সামিয়া সুলতানা থাকেন রাজধানীর কল্যাণপুরে। সংসারের কাজের ফাঁকে সময় পেলেই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। কিন্তু এখনও প্রযুক্তি ব্যবহারে পুরোপুরি অভ্যস্ত হননি। গত সপ্তাহেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা খুইয়েছেন প্রতারকের পাল্লায় পড়ে। কারণ তার মোবাইল ব্যাংকিং ও ওটিপি (ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড) সম্পর্কে জানা ছিল না।
অফিসের কাজ সেরে বাসায় ফিরে চার বছরের শিশুটিকে মোবাইলে কার্টুন দেখতে দিয়ে সংসারের কাজ করেন শারমিন আক্তার। ইদানিং বুঝতে পারছেন, শিশুসন্তান মোবাইলে এতটাই আসক্ত যে, সামাজিক বিষয়ে তার কোনও আগ্রহ নেই। শারমিন আক্তারের জানা নেই, একটা শিশুর স্ক্রিনিং টাইম কতক্ষণ হওয়া উচিত।
সামিয়া বা শারমিনের মতো দেশের লাখো নারী-পুরুষের রয়েছে প্রযুক্তি সচেতনতার অভাব। ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে তাল মেলাতে হোঁচট খাচ্ছেন তারা। খুঁজছেন পরিত্রাণের উপায়।
দেশের জেলা শহরগুলোতে ৪১ শতাংশ মানুষ স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারে। ভিডিও কল করতে পারে ১৫ শতাংশ। ই-মেইল করতে পারেন মাত্র ১০ শতাংশ। অনলাইন শপিং বা অনলাইন আর্নিংয়ে ৫ শতাংশেরও কম মানুষ দক্ষতা দেখাতে পেরেছেন। এ ছাড়া সাইবার নিরাপত্তায় অসচেতন—এমন তথ্যও উঠে এসেছে ব্রাক ইন্সটিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত রুরাল বাংলাদেশের ডিজিটাল লিটারেসি জরিপে। এ অসচেতনারই সুযোগ নিচ্ছে নানা গোষ্ঠী।
এ ছাড়া অনলাইনে মিথ্যা সংবাদ বা ভুল তথ্য বুঝতে না পারা, প্রলোভন ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হওয়া, সাইবার বুলিং ও অনলাইনের আদতকেতা না জানায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে নানান সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির সুফল পৌঁছে দিতে এসব বিষয়ে দেশের জনগণকে সচেতন করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশব্যাপী কানেকটিভিটি ও ডিজিটাল ডিভাইসের অ্যাকসেস নিশ্চিত করেছে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি। কিন্তু অসচেতনতার কারণে সব মানুষ সমানভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে পারছে না।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এরইমধ্যে ডিজিটাল জগতের বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা ও দেশব্যাপী ডিজিটাল লিটারেসি বাড়ানোর একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আইসিটি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে নিরাপদ ই-মেইল ও ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প।
এর আওতায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে জাতীয় কারিকুলাম তৈরির কাজ। প্রস্তাবিত কারিকুলামে প্রাইমারি শিক্ষার্থী (তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণি), সেকেন্ডারি শিক্ষার্থী (ষষ্ঠ-দ্বাদশ), তরুণ (১৮-৩৫ বছর), অভিভাবক ও সাধারণ জনগণ (৩৫ ও এর ঊর্ধ্বে) এই পাঁচ গ্রুপ রাখা হয়েছে।
গ্রুপগুলোর জন্য সচেতনতামূলক কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার, ই-লার্নিংয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল লিটারেসি শিক্ষা প্রদান প্রভৃতি কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া সঠিকভাবে তথ্য অনুসন্ধান, অনলাইন নিরাপত্তা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ডিজিটাল জীবনাচার, ডিজিটাল মাধ্যমে মানুষের কাঙ্ক্ষিত আচরণ, অনলাইন লেনদেন—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও মানুষকে সচেতন ও শিক্ষিত করা হবে। দেশের ৬৪০টি স্কুল ও কলেজে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চলমান থাকলেও সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টারের একটি স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করার।
সোশ্যাল মিডিয়াতে যারা ধারাবাহিকভাবে ভালো কনটেন্ট তৈরি করছেন, বিভিন্ন সেক্টরের ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে কাজ করছেন—তাদেরকে এই প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেও নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ ও উচ্চগতির ইন্টারনেটে দেশের প্রায় ১৩ কোটি মানুষের অ্যাকসেসেবিলিটি নিশ্চিত করা গেছে। এটাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে সরকার সচেতন। ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন সেই সচেতনতারই বাস্তব রূপ। আমরা এটাকে ডিজিটাল লিটারেসি আন্দোলন বলছি।’
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়