালক ড. অফার লেভি বলেছেন, করোনা মহামারি শিগগিরই আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা হবে। তবে এই ভাইরাসকে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। এটি শীত-গ্রীষ্ফ্মের মতো মৌসুমি রোগ হয়ে উঠবে।
ভ্যাকসিন ও বায়োপ্রযুক্তিবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারিবিষয়ক অধ্যাপক আরনল্ড মন্টো বলেছেন, এখন সবকিছু নির্ভর করছে আমরা কতটা দ্রুত মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি। মহামারি বা অতিমারি কোনো বিষয় নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ভাইরোলজিস্ট অ্যান্থনি ফুসি সিএনএনকে বলেছেন, আপনি যখন ভাববেন মহামারি পর্যায়ে আছেন, তারপর দেখবেন এটি কমছে। এরপর এটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আশার বিষয়, এর পরের ধাপে আপনি এর লাগাম টেনে ধরতে পারবেন বা শেষ করতে পারবেন।
কেউ কেউ বলছেন, বিশ্বের সরকারগুলো যদি দ্রুত তাদের জনগণের বেশিরভাগকে টিকার আওতায় না আনতে পারে, তাহলে করোনার নতুন ধরন মহামারিকে প্রলম্বিত করতে পারে। সেই সঙ্গে ভাইরাস সম্পর্কে মানুষের সতর্ক হওয়াটাও জরুরি। বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করছেন, করোনাভাইরাস দুর্বল হয়ে মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জায় রূপ নেবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ ফ্লু ঠেকাতেও সব সময় সজাগ থাকতে হবে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহমেদ সমকালকে বলেন, ওমিক্রন সংক্রমণপ্রবণ। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু তাদের হাসপাতালে ভর্তির হার কম। একই সঙ্গে মৃত্যুও কম। অধিক সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হলে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে এবং পরবর্তীতে তারা সুরক্ষা পাবেন। এমনকি যদি নতুন কোনো ধরন না আসে, তাহলে ২০২২ সালই হতে পারে করোনা মহামারির শেষ বছর। এ জন্য আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। এখন সরকারের উচিত দ্রুততম সময়ে মানুষকে টিকার আওতায় আনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা নিয়ে স্কটল্যান্ডে একটি গবেষণা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ডেলটায় প্রতি ১০০ জনে ৪৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। ওমিক্রনে প্রতি ১০০ জনে এ সংখ্যা মাত্র ১৫ জন। দক্ষিণ আফ্রিকার আরেকটি গবেষণায় ওমিক্রনের ঢেউ মৃদু হওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, লোকজনের হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কম।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের এক বিশ্নেষণে বলা হয়েছে, ওমিক্রনের মিউটেশন একে ডেলটার চেয়ে কম গুরুতর ভাইরাসে পরিণত করেছে। তবে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু মানুষকে গুরুতর অসুস্থ করতে পারছে না। এর মধ্য দিয়ে মানবদেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। নতুন করে ভাইরাসটি মিউটেশন না ঘটলে হয়তো এটিই মহামারির শেষ ধাপ হতে পারে। বিশ্নেষণটির ওপর আলোকপাত করে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেছেন, তবে এটি বলার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ সমকালকে বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত ১০ জন ওমিক্রন সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই সুস্থ আছেন এবং কাউকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি। ফলে এটি সংক্রমণপ্রবণ হলেও গুরুতর নয়।
আফ্রিকা হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক নতুন গবেষণায় দেখা যায়, ওমিক্রন সংক্রমিত রোগীদের থেকে নেওয়া রক্ত ডেলটার সংস্পর্শে এলে অ্যান্টিবডি ৪ দশমিক ৪ গুণ বেড়ে যায়। বিপরীতে অন্যান্য গবেষণায় ক্রস-ভ্যারিয়েন্ট ইমিউনিটির বিষয়ে দেখা যায়, ডেলটার প্রতিক্রিয়ায় তৈরি অ্যান্টিবডিগুলো ওমিক্রনের প্রতি খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। অর্থাৎ ওমিক্রন দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়