প্রতিযোগীদের তুলনায় অনেক কম মূল্যে পোশাক রফতানি করছে বাংলাদেশ

বৈশ্বিক তৈরি পোশাক সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন দ্বিতীয়। যদিও পোশাক রফতানি বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে ভিয়েতনাম, ভারত, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্কের মতো দেশগুলোর সরবরাহকারীদের সঙ্গে নিরন্তর প্রতিযোগিতা করে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশী রফতানিকারকদের। বর্তমানে তারা প্রতিযোগীদের তুলনায় বেশি রফতানিতে সক্ষম হলেও দাম পাচ্ছেন তুলনামূলকভাবে অনেক কম। 

বিশ্বব্যাপী গত বছর পোশাক বাজারের আকার ছিল ৫৭৬ বিলিয়ন বা ৫৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ সরবরাহের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে। এখান থেকে সরবরাহকৃত পোশাকের বৃহত্তম দুটি বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো। গন্তব্য দেশ ও অঞ্চলগুলোর সরকারি পরিসংখ্যানেও বাংলাদেশী রফতানিকারকদের সরবরাহকৃত পোশাকের দাম সবচেয়ে কম পাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। 

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পোশাক সরবরাহ করেছে। বৈশ্বিক পর্যায়ে পোশাক রফতানিতে প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভিয়েতনাম, তুরস্ক, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়া। 

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীন অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২ সালে দেশটিতে বাংলাদেশের সরবরাহ করা পোশাকের অর্থমূল্য ছিল ৯৭৪ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। প্রতি বর্গমিটার পোশাকের জন্য বাংলাদেশী রফতানিকারকরা দাম পেয়েছেন ৩ ডলার ১০ সেন্ট। 

মার্কিন বাজারে সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সরবরাহকারী দেশ ভিয়েতনাম ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করেছে ১ হাজার ৮২৪ কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার ডলারের পোশাক। এজন্য দেশটির রফতানিকারকরা গড়ে প্রতি বর্গমিটারে দাম পেয়েছেন ৩ ডলার ৭১ সেন্ট।

পরের অবস্থানে আছে ভারত। দেশটির রফতানিকারকরা গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক সরবরাহ করেছেন ৫৬৮ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ডলারের। প্রতি বর্গমিটারে দাম পাওয়া গেছে ৩ ডলার ৮০ সেন্ট। পঞ্চম সরবরাহকারী দেশ ইন্দোনেশিয়ার রফতানিকারকরা পোশাক সরবরাহ করেছেন ৫৬০ কোটি ৭৪ লাখ ৪০ হাজার ডলারের। এজন্য তারা প্রতি বর্গমিটারে গড়ে দাম পেয়েছেন ৪ ডলার ৫ সেন্ট। ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা দেশ কম্বোডিয়ার রফতানিকারকরা সরবরাহ করেছেন ৪৩৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার অর্থমূল্যের পোশাক। তারা বর্গমিটারপ্রতি পোশাকের দাম পেয়েছেন ৩ ডলার ২০ সেন্ট। 

রফতানীকৃত পণ্যের দাম বেশি পেতে হলে উৎপাদিত পণ্যে বৈচিত্র্য নিয়ে আসা অপরিহার্য বলে মনে করছেন রফতানিকারকরা। তাদের ভাষ্যমতে, বিশ্বব্যাপী এখন কৃত্রিম তন্তুতে তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। এজন্য কৃত্রিম তন্তু দিয়ে তৈরি পোশাকে বিনিয়োগ বাড়ানো এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। আবার এর সঙ্গে সঙ্গে সরকারের নীতিগত সুবিধাও প্রয়োজন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিট পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় শীর্ষ রফতানিকারক হলেও মূলত তূলনামূলক কম দামের পোশাক বিক্রি করে বাংলাদেশ। এ অবস্থার উন্নয়নে শিল্পমালিকদের বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এখন বিশ্ববাজারে কৃত্রিম ফাইবারের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে এবং দামও বেশি। তাই তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তাদের ম্যান মেড ফাইবার খাতে বিনিয়োগ করতে হবে আর এজন্য প্রয়োজন সরকারের নীতিগত সুবিধা।’

