পাগলা মসজিদে এ পর্যন্ত কত টাকা জমা হলো, কোথায় ও কীভাবে খরচ হয়

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানের সিন্দুক তিন মাস পরপর খুলে পাওয়া যায় কোটি কোটি টাকা, স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা। এখন পর্যন্ত কত টাকা পাওয়া গেল, এই টাকা কোথায় জমা রাখা হয় বা কীভাবে খরচ হয়—এ নিয়ে মানুষের মনে স্বভাবতই এসব প্রশ্ন জাগে। দানের সিন্দুক খোলার কয়েক দিন পর্যন্ত চলে এসব আলোচনা।

সর্বশেষ গত ৩০ নভেম্বর দানের ১১টি সিন্দুক খুলে পাওয়া যায় ৮ কোটি ২১ লাখ টাকার ওপরে। এখন পর্যন্ত মসজিদের কত টাকা জমা হয়েছে, সাংবাদিকেরা সেটা জানতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খানের কাছে। তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। আগের জেলা প্রশাসকদেরও এই প্রশ্ন করা হলে তাঁরা উত্তর দিতেন না। এ নিয়ে মসজিদ কমিটির লোকজনও কথা বলতে রাজি হন না।

সর্বশেষ যেদিন মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়, সেদিন জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন মসজিদে এসে আয়-ব্যয়ের সব হিসাব জনসমক্ষে উত্থাপন করার দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, পাগলা মসজিদের টাকা জনসাধারণের দেওয়া টাকা। তাই জনগণ এ টাকার হিসাব জানার অধিকার রাখে। তবে এ ব্যাপারে মসজিদ কর্তৃপক্ষের যুক্তি, তিন থেকে চার মাস অন্তর অন্তর যখন দানের সিন্দুক খোলা হয়, তখন নগদ কত টাকা পাওয়া যায়, সেটা গণমাধ্যমের কল্যাণে মানুষ জানতে পারে। এ ছাড়া প্রতিদিন মসজিদে মানুষের দান করা হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ নানা জিনিসের নিলাম থেকে হাজার হাজার টাকা পাওয়া যায়। দানের সিন্দুকে টাকার সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আর স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়, সেটার হিসাবও কখনো কাউকে জানানো হয় না। ফলে মানুষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে জানার আগ্রহ বাড়ছে।

প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যায়। ২০১৫ সালে যখন থেকে টাকার পরিমাণ বেশি হচ্ছে ও বিষয়টি আলোচনায় এসেছে, সেই ৯ বছরে পাগলা মসজিদের সিন্দুকে টাকা জমা পড়েছে ৭৫ কোটি টাকার ওপরে। এই ৯ বছরে অন্তত ২৩ বার দানের সিন্দুক খোলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন মসজিদে দেওয়া প্রাণী, অন্যান্য জিনিস, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার নিলামে তুলে আরও ২৫ কোটি টাকার ওপরে পাওয়া গেছে। এভাবে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত পাগলা মসজিদে শতকোটি টাকার ওপরে জমা পড়েছে।

তবে এই টাকা থেকে মসজিদের ৩৭ কর্মীর বেতন ও মাদ্রাসার এতিম শিশুদের ভরণপোষণ বাবদ ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা প্রতি মাসে ব্যয় হয়। আবার ওয়াক্‌ফ স্টেটের হিসাব বাবদ ৫ শতাংশ হারে বছরে টাকা কাটা হয়। তবে কোটি কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রাখায় প্রতি মাসে লভ্যাংশও আসছে।

২০১৫ সালের শুরুর দিকে আটটি লোহার সিন্দুক খুলে একসঙ্গে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়। তখন ছয় মাস পরপর সিন্দুক খোলা হতো। এর পরেরবার পাওয়া গিয়েছিল প্রায় ৭৮ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের শেষের দিকে দানসিন্দুকে সর্বোচ্চ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ওপরে মিলেছিল। দিন দিন টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা জমার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় তিন মাস পরপর সিন্দুক খোলার প্রথা চালু হয়। এভাবে ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে দানের সিন্দুক খুলে সর্বমোট ৭৫ কোটি ৪৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪৩৮ টাকা পাওয়া গেছে। আর যে বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়, তা জেলা প্রশাসনের ট্রেজারিতে গচ্ছিত রাখা হয়।

