কৃষির ওপর নির্ভর করে এগিয়েছে বগুড়ার অর্থনীতি। ধান, আলু, মরিচ, কলা, সবজির পাশাপাশি জেলায় পাটের আবাদও হচ্ছে। তবে উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে দাম কম থাকায় প্রতি বছরই অর্থকরী এ ফসলটির আবাদ কমেছে। চলতি মৌসুমে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি বিভাগ। তবে চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। আগের বছরগুলোতেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। অবশ্য এ বছর পাটের দাম মণপ্রতি ২০ শতাংশ বেড়েছে। দাম বাড়ার এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে পাট চাষ বাড়বে বলে মনে করেন কৃষিসংশ্লিষ্টরা।
পাট চাষ কমার জন্য বাজার সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন কৃষক। তাদের মতে, ছাত্র-জনতা আন্দোলনের আগে বাজারে সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল। তখন প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২০০-২ হাজার ৪০০ টাকা। ২০২৩ সালে পাটের দাম ছিল ২০০০-২ হাজার ১০০ টাকা। ২০২২ সালে ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ। ৫ আগস্টের পর পাটের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ। চলতি মৌসুমে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০-৩০০০ টাকা।
বগুড়া কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমি। তবে চাষ হয়েছিল ১১ হাজার ১৬৭ হেক্টর জমি। এ থেকে উৎপাদন হয়েছিল ৩০ হাজার ৬৭৬ টন। দাম কম থাকায় পরের বছর চাষের জমিও কমে যায়। ২০২২ সালে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৬৩৪ হেক্টর জমি। আর চাষ হয়েছিল ১০ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমি। ২০২৩ সালে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছিল ১০ হাজার হেক্টর জমি। চলতি মৌসুমে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৪ বেল। তবে চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফলিদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে পাটের দাম কিছুটা বেড়েছে। এজন্য পাট চাষে আগ্রহও বেড়েছে চাষীদের। এরই মধ্যে দেয়া হয়েছে সরকারি প্রণোদনা। এতে করে উৎপাদন খরচও বেশ কমেছে। তবে সাম্প্রতিক বন্যায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় পাটখেত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তুলতে পারেননি কৃষক। প্রতি বিঘায় পাট চাষে সর্বোচ্চ ৮-১০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর উৎপাদন হয় ৮-১০ মণ। আবহাওয়া অনুকূল ও বাজার দর ঠিক থাকলে আগামীতে অর্থকরী এ ফসলটির উৎপাদন বাড়বে।’
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ধান, পাট, আলু, মরিচ, কলা, সবজি এ জেলার অর্থকরী ফসল। প্রতি বছর জেলায় মরিচ, ধান, আলু ও সবজি কেনাবেচা হয় হাজার কোটি টাকা। আগের বছরগুলোয় পাটের প্রত্যাশিত দাম না পেলেও এবার কিছুটা বেড়েছে। ছাত্র-জনতা আন্দোলনের কারণে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে গেছে। এজন্য পাটের প্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন তারা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে পাট চাষের জমি বাড়বে বলে মনে করেন কৃষক।
সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া চরের পাটচাষী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এবার সাত বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। দুই বিঘা জমির পাট জুলাইয়ের বন্যায় নষ্ট হয়েছে। বাকি পাঁচ বিঘা জমিতে পাটের ফলন ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি জমি থেকে গড়ে আট মণ করে পাট পেয়েছি। কিছু পাট শুকিয়ে বিক্রিও করেছি। প্রথম দিকে পাট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২০০-২ হাজার ৩০০ টাকা মণ। পরে ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর পাটের দাম আরো বেড়েছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০-৩০০০ টাকা মণ। পাট ভালো শুকানো হলে হাটে পাইকাররা আরো দাম বেশি দিচ্ছেন।’
এদিকে জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ পথে এখন পাটচাষীদের ব্যস্ততা। কেউ পাটের আঁশ ছাড়িয়ে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছেন। গৃহবধূরা ছড়ানো পাটের আঁশ নিয়ে সড়কের পাশে শুকিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ পাটের আঁশ ছাড়ানোর পর পাটকাঠিও শুকিয়ে বাজারে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোথাও কোথাও আবার নতুন পাট কেনাবেচা শুরু হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের ইন্দুরমারা চরের পাটচাষী আব্দুর রহমান বলেন, ‘হাটের দিনে কৃষক খুব ভোরে পাট বিক্রি করতে আসেন। সকাল ৯টার মধ্যে পাট বেচাকেনা শেষ হয়ে যায়। প্রতি মণ পাট সর্বনিম্ন ২ হাজার ৮০০-৩০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালোমানের শুকনো পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ। এ বছর দাম কিছুটা বেড়েছে। এভাবে দাম পাওয়া গেলে কৃষক আবারো বিগত দিনের মতো পাট চাষে আগ্রহী হবেন।’
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়