একই কথা বলছেন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকনও। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘ম্যান মেড ফাইবার বা কৃত্রিম আঁশের সুতায় তৈরি ফ্যাব্রিক উৎপাদনের মাধ্যমে বেশি দামের পোশাক পণ্য তৈরি করলে রফতানিতে বেশি দাম আদায় করা সম্ভব। এজন্য বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করতে হবে। যার জন্য সরকারের নীতিগত সহায়তা অপরিহার্য।’ 

ইইউভুক্ত দেশগুলোয়ও প্রতিযোগীদের চেয়ে অনেক কম দাম পেয়েছেন বাংলাদেশী সরবরাহকারীরা। এ অঞ্চলের বাজারে শীর্ষ সরবরাহকারী চীন। বাংলাদেশ আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। এর পরে রয়েছে যথাক্রমে তুরস্ক, ভারত, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া। গত বছর ইইউর বাজারে বাংলাদেশের সরবরাহ করা পোশাকের অর্থমূল্য ছিল ২ হাজার ২৮৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার। ইইউর পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলের দেশগুলোয় প্রতি কেজি পোশাক সরবরাহের বিপরীতে বাংলাদেশী রফতানিকারকরা পেয়েছেন ১৭ ডলার ২৭ সেন্ট। 

বাংলাদেশের পরের অবস্থানে ছিল তুরস্ক। দেশটি গত বছর ইইউতে ১ হাজার ১৯৮ কোটি ২৬ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পোশাক সরবরাহ করেছে। এর বিপরীতে দাম পেয়েছে কেজিপ্রতি ২৫ ডলার ৩৯ সেন্ট। ভারতীয় রফতানিকারকরা সরবরাহ করেছেন ৪৮৬ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পোশাক। এর বিপরীতে প্রতি কেজিতে দাম পেয়েছেন ২৩ ডলার ২৭ সেন্ট। 

ইইউভুক্ত দেশগুলোয় গত বছর ভিয়েতনামের সরবরাহ করা পোশাকের অর্থমূল্য ছিল ৪৫৭ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার ডলার। এখানকার রফতানিকারকরা প্রতি কেজিতে দাম পেয়েছেন ৩০ ডলার ৭৬ সেন্ট। কম্বোডিয়ার রফতানিকারকরা পেয়েছেন ২২ ডলার ১৮ সেন্ট। 

বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক সরবরাহকারী দেশ হয়েও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম দাম বাংলাদেশ পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে পোশাক রফতানিকারকরা জানিয়েছেন, বরাবরই বাংলাদেশ মূলত বড় পরিমাণের কম দামি পোশাক রফতানি করে আসছিল। সে পরিস্থিতি এখন বদলাতে শুরু করলেও এখনো বাংলাদেশের রফতানীকৃত পোশাকের বড় অংশের দাম পাওয়া যায় কম। ফলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক সরবরাহকারী হলেও মূল্যপ্রাপ্তিতে পিছিয়ে বাংলাদেশ।
এই বিভাগের আরও খবর
টোল আদায়ে দেড় হাজার কোটির মাইলফলকে পদ্মা সেতু

টোল আদায়ে দেড় হাজার কোটির মাইলফলকে পদ্মা সেতু

বাংলা ট্রিবিউন
টানা ৩ দিন ধরে কমছে সোনার দাম

টানা ৩ দিন ধরে কমছে সোনার দাম

দৈনিক ইত্তেফাক
বোতলের সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭, খোলা ১৪৭ টাকা

বোতলের সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭, খোলা ১৪৭ টাকা

দৈনিক ইত্তেফাক
মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে

মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে

প্রথমআলো
বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে ব্রাজিল

বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে ব্রাজিল

বিডি প্রতিদিন
ভারতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

ভারতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

বিডি প্রতিদিন
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়