মসজিদ কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়ার ভাষ্য ও সরেজমিনে নিলামের একটি চিত্র পাওয়া গেছে। নিলামে শুক্রবার বাদে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার টাকার জিনিস বিক্রি হয়। আর প্রতি শুক্রবার দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকার জিনিস বিক্রি হয়। এ হিসাবে প্রতি মাসে নিলামের ডাক থেকে ২০ লাখ টাকার ওপরে পাওয়া যাচ্ছে। আর বছরে নিলামের এ হিসাব দাঁড়ায় প্রায় আড়াই কোটি টাকার মতো। এভাবে গত ৯ বছরে নিলাম থেকে পাওয়ার কথা ২২ কোটি টাকার ওপরে।

শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, মসজিদের দানসিন্দুক থেকে যে স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়, তা সর্বশেষ ২০২০ সালে এসবের একবার নিলাম হয়েছিল। তখন এ থেকে আরও প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা পাওয়া যায়। তবে এর পর থেকে পাওয়া স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা জেলা প্রশাসনের ট্রেজারিতে জমা আছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অন্তত ১৫ বার সিন্দুক খোলা হয়েছে। এ থেকে ধারণা করা যায়, ট্রেজারিতে জমা থাকা ১৫ বারের স্বর্ণালংকার আর বৈদেশিক মুদ্রা মিলে আরও সাত থেকে আট কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে। দানসিন্দুকের ৭৫ কোটি টাকার ওপরে, নিলামের প্রায় ২২ কোটি টাকা, চার বছর আগের স্বর্ণালংকারের নিলাম থেকে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা, ট্রেজারিতে জমা থাকা গত চার বছরের স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে থাকা প্রায় সাত থেকে আট কোটি টাকা মিলিয়ে ১০০ কোটি টাকার বেশি হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৯ সাল থেকে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে পাগলা মসজিদের কার্যক্রম চলে আসছে। সেই থেকে পদাধিকার বলে কিশোরগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকেরা পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

মসজিদ কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে পাগলা মসজিদের আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে। এ মসজিদের টাকা দুটি ব্যাংকে আছে। মসজিদের আয় দিয়ে এই কমপ্লেক্সে অবস্থিত নুরুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার ১৩০ এতিম ও দুস্থ শিক্ষার্থীর বিনা মূল্যে পড়াশোনা ও ভরণপোষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া এখানে দায়িত্বরত কর্মীদের বেতনও মসজিদের আয় থেকে দেওয়া হয়।

মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, দানের অর্থ দিয়ে মসজিদের পাঁচ একর জায়গায় একটি দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এতে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। মূল মসজিদটি ছয়তলাবিশিষ্ট হবে। প্রতি তলায় একসঙ্গে পাঁচ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। পাশাপাশি আরও পাঁচ হাজার নারী মুসল্লির জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। সব মিলিয়ে ৪০ হাজার লোক যাতে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন, সে ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া থাকবে একাডেমিক ভবন ও অতিথিশালা। অতিথিশালায় রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অবস্থানের ব্যবস্থা থাকবে।

জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। জমা টাকার লভ্যাংশ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তাও করা হয়ে থাকে।
এই বিভাগের আরও খবর
পাগলা মসজিদে এ পর্যন্ত কত টাকা জমা হলো, কোথায় ও কীভাবে খরচ হয়

পাগলা মসজিদে এ পর্যন্ত কত টাকা জমা হলো, কোথায় ও কীভাবে খরচ হয়

প্রথমআলো
থানা থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র দিয়ে মহাসড়কে ‘প্রেমিকাকে’ গুলি করে হত্যা: এসপি

থানা থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র দিয়ে মহাসড়কে ‘প্রেমিকাকে’ গুলি করে হত্যা: এসপি

বাংলা ট্রিবিউন
৫৪ ধারাকে অপব্যবহারযোগ্য আইনের বিধান মনে করেন ৮২.৫ শতাংশ মানুষ

৫৪ ধারাকে অপব্যবহারযোগ্য আইনের বিধান মনে করেন ৮২.৫ শতাংশ মানুষ

নয়া দিগন্ত
টঙ্গীতে ‘কামু বাহিনী’র প্রধান কামরুল ইসলাম গ্রেপ্তার

টঙ্গীতে ‘কামু বাহিনী’র প্রধান কামরুল ইসলাম গ্রেপ্তার

প্রথমআলো
চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের তারিখ ঘোষণা করলো ইসি

চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের তারিখ ঘোষণা করলো ইসি

ভোরের কাগজ
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২২ জন

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২২ জন

বাংলা ট্রিবিউন
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া